আই লিগের উদ্বোধনী ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেই সেলিব্রেশনে মাতোয়ারা আব্দুল আজিজ মাসুদের মহমেডান স্পোর্টিং। শুক্রবারের সকাল থেকে সন্ধে, বিমানবন্দর থেকে ক্লাব তাঁবু সর্বত্রই সাদা-কালো সমর্থকদের উৎসব সদ্য ডুরান্ড জয়ের আনন্দে। এ দিকে, শনিবারই দীর্ঘ চার বছর পর আই লিগ অভিযান শুরু করছে পেন-টোলগেদের মহমেডান। প্রতিপক্ষ গত বারের রানার্স পুণে এফসি। কিন্তু আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর উদ্ভট ক্রীড়াসূচির জাঁতাকলে পড়ে অনুশীলনটাই যে হল না সাদা-কালো শিবিরের।
দীর্ঘ সাত দশক পরে ডুরান্ড জিতে শুক্রবার সকালে দমদম বিমানবন্দরে পা দিয়ে মহমেডান কোচ আজিজ অবশ্য বলে গেলেন, “ছেলেরা তৈরি আছে। এক দিন অনুশীলন হয়নি তো কী হয়েছে! ওরা তো জানতই, ডুরান্ড জিতলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খেলতে হবে আই লিগ।”
দীর্ঘ ২৬ বছর পর (১৯৮৭ সালে রোভার্স কাপ জয়ের পর) সর্বভারতীয় ট্রফি ঢোকা উপলক্ষে ক্লাব প্রেসিডেন্ট সুলতান আমেদ বিকেলে পতাকা উত্তোলনের পর যখন বলছেন, “ডুরান্ড জিতে আত্মবিশ্বাসে গা ভাসালে হবে না।” ঠিক তখনই ধেয়ে এল প্রশ্নটা। কনুইয়ে অস্ত্রোপচার হওয়া লুসিয়ানোর পরিবর্ত কে? শুনেই হাসি উধাও ফিনল্যান্ডে কোচিং করানো আজিজের। রেড রোডের ধারে তাঁবুর বাইরে তখন কয়েকশো সমর্থক বাজনার তালে নাচছে। বাতানুকুল তাঁবুর ভিতর মহমেডান কোচের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সাদা-কালো শিবিরের সর্বদা সরব কোচ ম্রিয়মান ভাবেই বললেন, “লুসিয়ানো দলের স্তম্ভ। ওর অভাবটা ভোগাবে। স্টপারে সন্দীপের পাশে কে খেলবে তা এখনও ঠিক করিনি। পেনেরও গোড়ালিতে চোট। ওকে নামাব কি না তাও ভাবছি। টোলগের নামা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে ড্র নয়। জিততেই নামব।” |
চ্যাম্পিয়নদের ঘরে ফেরা:
কলকাতা বিমানবন্দরে নায়ক
টোলগেকে নিয়ে সমর্থকদের বীরপুজো। ছবি: উৎপল সরকার। |
বিপক্ষ পুণে এফসিকে সম্পর্কে ইন্টারনেট ঘেঁটে কিছু তথ্য পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে জানিয়েছেন দলের ফুটবলাররাও। তবে আজিজের সুবিধা এটাই যে টোলগে-জোসিমারের মতো ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিদেশিরা জানেন আই লিগের সাপ-লুডোর ধরন। সেখানে ডেরেক পেরিরার জায়গায় পুণে এফসি-র ডাচ কোচ মাইক স্নোয়েই দায়িত্ব নিয়েছেন এই মরসুমেই। তাঁর দলে চার বিদেশির মধ্যে আইভরি কোস্টের ডুহু পিয়ের ছাড়া বাকি তিন জনই নতুন আই লিগে। ওয়েন রুনির দেশের ক্লাব পোর্টসমাউথের যুব দলে খেলা স্টপার ক্যালাম অ্যাঙ্গাস কিংবা হার্থা বার্লিনে খেলে আসা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার জেমস মেয়ার বা স্পেনের ভিয়ারিয়ালের ‘বি’ দলের স্ট্রাইকার রাউল ফাবিয়ানি জীবনপঞ্জীতেই বড়সড়। ভারতে কতটা সফল হবেন তা সময় জানাবে। আর মডমেডান গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে দামি দল গড়ে আত্মবিশ্বাসী ট্রফি জয়ের ব্যাপারে। পুণে কোচ সেই ফ্যাক্টর মাথায় রেখেই বলছেন, “মহমেডান সদ্য ডুরান্ড জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। ঘরের মাঠে এগিয়ে ওরাই। দলে তরুণ প্রতিভাই বেশি। তবে ওরা লড়াই ছাড়বে না।” গত বারের দল থেকে মোগা, অভ্র, বইমা, জেজে, কর্মা সেওয়াং-সহ এক ডজন ফুটবলার দল ছাড়ায় পুণে এফসি এ বার তারুণ্য-নির্ভর দল গড়েছে। যে দলের মেরুদণ্ড অ্যান্টনি ডি’সুজা, প্রকাশ থোরাটরা।
শনিবার যুবভারতীতে তারুণ্যকে কি টেক্কা দিতে পারবে অভিজ্ঞতা? মহমেডান কোচ বলছেন, “তুমি যদি ফার্গুসনও হয়ে থাকো, আমি তা হলে আজিজ। ধৈর্য রাখুন। ফল মিলবেই।” কোচের যদি এই আত্মবিশ্বাস হয় তা হলে ফুটবলাররাও তো ফুটবেন। শহরে পা দিয়ে টোলগে যেমন বলছেন, “অনেক জবাব দেওয়ার আছে। মরসুমের শুরু থেকেই তো তাকিয়ে আছি এই আই লিগের দিকেই।”
|
শনিবার আই লিগ
• মহমেডান-পুণে এফসি (যুবভারতী, ৩-০০),
• মুম্বই এফসি-স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া (পুণে, ৪-০০),
• চার্চিল ব্রাদার্স-সালগাওকর (মাপুসা, ৪-০০)। |