ক্ষমা চেয়ে শাস্তিদণ্ড কমানোর শেষ সুযোগ ছিল। সুযোগ ছিল, অম্বর রায় টুর্নামেন্টে (অনূর্ধ্ব ১৪) বয়স ভাঁড়ানোয় অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের উপস্থিত করে কিছু হলেও নিজেদের বাঁচানোর। কিন্তু ময়দানের দুই ক্রিকেট কোচিং সেন্টার শুক্রবার সিএবি বৈঠকে অভিযুক্তদের অনুপস্থিত রেখে এক দিকে যেমন সিএবি-র অপমান করল, ঠিক তেমনই নিজেদের কঠিন নির্বাসনের বন্দোবস্তও করে ফেলল!
এরা ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি এবং পিজি ঘোষাল ক্রিকেট কোচিং সেন্টার।
প্রথম কোচিং সেন্টারে অভিযুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা পাঁচ-ছয়। দ্বিতীয় সেন্টারের, এক। দিন কয়েক আগের বৈঠকে যে সমস্ত দোষী ক্রিকেটার, কোচিং সেন্টার আসেনি, শুক্রবার তাদের সামনে শেষ সুযোগ ছিল নিজ বক্তব্য পেশ করার। কিন্তু এই দুই কোচিং সেন্টারের কেউই আসেনি। সিএবি আর সুযোগ দিচ্ছে না। বরং উপরোক্ত দুই কোচিং সেন্টারের নির্বাসন দণ্ড শুনিয়ে দিচ্ছে।
কমপক্ষে তিন বছর। সর্বোচ্চ পাঁচ।
কর্তাদের সাফ বক্তব্য, উপরোক্ত দুই কোচিং সেন্টার এ দিন যা করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। সিএবি-কে যখন বুড়ো আঙুল দেখানো যাচ্ছে, তখন কড়া নির্বাসনটাও গিলতে হবে। বলা হচ্ছে, সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব এবং পিজি ঘোষাল কোচিং সেন্টারকে সিএবি-র কোনও টুর্নামেন্টে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অম্বর রায়, অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট কোথাও না। শোনানো হচ্ছে, দোষী ক্রিকেটার শাস্তি থেকে পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার কোচিং সেন্টার বাঁচবে কী করে?
মূলত, নির্বাসন-দণ্ডকে তিনটে ভাগে ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
• যে সব কোচিং সেন্টার একজন অভিযুক্তকেও হাজির করেনি, তাদের জন্য সর্বোচ্চ নির্বাসন। দরকারে পাঁচ বছরের।
• যে সব কোচিং সেন্টার অধিকাংশদের হাজির করেছে, তাদের শাস্তি তুলনামূলক কম। নির্বাসন হতে পারে বছর দু’য়েকের।
যারা সমস্ত অভিযুক্তদের হাজির করে দোষ স্বীকার করেছে, তাদের শাস্তি সবচেয়ে কম। নির্বাসনের বদলে বড়সড় আর্থিক জরিমানা।
• সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে রীতিমতো ফুঁসছেন, “যে সব কোচিং সেন্টার একজনকেও হাজির করল না, তারা পাঁচ বছরের নির্বাসনের জন্য প্রস্তুত হোক। আইনের পথে তারা গেলে সিএবি-ও সেটা সামলাতে জানে।” আর এই ধরপাকড়ের মূল উদ্যোক্তা সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই সব ঠিক করে ফেলব ক্রিকেট কমিটির সঙ্গে কথা বলে।”
এ দিন ক্রিকেট কমিটির বৈঠকে নানাবিধ নাটকও ছিল। যেমন একই ক্রিকেটারের দু’টো ‘অরিজিনাল’ বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়া গেল। দু’টোই জাল! একজন অভিভাবক আবার জানালেন, তাঁর ক্রিকেটার-পুত্র জন্মেছে বন্ধুর বাড়িতে। আশেপাশে নাকি হাসপাতাল ছিল না। অথচ ওই অঞ্চলে আছে চারটে সরকারি হাসপাতাল! এবং নিজ-অ্যাকাডেমির দুই অভিযুক্তের বিচারকালীন বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি ক্রিকেট কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
শুধু রোগের দাওয়াই আমদানি নয়। রোগ নির্মূল করার চেষ্টাতেও এ বার নামছে সিএবি।
কর্তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তিনটে জায়গা থেকে ক্রিকেটারদের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের পাঠানো হয়। জাল জন্মনথি সমেত। দেহরাদূন, পুরুলিয়া এবং আসানসোল। শেষ দু’টো জায়গা থেকে বিহার-জাত ক্রিকেটাররা ঢোকে। পরে পঞ্চায়েত থেকে সার্টিফিকেট তৈরি করে তাদের চালান করা হয় কোচিং সেন্টারে। আর দেহরাদূনে নাকি মোটামুটি ‘প্লেসমেন্ট এজেন্সি’ খুলে ফেলা হয়েছে! আরপি ঈশ্বরণ নামক এক ভদ্রলোকের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (ছেলের নামে) আছে দেহরাদূনে। সেখানে কলকাতার ক্লাবে বা নিদেনপক্ষে কোচিং সেন্টারে খেলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাকি ঢালাও ভর্তি চলে। পরে ঝাড়াই-বাছাই করে পাঠানো হয় বনগাঁর এজেন্টের কাছে। সেখান থেকে দরকারে জাল বার্থ সার্টিফিকেট সমতে তারা চলে আসে কলকাতার কোচিং সেন্টারে। একটু ভাল খেললে প্রথম ডিভিশন ক্লাবেও!
শুধু একটাই যা ট্র্যাজেডি। আরপি ঈশ্বরণের ছেলে গত চার-পাঁচ বছর জুনিয়র বাংলার নিয়মিত সদস্য। এবং অভিমন্যু ঈশ্বরণ ক্রিকেটটাও বেশ ভালই খেলেন!
|
দুর্নীতির প্লেসমেন্ট এজেন্সি
• দেহরাদূন
কলকাতার ক্লাব ও কোচিং সেন্টারে খেলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমে ভর্তি করানো হয় একটা
অ্যাকাডেমিতে। যেটা চালান আর পি ঈশ্বরণ নামের একজন। পরে ক্রিকেটারদের পাঠানো হয়
বনগাঁর
এক এজেন্টের কাছে। যেখান থেকে জাল সার্টিফিকেট সমেত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে চলে যায় ক্রিকেটাররা।
• পুরুলিয়া
ছেলেদের আমদানি হয় ঝাড়খণ্ড থেকে। পঞ্চায়েত থেকে বার্থ সার্টিফিকেট
তৈরি করে পাঠানো হয় কলকাতার কোচিং সেন্টারে।
• আসানসোল
এখানেও আমদানি হয় বিহার-জাত ক্রিকেটারদের। মূলত ধানবাদের। গন্তব্য, একই। কলকাতার কোচিং সেন্টার। |
|