চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এবং মারধর করে প্রকাশ্য রাস্তায় ৬ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার ভরদুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার করাতকল পাড়ায়। ভরদুপুরে এ রকম ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার মানুষের মধ্যে। দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তল্লাশি চালাচ্ছেন গোপালনগরের ওসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, গাইঘাটার সিআই বিশ্বজিৎ পাত্র এবং এসডিপিও (বনগাঁ) রূপান্তর সেনগুপ্ত। রূপান্তরবাবু বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালনগরের শ্রী দুর্গা ফাইবার প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি জুট মিল রয়েছে। ওই জুট মিলের দুই কর্মী হারু শিকদার এবং ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য বুধবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মোটরবাইকে করে মিলের দিকে আসছিলেন। বনগাঁ-চাকদহ সড়ক ধরে তাদের মোটরবাইকটি যখন করাতকল পাড়ায় মিলের কাছাকাছি পৌঁছয়, সেই সময় কয়েক জন যুবক চালক হারুবাবুর মুখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়। মোটরবাইক নিয়ে পড়ে যান হারুবাবু। পড়ে যান পিছনে বসে থাকা ধনঞ্জয়বাবুও। হারুবাবুর কথায়, “বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার পরই দুষ্কৃতীরা আমায় মারধর শুরু করে। ধনঞ্জয় টাকা ভর্তি ব্যাগটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ঘিরে ধরে এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ব্যাগটি কেড়ে নেয়। ওরা ব্যাগটি নিয়ে শুভরত্নপুরের দিকে পালিয়ে যায়।” বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয় এক হোটেল মালিকও। কিন্তু দুষ্কৃতীরা তাঁকেও আগ্নেয়াস্ত্র দেখায় বলে জানিয়েছেন হোটেল মালিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুটি বাইকে এসেছিল মোট পাঁচ জন দুষ্কৃতী। তাদের মুখে কোনওরকম কাপড় ঢাকা দেওয়া ছিল না। তাদের দেখে এলাকার কেউ মনে হয়নি। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তারা এসে মিলের কাছে একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। হারুবাবুদের মোটরবাইকটি আসতেই তারা তাদের বাইক নিয়ে রাস্তার উপরে আসে এবং ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ওই সমস্ত এলাকা দিয়ে গরু পাচার হওয়ার কারণেই আনাগোনা বেড়েছে। ফলে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটছে এমন সব ঘটনা। ঘটনার পরেই ওই জুট মিলে যান বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি মনোযোগ দিয়ে হারুবাবু ও ধনঞ্জয়বাবুর কাছ থেকে বিষয়টি শোনেন। দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জেলা পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “গোপালনগরে এমন ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। পুলিশকে বলেছি, দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করুন।”
মিল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত প্রতি মাসের ৪ এবং ১৯ তারিখ মিলের শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়। এ দিন একটি বিল্ডার্সের দোকান থেকে ওই বেতনের টাকাই নিয়ে আসছিলেন মিলের দুই কর্মী।
মিল মালিক রবিশঙ্কর ঘোষ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মিল চলছে। অতীতে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকদের বলেছিলাম একসঙ্গে বেশি টাকা না আনতে। পুলিশকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। এখন দেখা যাক কি হয়।” |