|
|
|
|
পরিত্রাতার দল পাট গোটাতেই পথ-দুর্ভোগের চেনা ছবি নগরে
নিজস্ব সংবাদদাতা |
যা ভয় ছিল, তা-ই হল। আটচল্লিশ ঘণ্টার বন্ধ উঠে গিয়েছিল দশ ঘণ্টায়। তাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও পর দিনই ফের তলানি নেমে গেল চালু বাসের সংখ্যা।
কারণ, ধর্মঘট মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ নিগম সাধ্যের বাইরে গিয়ে যত অতিরিক্ত বাস নামিয়েছিল, শুক্রবার সেগুলো গ্যারাজে ফিরে গিয়েছে। আর সরকার-সমর্থক বাস-মালিক সংগঠন ধর্মঘট প্রতিরোধে যত বাস ধার দিয়েছিল, তার বড় অংশ এ দিন দাঁড়িয়ে থেকেছে রাস্তার ধারে বা পেট্রোল পাম্পে। ভাড়া না-বাড়ায় মালিকেরা এমনিতেই সেগুলো বসিয়ে রাখেন, বাড়তি লোকসান ঠেকাতে।
সব মিলিয়ে এ দিন শহরের পথে ফিরেছে আম-নাগরিকের দুর্ভোগের সেই চেনা ছবি। বাস ধর্মঘটের ডাক ও কিছু স্কুল বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার আর পাঁচটা কাজের দিনের তুলনায় কম মানুষ বাইরে বেরিয়েছিলেন। সরকারি উদ্যোগে বাস বেরিয়েছিল তুলনায় বেশি। ফলে মনে হয়েছিল, যাত্রীর তুলনায় যথেষ্ট বাস রয়েছে, ভিড়ও কম! কিন্তু ধর্মঘট উঠে যাওয়ায় এ দিন ফের পথে মানুষের ঢল। স্কুল-কলেজও খোলা। অথচ বাড়তি বাস সব উধাও হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের নাভিশ্বাস। |
|
যেমন দুপুরে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে ৭৮ নম্বরের জন্য হা-পিত্যেশ করছিলেন সুচেতা পোদ্দার। বলেন, “কাল অনেক বাস ছিল। আজ কুড়ি মিনিট দাঁড়িয়ে, একটাও দেখলাম না!” বৃহস্পতিবার বেহালা চৌরাস্তা থেকে বেশ আরামে বেসরকারি বাসে চেপে অফিসে এসেছিলেন সন্দীপ লস্কর। এ দিন বাস না-পেয়ে অটো, মেট্রো ঠেঙিয়ে ঝক্কি পুইয়ে এসপ্লানেডে পৌঁছতে হয়েছে। “এমন ধর্মঘটই রোজ হোক না! সস্তায় আরামে অফিস চলে আসা যাবে!” কটাক্ষ মাঝবয়সী সরকারি কর্মীটির।
সরকার কী বলে? বৃহস্পতিবার সরকারের তরফে রাস্তায় নেমে হাল ধরেছিলেন যিনি, সেই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন স্বীকার করেছেন যে, ধর্মঘটের শহরে নামা বাড়তি বাসের বহর এ দিন তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁর যুক্তি, “বৃহস্পতিবার অনেক বেশি বাস ছিল। যাত্রী-দুর্ভোগ লাঘবে বাড়তি বাস নামানো হয়েছিল। সেগুলো এ দিন বেরোয়নি।” তা হলে কি এই অবস্থাই চলবে? বাসের অভাবে আগের মতোই নাকাল হবে মানুষ? এর সদুত্তর মেলেনি। কিন্তু যে ‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’ ২৪ ঘণ্টা আগে বিস্তর ‘বসে থাকা’ বাস নামিয়ে ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছে, এ দিন তাদের ভূমিকা কী? বাস-মালিকদের ওই সংগঠন সেই সব বাড়তি বাস ফের বসিয়ে দিয়েছে। সিন্ডিকেট সূত্রের খবর, সাধারণ দিনে তাদের হাজারখানেক বাস নামে। বৃহস্পতিবার নেমেছিল সতেরোশো। রাত পোহাতেই সংখ্যাটা হাজারে ফিরেছে। ধর্মঘট ডেকেছিল যারা, সেই মালিক সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর তরফে খবর, অন্য দিনের তুলনায় এ দিন তারাও কম বাস চালিয়েছে। “সরকার ভাড়া না-বাড়ানোয় বহু মালিক হতাশ। তাঁরা বাস নামাননি।” বলেন কাউন্সিলের এক নেতা। তাঁর কথায়, “ভাড়া না-বাড়লে আর ধর্মঘট ডাকার দরকার নেই। বাস এমনিতেই রাস্তায় থাকবে না।” ছবিটা এক দিনের জন্য পাল্টে ২৪ ঘণ্টায় যে ভাবে পুরনো চেহারায় ফিরল, দেখে পরিবহণ-কর্তারা অবাক নন। বরং তাঁদের মতে, এমন না-হওয়াটাই অস্বাভাবিক ছিল। এক কর্তার ব্যাখ্যা, “হার্টের ব্যামো থাকা কোনও বৃদ্ধ এক কিলোমিটার দৌড়লে তো একেবারে শুয়েই পড়বেন। লজঝড়ে বাসের দলও এক দিন দৌড়ে শুয়ে পড়েছে।” বস্তুত ভাড়া না-বাড়লে সরকারি নিগমগুলোরও যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই, কর্তাদের একাংশ তা মানছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তাঁর সরকার বাসভাড়া বাড়াবে না। এই অবস্থায় জয়েন্ট কাউন্সিল কী করবে?
সংগঠনের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজনৈতিক স্বার্থে কিছু করলে আখেরে পরিবহণ-শিল্পেরই ক্ষতি হবে।” বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার বক্তব্য, “পরিষেবা চালু রেখে, সরকারের সঙ্গে কথার মাধ্যমেই সুরাহা খুঁজতে হবে। ধর্মঘট সমাধানের রাস্তা নয়।” মালিকমহলের দাবি, কালীপুজোর পরে মদনবাবু বৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। কাউন্সিলের এক নেতা বলেন, “পুজো পর্যন্ত টেনে দেব। তার পরে ভাড়া না-বাড়ালে বাস বসিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”
|
বাস-বহর |
বৃহস্পতিবার |
শুক্রবার |
সিএসটিসি |
৪০০ |
৩৩০ |
সিটিসি |
২৩০ |
২০০ |
ভূতল পরিবহণ |
১০৫ |
৮৫ |
বেসরকারি* |
১৭০০ |
১০০০ |
* বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট • তথ্য-সূত্র: পরিবহণ দফতর |
|
পুরনো খবর: ভোগান্তির ভয়ে পথে নামলেন না অনেকেই |
|
|
|
|
|