মুম্বই পুলিশের ‘রাউন্ড ওয়ান’-এর পর নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে ‘রাউন্ড টু’-র
দায়িত্ব তাঁর হাতে। আজ, রবিবার দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে
‘ফাইনাল কাউন্টডাউন’-এর
প্রস্তুতি নেবেন বলে। তার আগে বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব ও
শ্রীনি-প্রতিদ্বন্দ্বী আদিত্য বর্মা ফোনে আনন্দবাজারকে যা বললেন... |
প্রশ্ন: এ বার একটু টেনশন কমল?
আদিত্য: কীসের টেনশন?
প্র: মানে, গত কয়েক দিনে শ্রীনিবাসন যে ভাবে বোর্ডে নিরঙ্কুশ আধিপত্য দেখিয়ে বোর্ড রাজনীতিতে ফিরে আসছিলেন, যে ভাবে শশাঙ্ক মনোহরের নির্বাচনে দাঁড়ানোর রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছিলেন, দেখে মনে হয়নি যে এত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না?
আদিত্য: শেষ রক্ষার কথা ভাবছিলাম আপনাকে কে বলল? আর কে নির্বাচনে দাঁড়াবে না দাঁড়াবে, সে সব নিয়ে তো ভাবিনি। আমি একটাই অ্যাজেন্ডা নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিলাম। শ্রীনিকে কোনও ভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে দেব না। এখনও সেই অ্যাজেন্ডাই আছে।
প্র: যুদ্ধটা শুরু হল বলতে চাইছেন?
আদিত্য: না। বলব, যুদ্ধটা এখন শেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। খেল আভি বাকি হ্যায়। আমার প্ল্যানটা খুব সহজ। আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে আইওপি (ইন্টারফেয়ারেন্স ইন দ্য প্রসেস অব জাস্টিস) আনছি। আশা করছি, বুধ-বৃহস্পতিবার নাগাদ মামলাটার শুনানি হবে। বলব, যে লোকটা গত ২ জুনের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ফুল হাউসের সামনে বলেছিল ওর জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে নিয়ে তদন্ত কমিশন যত দিন না কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছবে, তত দিন ও প্রেসিডেন্টের চেয়ার থেকে সরে থাকবে। তদন্ত কমিশনটাই বাতিল হয়ে গিয়েছে। ওর জামাই চার্জশিট খেয়েছে। আর শ্রীনি কী করছে? না লাফিয়ে-লাফিয়ে কখনও ডিসিপ্লিনারি কমিটি চেয়ার করছে। কখনও মার্কেটিং কমিটির বৈঠক চেয়ার করছে। আদালতে নিজের পেশ করা হলফনামা নিজেই ভেঙে!
আর আজ দিল্লি আদালত কী বলেছে তো শুনেছেন। আমিও সুপ্রিম কোর্টে বলব যে, বোর্ডের এই অন্তর্বর্তিকালীন ব্যবস্থাটাই বেআইনি। সচিব বেআইনি। তাদের ডাকা সব সভা বেআইনি। সেটা বিশেষ সাধারণ সভাই হোক বা বার্ষিক সভা।
প্র: তার মানে আপনি ২৯ সেপ্টেম্বরের বার্ষিক সভার উপর স্থগিতাদেশ চাইবেন?
আদিত্য: চাইতেই পারি। যদি দেখি শ্রীনি বৈঠক চেয়ার করতে যাচ্ছে, তা হলে অবশ্যই চাইব। আমার আইনজীবী হরিশ সালভে ফিরলে তিনিই ব্যাপারটা দেখবেন।
প্র: কিন্তু শ্রীনি তো এ দিনও বলেছেন, গুরুনাথের চার্জশিটের সঙ্গে তাঁর প্রেসিডেন্ট থাকা না থাকার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনিই বার্ষিক সভা চেয়ার করবেন।
আদিত্য: শুনেছি। এটা যে ও বলবে, লোককে দেখাতে চাইবে ওর সঙ্গে গুরুনাথের কোনও সম্পর্ক নেই, তার মধ্যে আশ্চর্যের কিছু নেই। লোকটা এ রকমই। যদি মানসম্মান থাকত, তা হলে গুরুনাথ যে দিন ধরা পড়ল, সে দিনই শ্রীনি ইস্তফা দিয়ে চলে যেত। লোকে বলত, জামাই যা-ই করুক, প্রেসিডেন্টের অন্তত একটা মান-মর্যাদা আছে।
দুঃখের ব্যাপার, ওর সেটা নেই। বরং শ্রীনি কাল বলতেই পারে যে, গুরুনাথ কোনও দিন আমার জামাই ছিলই না!
প্র: সেটা কখনও সম্ভব?
আদিত্য: যদি চেন্নাই সুপার কিংসের সিইও হওয়া সত্ত্বেও গুরুনাথকে বলা যায় ও কেউ নয় টিমের, তা হলে এটাও সম্ভব। আশ্চর্য লাগছে এটা দেখে যে, কেউ বলছেই না গুরুনাথ চার্জশিটে অভিযুক্ত হওয়ার পর সিএসকে-র চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার অধিকারই নেই। অথচ কোনও অ্যাসোসিয়েশনই দেখছি, কিছু বলছে না। আসলে সবাইকেই দেখতে হবে যে, শ্রীনিকে সমর্থন করলে কে কী পাবে! খারাপ লাগছে জগমোহন ডালমিয়াকে দেখেও। উনি সব দেখেও কিছু দেখছেন না। এমন দুঁদে প্রশাসকের কাছে যেটা আশা করা যায় না।
আর সবাই চুপচাপ তামাশা দেখার ফলে কী হচ্ছে? না, শ্রীনি যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে। অবশ্য কেন বলছে, সেটাও খুব পরিষ্কার।
প্র: কেন?
আদিত্য: বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ বলে একটা কথা আছে জানেন তো? শ্রীনির ওটাই হয়েছে। বুঝতে পারছে, বোর্ডটা ওর পৈতৃক সম্পত্তি নয়। টাকার জোরে আর ম্যাচ বেরোবে না। বড়জোর ভোট কেনা যাবে। অ্যাসোসিয়েশনদের হাত করা যাবে। এদের চুপ করে বসে থাকা নিয়ে আমি এখন কিছু বলব না। কিন্তু একটা কথা বলে দিতে চাই।
প্র: কী?
আদিত্য: আপনারা চুপচাপ বসে আছেন, থাকুন। কিন্তু ২৯ তারিখ শ্রীনির চেয়ার করা মিটিংয়ে যদি কোনও ভাবে ঢুকতে যান, কোর্টের নোটিশ আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থাও আমি করব। ভেবে দেখবেন, শ্রীনি-স্যর তখন আপনাদের বাঁচাবে তো?
|
শনিবারের শ্রীনি-লিপি |
দুপুর ১-০০: গুরুনাথ মইয়াপ্পনের বিরুদ্ধে মুম্বই পুলিশের চার্জশিট তখনও পড়েনি। তার আগেই শ্রীনিবাসনের হুঙ্কার, “আপনাদের পছন্দ না হতে পারে কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর বৈঠকে আমিই চেয়ার করছি। আর নির্বাচনটাও হয়তো জিতব।”
বিকেল ৪-১৫: চার্জশিট পেশ। প্রতারণা থেকে কার্যত ফিক্সিং, সব অভিযোগ উঠল গুরুনাথের বিরুদ্ধে।
বিকেল ৪-৩০: আবার মিডিয়া, আবার শ্রীনিবাসন। এ বার শ্রীনির পাল্টা প্রশ্ন, “চার্জশিট দেখিনি। আর প্রেসিডেন্ট পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছি, কে বলল?”
সন্ধে ৬-১৫: শ্রীনি-মসনদে দ্বিতীয় বোমা। ললিত মোদী ভাগ্য নির্ধারনের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ।
রাত ৮-০০: আইনজীবীদের বলাবলি শুরু, এ বার সুপ্রিম কোর্টেও প্রবল চাপে পড়বেন শ্রীনি। বোর্ডের প্রাক্তন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “চার্জশিট পেশ সুপ্রিম কোর্টে শ্রীনির বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত। প্রমাণ হয়ে গেল, তদন্ত কমিশনের রায় সম্পূর্ণ অর্থহীন।” |
|