আগের দিন বিকেলের উচ্ছ্বসিত মুখগুলো চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বিবর্ণ। করুণ। হতাশায় মোড়া।
শুরুতে ব্যান্ড, তাসা বাজানোর সুযোগ এলেও তা থেমে গিয়েছিল প্রথমার্ধের মাঝামাঝিই। আর বাজানোর সুযোগই হয়নি।
কিন্তু যে বাজিগুলো পকেটে নিয়ে এসেছিলেন যুবভারতীতে পোড়াবেন বলে, সেগুলো মনে হল বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছিলেন না সাদা-কালো সমর্থকরা। টোলগে, গগনদীপরা যখন মাথা নিচু করে ফিরছেন, তখনও শোনা গেল নাগাড়ে বাজির শব্দ! কিন্তু হারের পরও কেন মহমেডান সমর্থকদের এই উলট পুরাণ?
জোসিমার-পেন-স্যামসনদের সম্বিত ফেরাতে? না কি, পরের আই লিগ ম্যাচে উদ্বুদ্ধ করার জন্য? জনা পনেরো মহমেডান সমর্থকের উপর সার্ভে করে জানা গেল, দ্বিতীয়টাই ঠিক। কোনও গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ বিশ্রী হারার পর ইস্ট-মোহনে এই দৃশ্য অসম্ভব। তা হলে মহমেডান সমর্থকরা আগের মতোই আছেন! ক্লাবের মতো তারাও যে বদলাননি।
ইতিহাস ছোঁয়ার পর ফের বাস্তবের জমিতে আব্দুল আজিজের দল। আকাশ থেকে মাটিতে। ডুরান্ড জয়ের পর আই লিগে এসে আবার সেই পুরনো ছবি। |
পুণে এফ সি-র ডাচ কোচ মাইকেল স্নোয়ি একসময় খেলেছেন মার্কো ফান বাস্তেনের সঙ্গে। ভারতে আসার আগে কোচিং করিয়েছেন নানা দেশে।
একশোজন বিদেশি ফুটবলারের বায়োডেটা কোচ ও ভিডিও অ্যানালিস্ট দিয়ে পরীক্ষা করার পর পুণে কর্তারা বেছে নিয়েছেন স্পেনের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলা রাউল ইভান ফাভিয়ানি নামে একজন এমন স্ট্রাইকারকে, যাঁকে দেখে মনে পড়বেই ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’। ছয় ফুট চার ইঞ্চির কোনও বিদেশি স্ট্রাইকার কখনও খেলেননি ভারতীয় ফুটবলে। ফোরলান, রিকেলমে-র পুরনো ক্লাব ভিয়ারিয়ালে যাঁর ফুটবল-শেখা।
কোচ মাইকেল স্নোয়ি-র ফুটবল মস্তিস্ক আর ফাভিয়ানি-র বিপক্ষের গোলের কাছে শিকারি চিতার মতো ওত পেতে থাকাএই দুই অস্ত্রেই শনিবার বধ হয়ে গেল মহমেডান। পুণে যে তিনটি গোল করল সবক’টির পিছনেই ফান পার্সির ক্লাবে খেলে আসা ফাভিয়ানির অবদান। নিজে দু’টি গোল করলেন, একটি করালেন সতীর্থ অস্ট্রেলীয় জেমস মেয়ারকে দিয়ে। উচ্চতা আর লম্বা লম্বা স্ট্রাইড দিয়ে বিপক্ষকে বধ করার পর জার্সি খুলে উচ্ছ্বাস দেখাতে গিয়ে লাল কার্ডও দেখতে হল তাঁকে। ম্যাচ শেষ হওয়ার কুড়ি মিনিট আগে।
মহমেডান কোচ টিম নামিয়েছিলেন ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে। পুণে কোচের পাল্টা স্ট্র্যাটেজি ছিল ৪-৫-১। মাঝমাঠের আনুপাতিক হিসাবে তাই শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল গতবারের রানার্সরা। আর তার ফয়দা তুলে নিয়ে গেল পুণে। টোলগেদের কোচ সেটা বুঝতেই পারলেন না। নিজেদের মাঝমাঠ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে দেখেও আজিজের অঙ্ক বদলায়নি। জোসিমারের গোলে এগিয়ে গিয়েও তাই হারতে হল মহমেডানকে। খেলার পর মহমেডান কোচকে বলতে শোনা গেল, “ক্লান্তি নয়, গোলের সুযোগ নষ্ট করেই জেতা ম্যাচ হারলাম।”
কিন্তু পুরো মহমেডান টিমটাই তো প্রথম পনেরো মিনিট বাদে বাকি সময় ছিল ছন্নছাড়া। একটা বড় টুর্নামেন্টে পাঁচটি ম্যাচ খেলে আসার পর ক্লান্তি ফ্যাক্টর, সন্দেহ নেই। কিন্তু তা বলে এত মিস পাস? সেট পিসে ব্যর্থতা? সহজ গোলের সুযোগও নষ্ট হবে কেন? ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় অন্তত দু’টো নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন জোসিমার ও অজয় সিংহ। কিন্তু গোল করতে পারেননি কেউই। সবথেকে খারাপ অবস্থা দলের দুই কোটির দুই ফুটবলার টোলগে ওজবে আর পেন ওরজির। দু’জনেই চূড়ান্ত শ্লথ। পেনের নয় চোট, টোলগের এই হাল কেন?
পুণে যে দারুণ খেলেছে তা নয়। তারাও পুরোপুরি তৈরি নয় এখনও। নয় ম্যাচ-ফিটও। গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েই ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন ফাবিয়ানিরা। আর ফুটবলে তো গোল যাঁর ম্যাচ তারই।
মহমেডান: সোমনাথ, কলিন, সন্দীপ, জাস্টিন, ধনরাজন, গগনদীপ, পেন (পাইতে), অজয় (ইজরায়েল), স্যামসন, টোলগে, জোসিমার।
|