পঞ্চায়েতের বাড়িতেই খুলবে ব্যাঙ্কের শাখা |
গ্রামে মানুষের কাছে লেনদেনের সুবিধা পৌঁছে দিতে পঞ্চায়েতের দফতরগুলিতেই শাখা খুলবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। রাজ্য সরকারের এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও তার অধীনে থাকা অন্য ব্যাঙ্কগুলি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টই বলছে, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ এলাকাতেই হাতের কাছে ব্যাঙ্কের শাখা নেই। সেই খরা কাটাতে গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস ঘরে ব্যাঙ্কের শাখা খোলার প্রস্তাব দেয় রাজ্য সরকার। স্থির হয়েছে, মাত্র এক টাকা ভাড়ায় ২১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তাদের শাখা খুলবে পঞ্চায়েত অফিস অথবা তার লাগোয়া পাকা বাড়িতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পরিকল্পনা রাজ্য স্তরের ব্যাঙ্কার্স কমিটির (এসএলবিসি) সাম্প্রতিক বৈঠকে পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ব্যাঙ্কগুলি এই প্রস্তাবে সাড়া নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, “ব্যাঙ্ক না-থাকায় গ্রামের মানুষ ঋণ নেওয়ার সুযোগ পান না। গ্রামীন উন্নয়ন থমকে যায়। তার কুপ্রভাব পড়ে গোটা রাজ্য এবং দেশের ওপর।” মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, হাতের কাছে ব্যাঙ্ক থাকলে গ্রামের মানুষ ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ফাঁদে পড়বেন না। আবার কৃষকরা সহজ শর্তে ঋণ পেলে চাষবাসেরও উন্নতি হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরের এক কর্তা বলেন, “এত দিন ব্যাঙ্কগুলির অগ্রাধিকার ছিল শহর। কিন্তু সেই বাজারের আয়তন আর বাড়ছে না। ফলে ব্যাঙ্কগুলিও এখন চাইছে গ্রামাঞ্চলে যেতে।” কিন্তু নিজেদের খরচে বাড়ি তৈরি করে বা ভাড়া নিয়ে শাখা খোলার খরচ দেখে তারা পিছিয়ে যায়। ওই কর্তা বলেন, “এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবটি যখন অর্থমন্ত্রী এসএলবিসি-র বৈঠকে পেশ করেন, আমরা তা লুফে নিই।” তাঁর মতে, পঞ্চায়েতের বাড়িতে শাখা থাকলে নিরাপত্তাও মিলবে।
কিন্তু শুধু সাধারণ মানুষের আমানত জমা নিয়ে বা তাঁদের ঋণ দিয়ে ব্যাঙ্কের শাখা লাভজনক হতে পারে না। রাজ্যের পক্ষ থেকে তাই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের যে বিপুল টাকা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে খরচ হয়, তার অধিকাংশই এই শাখাগুলিতে রাখা হবে।
রাজ্যে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৩২৯০টি। তার মধ্যে ৮৮৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রথম দফায় সেই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের দফতর-বাড়িতে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হবে, যার ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে কোনও ব্যাঙ্ক নেই। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এমন ১৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়িতে শাখা খোলা হবে।
এসএলবিসি-র আহ্বায়ক ও ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার মানস ধর বলেন, “এই সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ৩০টি ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েতে আমরা শাখা খুলব। অন্য ব্যাঙ্কগুলিও তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবে।”
গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কের শাখার অপ্রতুলতা শুধু এ রাজ্যেরই সমস্যা নয়। গত ১৩ অগস্ট রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী মুম্বইয়ে ফিকি-র সভায় পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, ১৯৯৪ সালে সারা দেশে গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কগুলির শাখা ছিল ৫৭.১৬ শতাংশ। ২০১৩-য় তা নেমে এসেছে ৩৭.১৮ শতাংশে। তিনি বলেন, “পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, নতুন প্রযুক্তি ও কর্মদক্ষতা বাড়লেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গ্রামের মানুষের প্রয়োজনকে আরও বেশি করে উপেক্ষা করে চলেছেন।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই কর্তার মতে, পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্য রাজ্যগুলির সরকার এগিয়ে এলে দেশের অর্থনীতিই মজবুত হবে। |