রাজ্য সরকার আইনি পদক্ষেপ করলেও এ বছর উৎসবের মরসুমে শব্দবাজির অত্যাচার থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না বলেই আশঙ্কা করছেন পুলিশ ও পরিবেশকর্মীরা। কারণ, জাতীয় পরিবেশ আদালত এ রাজ্যেও বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল করার নির্দেশ দেওয়ার পর ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ শব্দবাজি তৈরির পাশাপাশি কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তা পৌঁছেও গিয়েছে। এই অবস্থায় সর্বোচ্চ আদালত যদি রাজ্যের অনুকূলে রায় দেয়-ও, তবু ওই বিপুল পরিমাণ বাজি কী ভাবে বাজেয়াপ্ত করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ পুলিশই।
১৯৯৭ সাল থেকে এ রাজ্যে বাজির শব্দসীমা ছিল ৯০ ডেসিবেল। গত ২২ অগস্ট পরিবেশ আদালত সেই শব্দসীমা এ রাজ্যেও ১২৫ ডেসিবেল করার নির্দেশ দেয়। প্রথম দিকে এ নিয়ে নড়ে বসেনি সরকার। তখনই উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ জানায়, রাজ্য দ্রুত সক্রিয় না হলে উৎসবের মরসুমে শব্দদৈত্যের অত্যাচার ভয়াবহ আকার নেবে। দিন কয়েক আগে ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ ও পরিবেশ কর্মীরা এ নিয়ে পথে নামার পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও সিদ্ধান্ত নেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে নড়ে বসে রাজ্য। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার জানান, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন। যদিও গত সপ্তাহে পরিবেশ দফতরের এক জরুরি বৈঠকে ঠিক হয়, সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার আগে আরও এক বার জাতীয় পরিবেশ আদালতে আবেদন করা হবে। আজ, সোমবারই সে কাজ করবে রাজ্য। পরিবেশকর্মীরা অবশ্য এ মাসের শেষে ওই রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করছেন।
কিন্তু আশঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে। সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি সূত্রের খবর, পরিবেশ আদালতের রায়ের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শব্দবাজি সরবরাহের কাজ শুরু হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান বাবলা রায় রবিবার জানান, চকোলেট বোমা, একদোমা, দোদোমা-সহ প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার শব্দবাজি ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে গোটা রাজ্যে পৌঁছেছে।
রাজ্যের শব্দবাজি তৈরির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চম্পাহাটি, নুঙ্গি, হারাল, চিংড়িপোতা, মহেশতলা, বজবজের মতো জায়গা। অন্যান্য বার পর্ষদ ও পুলিশ সেখানে যৌথ অভিযান শুরু করে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে। কিন্তু সেই অভিযান এ বার হয়নি। রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “আমরা জানি, এ বার দেদার শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ আদালতের রায়ের পর আমাদের হাত-পা বাঁধা।”
আর এ জন্য পরিবেশকর্মীরা দায় চাপাচ্ছেন পর্ষদের উপরেই। তাঁদের বক্তব্য, গত ৩০ অগস্ট পর্ষদের চেয়ারম্যান সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়েই তাঁরা মেনে চলবেন। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠন, ‘সবুজ মঞ্চের’ নব দত্তর কথায়, “পর্ষদের চেয়ারম্যান মুখে বললেও জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে বাজির শব্দসীমা নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করলেন না। আবার ১৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানালেন। এখন আবার তাঁরা জাতীয় পরিবেশ আদালতেই যাচ্ছেন।”
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ এ বছর এখনও নিষিদ্ধ বাজির তালিকা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেনি। অন্যান্য বার পুজোর মাস খানেক আগেই এই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। গত সপ্তাহে কলকাতা পুলিশ শব্দদূষণ রোধে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তা কেবল মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। লালবাজারের এক শীর্ষ অফিসার বলেন, “রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতেই আমরা নিষিদ্ধ বাজির তালিকা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করি। কিন্তু জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের পর পর্ষদ এখনও নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। আবার জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে। কীসের ভিত্তিতে আমরা নিষিদ্ধ বাজি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব?”
নানা স্তরে বিরোধিতা চললেও শব্দবাজি প্রস্তুতকারক এবং ব্যবসায়ীরা সহজে হাল ছাড়তে নারাজ।
গত শুক্রবারই সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি একটি মিছিলও করে কলকাতায়।
|