নতুন খরচের খাতা সরকার খুলতেই পারে। কিন্তু তার জন্য যে আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলা দরকার, তা বহু ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না বলে চিঠি লিখে সরকারকে আগেই জানিয়েছিলেন রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (পিএজি)। নিয়ম অনুযায়ী, খরচের নতুন খাতা (হেড অফ অ্যাকাউন্ট) খোলার জন্য এজি-র অনুমতি নিতে হয়। পিএজি-র ওই চিঠির পরেও সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরাতে রাজ্য সরকার যে নতুন তহবিল তৈরি করেছে, সেখানেও কিন্তু এজি-র অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ।
সারদা-কাণ্ডের পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে, ক্ষতিগ্রস্তদের আমানত ফেরানোর ব্যবস্থা করতে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করবে সরকার। তিনি জানিয়েছিলেন, ওই তহবিলের ১৫০ কোটি টাকা আসবে তামাকজাত দ্রব্যের উপরে বসানো কর থেকে। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে, তা অবশ্য তখন স্পষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী। সেই তহবিল ভরাতেই স্বরাষ্ট্র দফতর তার পরিকল্পনা বহির্ভূত খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা শ্যামল সেন কমিশনের অ্যাকাউন্টে জমা দেবে। শুক্রবারই এর অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে অর্থ দফতর। সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার কথা।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যে হেতু ওই কমিশন মারফত টাকা বিলি হবে, তাই ওদের অ্যাকাউন্টেই আপাতত ৫০ কোটি টাকা জমা দিতে বলেছে অর্থ দফতর।”
আর এখানেই বিতর্ক বেধেছে প্রশাসনের অন্দরমহলে। এক দল বলছেন, যে সংস্থায় লগ্নি করে বহু মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন, সেই সংস্থার সম্পত্তি নিলাম করেই ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা মেটানো উচিত। সরকার কেন এই দায় নেবে? ওই অফিসারদের বক্তব্য, পরিকল্পনা কিংবা পরিকল্পনা বহির্ভূত যে খাতই হোক না কেন, সরকারি কোষাগারের টাকা আসলে আম-জনতার করের টাকা। সেই টাকায় উন্নয়নই হওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে বেসরকারি সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের দেওয়ার জন্য সেই করের টাকার ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। আর এক দলের অবশ্য বক্তব্য, সরকার সব সময় জনস্বার্থে কাজ করে। সেই কারণেই সারদায় আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে সরকার।
রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, যে ভাবে স্বরাষ্ট্র দফতরের পরিকল্পনা বহির্ভূত খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা প্রথম দফায় কমিশনের তহবিলে জমা করা হল, সে ভাবেই খেপে খেপে বিভিন্ন দফতরের টাকা নিয়ে ‘সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল প্রকল্প ২০১৩’ চালানো হবে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র দফতরেরই পরিকল্পনা বহির্ভূত খাত থেকে এক কোটি টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করা নিয়ে অর্থ দফতরকে সতর্ক করেছিল পিএজি। তাদের বক্তব্য, ভারতীয় সংবিধানের ১৫০ ধারা মোতাবেক নতুন খরচের খাতা খোলার আগে এজি-র অনুমোদন দেওয়া আবশ্যিক। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই সরকার তা মানছে না।
মহাকরণ সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের খরচের হিসাব মেলাতে গিয়ে ১১টি নতুন খাতার সন্ধান পায় পিএজি, যেগুলি হিসাব পরীক্ষক সংস্থার পরামর্শ বা অনুমোদন ছাড়াই খোলা হয়েছে। এবং সেখান থেকে ১৭৮ কোটি ১৯ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা সরকার খরচ করেছে বলে অর্থ দফতরকে জানিয়েছে পিএজি। সেই ধারা বজায় রেখেই ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে আরও বেশি, এখনও পর্যন্ত মোট ৯১টি নতুন খাতা খুলেছে সরকার। রাজ্যের এই কাজে যে তারা মোটেই খুশি নয়, অর্থ দফতরের কর্তাদের ডেকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে এজি। |