ঘুমের মধ্যেই মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন সোনারপুর থানার রাজপুর এলাকার বাসিন্দা অনির্বাণ দাস। কোনও রকমে চোখ মেলে দেখেন, তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জনা সাতেক যুবক। এক জন হিন্দিতে আলমারির চাবি চাইছে তাঁর কাছে।
মাঝবয়সী অনির্বাণবাবুর কপাল ফেটে তখন রক্ত ঝরছে। কপালে হাত চেপে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। এ বার দুষ্কৃতীরা লোহার রড দিয়ে মারে তাঁকে। তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলা হয় বিছানার চাদর দিয়ে।
বুধবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ এমনই আতঙ্কের মধ্যে ঘুম ভেঙেছিল অনির্বাণবাবু ও তাঁর পরিবারের। পুলিশ জানিয়েছে, জনা সাতেক দুষ্কৃতী রান্নাঘরের জানলা দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। রাত সাড়ে তিনটে থেকে ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত তারা বাড়ির লোকেদের প্রবল মারধর করে। এর পরে টাকা-গয়না লুঠ করে চম্পট দেয়।
অনির্বাণবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে বেঁধে রেখে দুষ্কৃতীরা হানা দেয় পাশের ঘরে। সেখানে শুয়ে ছিলেন তাঁর বাবা অশোক দাস (৭৫)। বিছানা থেকে মাটিতে নামিয়ে তাঁর মাথায় ও মুখে লোহার রড দিয়ে একাধিক বার মারা হয়। ওখানেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন অশোকবাবু। এর পরে তাঁকে একতলা থেকে চ্যাংদোলা করে দোতলায় নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। অনির্বাণবাবুর স্ত্রী অন্তরা ও মা, ষাটোর্ধ্বা ভারতীদেবীও নিস্তার পাননি দুষ্কৃতীদের হাত থেকে। অনির্বাণবাবুর এগারো বছরের মেয়ে আহেলিকেও বেঁধে রাখা হয়। এর পরে একতলা ও দোতলার ঘরের আলমারি ভেঙে লুঠপাট করে দুষ্কৃতীরা। শেষে অর্নিবাণবাবুকে শৌচাগারে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে সদর দরজা খুলে পালায় তারা।
দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে চিৎকার করতে থাকেন অনির্বাণবাবু। তা শুনে আশপাশের বাসিন্দারা চলে আসেন। তাঁরাই অনির্বাণবাবুদের বাঁধন খোলেন। পুলিশ জানায়, অশোকবাবুকে প্রথমে সোনারপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। তাঁর একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিকেলে তাঁকে একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অনির্বাণবাবুর স্ত্রী অন্তরা ও মা ভারতীদেবীও নার্সিংহোমে ভর্তি। দু’জনেরই মাথায় ও কোমরে চোট রয়েছে। তবে তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান চিকিৎসকেরা। আহেলিকে অবশ্য মারধর করেনি দুষ্কৃতীরা। এক বার জল খেতে চাওয়ায় দুষ্কৃতীরা তাকে বোতল থেকে জলও খাওয়ায় বলে জানিয়েছে আহেলি।
পুলিশ জানায়, হাজার দশেক টাকা ও কিছু গয়না লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই পরিবার। অনির্বাণবাবু পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর নির্মাণ-ব্যবসাও রয়েছে। ব্যবসা সংক্রান্ত আক্রোশের জেরেই এই হামলা কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।” এ দিন সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশকর্তারা অনির্বাণবাবুর বাড়িতে যান। দুষ্কৃতীরা পরিবারের সবাইকে এত মারধর করল কেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন সকালে অনির্বাণবাবুর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সারা বাড়িতে রক্তের দাগ। সিড়িতেও ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। অশোকবাবুর ঘরে মেঝেতেও জমাট বেঁধে রয়েছে রক্ত। ঘটনার পরে পড়শিরাও আতঙ্কিত। এ দিকে, গত এক সপ্তাহে শহরতলি এলাকায় একের পর এক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত রবিবার কালিকাপুরে শক্তিবিজ্ঞানী শান্তিপদ গণচৌধুরীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। সোমবার দুপুরে বারুইপুর থানা এলাকায় রাস্তায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে চম্পট দেয় দুই মোটরসাইকেল আরোহী। একের পর এক ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। সোমবার রাতেই আবার সল্টলেকের বি ই ব্লকের এক বাসিন্দার বাড়িতে লুঠপাট করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনারও কিনারা হয়নি। |