অতিথিদের হাতে ফুল ফোটার অপেক্ষায় স্মৃতিবন
বাগানের পুব কোণে একটা বাওবাব, তার পাশেই না হয় একটা সোনালি ওক। খানিক তফাতে, থাক না একটা সাবেক অশ্বত্থ।
সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মধ্য উওরোপ। কিংবা পড়শি বাংলাদেশ।
বাগানটা এ ভাবেই, কাছে-দূরের গাছগাছালিতে সাজিয়ে তুলতে চাইছিলেন বন কর্তারা।
ভাবনাটা বেশ মনে ধরে গিয়েছিল সদ্য রাজ্য-ভার নেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর। বনকর্তাদের পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিশ্বের নানা প্রান্তের গাছগাছালি লাগানো যেতে পারে, তবে সেই সব ওক-বাওবাব-ম্যাপল নিজের হাতে বাগানের নানান কোণে লাগিয়ে দেবেন শহরে আসা ওই সব দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তাঁদের স্মৃতি ঘিরেই বেড়ে উঠবে সেই সব গাছ। গাছগাছালির নামকরণও করা হবে সেই সব বিদগ্ধ জনের নামেই।
নিজেই সেই বাগানের একটা নামও ঠিক করে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘স্মৃতিবন’।
যেমন ভাবা তেমনই কাজ। নিউটাউনের ‘বি’ ব্লকে মুখ্যমন্ত্রীর সেই সাধের বাগিচা, অন্তত প্রথম পর্বের সাজগোজ সেরে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী শীতেই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে স্মৃতিবনের দরজা খুলে যাচ্ছে।
নিউ টাউনের বি ব্লকে গড়ে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের স্মৃতিবন। ছবি: শৌভিক দে।
শীতের সেই বাগান অবশ্য নিমেষে ভরে উঠবে ভিন-দেশি গাছে, এমনটা নয়। তবে শহরে কে কবে পা রাখছেন, বনকর্তারা এখন থেকেই তাঁর খোঁজ শুরু করেছেন। সেই সব দেশের গাছও কী করে জোগাড় করা যায়, শুরু হয়েছে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তাও।
তবে, তার আগে দিশি গাছের চেনা চারায় ইতিমধ্যেই স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে সেই বাগান। প্রায় ৩২ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেই বাগানের বুকে প্রশস্ত এক ঝিল। আর তাকে ঘিরে বকুল, জারুল, কাঠচাঁপা জাতীয় মাঝারি উচ্চতার ঝুঁপো গাছের ভিড়। রয়েছে থাইসাস, ভেরিগোটা, প্যাপেডিয়া কিংবা চিনে বাঁশ, শ্বেত জবা, কাঠ গোলাপের অজস্র ঝাড়। ঝিলের জলে মাছ, বাগানের বাঁকা পথে ঈষৎ জিরিয়ে নেওয়ার জন্য খড়ের ছাউনি কিংবা ছোট টিলার উপরে বাহারি বুনো ফুল, আপাতত এই সাজটুকু শেষ। বিদেশি অতিথিদের গাছ লাগানোর জন্য বাগানের আনাচে কানাচে জায়গা বেছে রাখার কাজও শেষ। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গাছ লাগানোর জন্য বিশেষ ভাবে জমি তৈরি করা হচ্ছে।
বন দফতরের ‘পার্কস অ্যান্ড গার্ডেন’ শাখার বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “ইচ্ছে আছে ঝিলের উপরে একটি সাঁকো, বনের প্রান্তে, পরিবেশের সঙ্গে মানানসই একটা বিশ্রামগারও গড়ে তোলার।” তবে সে সবের জন্য বরাদ্দ এখনও আসেনি। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্বের ৪০ লক্ষ টাকাতেই সাজানো হয়েছে স্মৃতিবন। অর্থ বরাদ্দ হলে পরের পর্বের কাজে হাত পড়বে।
স্মৃতিবনের জন্য নিউটাউন উপনগরীর ‘বি’ ব্লকে জমি দিয়েছে নিউটাউন-কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। লোহার বেড়া দিয়ে বাগানটি ঘিরেও দিয়েছে তারা। তৈরি করে দিচ্ছে দু’টি সুন্দর দেখতে প্রবেশ দ্বারও।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার উপকণ্ঠে এই অভিনব বাগান গড়ে তোলার পরিকল্পনাটি ২০১১ সালের। বন বিভাগের তৎকালীন হেড অফ ফরেস্ট অতনু রাহা প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। শোনামাত্র আগ্রহী হয়েছিলেন তিনি। অতনুবাবু বলেন, “নিউটাউনে ইকো-পার্ক গড়ার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গাছ লাগিয়ে একটা মিনি-বটানিক্যাল গার্ডেন গড়ার কথা ভাবা হয়েছিল। শুনেই খুবই উৎসাহিত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উদ্যোগেই এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ জমি বরাদ্দ করে। শুরু হয় কাজ।”
কিন্তু শুরু হয়েও এক সময়ে বরাদ্দের অভাবে থমকে গিয়েছিল স্মৃতিবনের প্রসার। সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। শেষ পর্যন্ত গত বছরের অগস্ট থেকে আট মাসের অবিরাম চেষ্টায় সেই বাগানের প্রথম পর্বের সাজগোজ সম্পূর্ণ।
বিদেশি অতিথিদের হাতে এখন ফুল ফুটলেই হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.