‘মিশন গোর্খাল্যান্ড’ কর্মসূচি নিয়ে গোড়াতেই কার্যত পিছু হটল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
বৃহস্পতিবার মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ ‘ফতোয়া’ দিয়েছিলেন, শুক্রবার থেকে দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের স্কুলে-স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে প্রচার চালাতে হবে। কিন্তু এদিন কোনও স্কুলে বিদ্যার্থী মোর্চার প্রতিনিধিরা যাননি। তবে মোর্চার অন্দরের খবর, স্কুলে প্রচারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না তাঁরা। জনজীবন স্তব্ধ করে দীর্ঘ আন্দোলনের সময়ে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে মোর্চার প্রতি বিরূপ মনোভাব বেড়েছে। সন্তানদের পড়াশোনা শিকেয় তুলে আন্দোলনের কথা মেনে নেননি অনেক অভিভাবকই। মোর্চার শীর্ষ নেতারা সে কথা জানেন। তাই গুরুঙ্গের সভায় পড়ুয়াদের ভিড় হলেও মোর্চা চায় এই আন্দোলন নিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে।
তবে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে দাবি, গুরুঙ্গর নির্দেশ মেনেই বিদ্যার্থী মোর্চা ‘মিশন গোর্খাল্যান্ড’-এর কর্মসূচি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে। তাই পিছু হটার অভিযোগ ঠিক নয়। বিদ্যার্থী মোর্চার মুখপাত্র সন্দীপ ছেত্রী বলেন, “আমরা এদিন কোনও স্কুলে গিয়ে প্রচার করিনি। কিন্তু তা বলে আগামী দিনে করব না, সেটাও ভাবা ঠিক নয়।” তবে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা যে ভেবেচিন্তেই পা ফেলতে চান, তা-ও কবুল করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমরা আলোচনা শুরু করেছি। দলের সভাপতি যা বলেছেন, সেই মতো প্রচারে নামব। তবে আমাদের অনেক কিছু ভেবেই পদক্ষেপ করতে হবে। তাই বিশদে আলোচনার পরে যত শীঘ্রই সম্ভব স্কুলে স্কুলে গিয়ে প্রচার করব।”
মোর্চার অন্দরের খবর, গুরুঙ্গ ছাত্র সংগঠনকে ২০-২৫ জনের একাধিক দল বানিয়ে স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচারের নির্দেশ দেওয়ার পরে পাহাড়ের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। মোর্চার সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরাও নিজস্ব আলোচনায় ক্ষোভ উগড়ে দেন। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই টানা বন্ধে পাহাড়ে প্রায় দেড় মাস পড়াশোনা হয়নি। তাই ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে পড়েছে। এখন আরও ক্লাস নষ্ট হওয়া মানে আরও জটিলতা বেড়ে যাওয়া। সে জন্য আপাতত স্কুলের সময়ে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচার না-করার আর্জি জানিয়েছেন ওই মোর্চা কর্মীরা।
শিক্ষক শিক্ষিকারাও উদ্বিগ্ন। সামনে পুজো। তার পরে শীতে দীর্ঘ ছুটি থাকবে পাহাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। এর মধ্যে স্কুলে মোর্চার প্রচারের সিদ্ধান্ত অনেক স্কুলই মেনে নিতে পারছে না।
এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেন, “আমরা এখনও আশাবাদী, মোর্চার যে নেতারা হুটহাট আন্দোলনের ফতোয়া দিচ্ছেন, তাঁদের শুভবুদ্ধি হবে।” সেই সঙ্গে মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “পড়ুয়াদের ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে রাজ্য সরকার চুপ করে বসে থাকবে না।” |