ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, একশো দিনের কাজের প্রকল্পএখন সব ক্ষেত্রেই টাকা দেওয়া হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। কিন্তু যেখানে ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে কী হবে? এ বার তাই ব্যাঙ্কহীন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য পদক্ষেপ শুরু করল প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অর্থ দফতরকে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তারই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাঙ্ককে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তাঁরা যাতে ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েতে শাখা খোলেন। যদিও এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলির তেমন কোনও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি অবশ্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ব্যাঙ্কহীন ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টিতে শাখা খুলতে চলেছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “যাতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই ব্যাঙ্কের শাখা খোলা যায় সে ব্যাপারে অর্থ দফতরকে অনুরোধ জানিয়েছি। সমস্ত ব্যাঙ্ককেও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে।”
প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই ব্যাঙ্ক নেই। এই নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চতুর্থ স্থানে। রাজ্যে যে ৯৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কের শাখা নেই, তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি রয়েছে বর্ধমানে, যেখানে ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই। তারপর রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, এখানে ৯২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যাঙ্কহীন। আর পুরুলিয়াতে ৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার তথা ইউবিআই-এর রিজিওনাল ম্যানেজার সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহীর কথায়, “ব্যাঙ্ক উন্নয়নের ধারক ও বাহক। একটি এলাকায় ব্যাঙ্ক থাকলে সেই এলাকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর দ্রুত উন্নতি ঘটে। তাই ঝুঁকি নিয়েও আমরা মাওবাদী এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতেও ব্যাঙ্কের শাখা খুলছি। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সব দিক দিয়েই সাহায্য করছেন ও করবেন বলে জানিয়েছেন।”
তাই এ বার বিনপুর-১ ব্লকের লালবাঁধ, নয়াগ্রামের বড়খাকরি, কেশিয়াড়ির ঘৃতগ্রাম, খড়্গপুর-২ ব্লকের পপরআড়া, দাঁতনের তররুই ও জামবনির খাদিবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কের শাখা খুলতে চলেছে ইউবিআই। কলকাত থেকেই যেগুলির উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আপাতত এই নতুন ব্যাঙ্কগুলি পঞ্চায়েত দফতরেরই কোনও ঘরে চালু হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে ভাড়াও দেবে। প্রাথমিক ভাবে ৪০০ বর্গফুট এলাকাতেই ব্যাঙ্কগুলি কাজ শুরু করবে। পরে ব্যাঙ্কের লেনদেন
ভাল হলে কর্তৃপক্ষ নতুন বাড়ি করে পঞ্চায়েতের ঘর ছেড়ে দিতে পারেন।
কিন্তু এই শাখাগুলি চালু হওয়ার পরেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৭৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত বাকি থাকবে। সেক্ষেত্রে কী হবে? জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের কোথায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলা যেতে পারে সে ব্যাপারে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। রাস্তা রয়েছে কি না, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, টেলিফোন সংযোগ রয়েছে কি না সবই দেখা হয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে জানিয়ে অর্থ দফতর ও ব্যাঙ্কগুলিকে শাখা খোলার জন্য জানানো হয়েছে। তবে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাঙ্ক খোলায় এখনও খুব একটা আগ্রহ চোখে পড়েনি।
এক ব্যাঙ্ক আধিকারিকের কথায়, “ব্যাঙ্কও তো লাভ দেখবে। যেখানে পান দোকান, চা দোকান বা মুদি দোকানও নেই, সেখানে কি ভাবে ব্যাঙ্ক খোলা যায়? তা-ও আবার ঝুঁকি নিয়ে। মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তা না দিলে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা কঠিন। এক্ষেত্রে কোনও কর্মী বা আধিকারিকও সেখানে যেতে রাজি হবেন না।” এলডিএম অবশ্য আশ্বাস দেন, “নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসন সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রথম দফায় শাখা খোলার পর পুলিশি সক্রিয়তা দেখলে কারও কিছু বলার থাকবে না।” ইতিমধ্যেই দেশের প্রতি গ্রামের মানুষ যাতে ব্যাঙ্কের সুবিধা পানতার জন্য সরকারি উদ্যোগে খোলা হয়েছে আলট্রা স্মল ব্রাঞ্চ। এখানেও ব্যাঙ্কের সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। যে এলাকায় দু’হাজার জনসংখ্যা রয়েছে-সেখানেই এই ব্রাঞ্চগুলি চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরেই ২৭৩টি এই রকমের ব্রাঞ্চ চলছে। এছাড়াও যেখানে দু’হাজারের কম জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে পাশাপাশি দু’চারটি গ্রামকে নিয়ে কাস্টমার কেয়ার সেন্টার খোলার প্রস্তুতিও চলছে। এগুলি সংলগ্ন ব্যাঙ্কের অধীনেই। তবে কোনও না কোনও সংস্থা এর দায়িত্ব নিয়েছে।
|
পশ্চিমে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা |
|
ব্যাঙ্কের দূরত্ব |
পঞ্চায়েত |
৫ কিমির মধ্যে |
৫৪টি |
৫-১০ কিমি |
২২টি |
১০ কিমির বেশি |
৪টি |
ব্যাঙ্ক নেই ৮০টি পঞ্চায়েতে। |
|
|