কলকাতার রাস্তায় লুকিয়ে-চুরিয়ে যে গাঁজা বিক্রি হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা কিলোগ্রাম দরে, আদতে তার মূল্য ৫০০ টাকাও নয়। মঙ্গলবার ভোরে বারাসতের কাছে একটি লরির ভিতর থেকে গাঁজা উদ্ধার করে এমনই তথ্য এসে পৌঁছেছে নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) হাতে। গাঁজা উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছে মোট ছ’জন। যিনি চাষির কাছ থেকে গাঁজা কিনছেন, এই দলে যেমন তিনিও রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন কলকাতার বাজারে যিনি সেই গাঁজা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তিনিও। এনসিবি-র রিজিওনাল ডিরেক্টর সুব্রত বিশ্বাসের কথায়, “আন্তঃরাজ্য চক্র বলতে পারেন।”
আগে থেকে গাঁজা পাচারের খবর পেয়ে বারাসতের কাছে ওঁত পেতে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় এই সংস্থার অফিসারেরা। মঙ্গলবার ভোর হওয়ার আগেই মণিপুর থেকে একটি লরি এসে থামে বারাসতের কাছে যশোহর রোডে। নম্বর মিলে যায়। কিন্তু, তাতে হানা দিয়ে অফিসারেরা দেখেন লরি ফাঁকা! কোথায় গাঁজা! |
কিন্তু ভাল করে ঠাহর করতেই বেরিয়ে পড়ে অন্য চিত্র। চালকের কেবিনের পিছনে আরও একটি লুকনো ঘর! বাইরে থেকে দেখলে এক ঝটকায় মনে হবে লরি বুঝি ফাঁকা! সেই ঘরে থরে থরে ভর্তি প্যাকেট। সব মিলিয়ে ১২২৫ কিলোগ্রাম গাঁজা। চলতি দর অনুযায়ী প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মাল!
সুব্রতবাবু জানান, লরি চালক যশবীর সিংহ আদতে পঞ্জাবের লোক হলেও এখন সে থাকে গুয়াহাটিতে। লরিটির মালিকও সে-ই। সঙ্গে ছিল মণিপুরের খালাসি এলাং চৌবা। সুব্রতবাবুর কথায়, “বারাসতের কাছে যেখানে লরিটি এসে দাঁড়ায়, সেখানেই অন্য গাড়িতে আসার কথা ছিল এই গাঁজার আসল কারবারিদের। ফলে, আমাদের অফিসারেরা আবার অপেক্ষা করতে থাকেন।” কিছুক্ষণ পরেই একটি গাড়িতে করে আরও চার জন আসে সেখানে।
প্রথম জন ইবং ছা, মণিপুরের বাসিন্দা। প্রধানত মাছের ভেড়ির মালিক। কিন্তু, মণিপুরের উখরুল গ্রামে গাঁজার যে বেআইনি চাষ হয়, তার মূল ক্রেতা ইবং। এনসিবি জানায়, ইবংই চাষিদের টাকা-পয়সা দিয়ে চাষ করায় এবং ৫০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে সেই গাঁজা কিনে নেয়। দ্বিতীয় ব্যক্তি রাজকুমার রায়। আদতে রাঁচির বাসিন্দা হলেও এখন সে থাকে পটনা ও গুয়াহাটিতে। রাজকুমার এই গাঁজার ব্যবসার মূল লগ্নিকারী। সে-ই টাকা খাটায়। ইবং ৫০০ টাকা দিয়ে গাঁজা কিনে রাজকুমারকে বিক্রি করে ২০০০ টাকায়। রাজকুমারকে সে বলে, চাষিদের নাকি ১১০০ টাকা করে দিতে হয়। যা একেবারে মিথ্যা বলে জানান সুব্রতবাবু।
তৃতীয় ব্যক্তি গণেশ, রাজকুমারের কর্মচারী। রাজকুমারের হয়ে ইবং-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে সে। চতুর্থ মানিক দাসের বাড়ি কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে। সে ৩৫০০ টাকা দরে গাঁজা কেনে রাজকুমারের কাছ থেকে। মানিকের মারফতই ৪৫০০ টাকা দরে তা ছড়িয়ে পড়ে ছোট ছোট বিক্রেতাদের কাছে। সেই গাঁজাই বাজারে মেলে ৬০০০ টাকায়।
ধৃত এই ৬ জনকে বুধবার আদালতে তোলা হয়। তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুব্রতবাবুর কথায়, “মানিকের কাছ থেকে আমরা কয়েক জন স্থানীয় বিক্রেতার নামও পেয়েছি। সবই আমাদের পরিচিত নাম।” সাম্প্রতিক অতীতে এটাকেই সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন এনসিবি-র অফিসারেরা। |