অনলাইন ব্যবসা মুছে দিচ্ছে
মানচিত্রের ফারাক
লকাতা, মুম্বইয়ে পড়াশোনার পর কর্মসূত্রে মেদিনীপুরের বাসিন্দা হওয়ার পর অরিন্দমের উদ্বেগ ছিল বই কেনা নিয়ে। বইপ্রেমী অরিন্দম পছন্দের নতুন বই বাজারে এলেই কিনতেন। কিন্তু প্রকাশিত হওয়ার পর পরই হাতে-গরম বই কি পাওয়া যাবে জেলা শহরে? বাংলা পাওয়া গেলেও ইংরেজি বইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অর্ডার দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হত। মুশকিল-আসান হল ফ্লিপকার্ট, ইনফিবিম, হোমশপের মতো অনলাইন স্টোর বাজারে আসার পরে।
কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দফতরের ফেলো হিসেবে মেদিনীপুরে কর্মরত অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আমি প্রতি মাসে অনলাইনে গড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকার কেনাকাটা করি। তাতে বই-সহ অন্য অনেক জিনিসও থাকে। অনলাইন শপিং আসলে ভৌগোলিক সুবিধার ধারণাটা ভেঙে দিয়েছে। অমিতাভ ঘোষ, ঝুম্পা লাহিড়ী, জে কে রাউলিং, খালেদ হোসেইনি-র নতুন বই আমি বাড়িতে বসেই অর্ডার করতে পারি। বাড়িতে বসেই সেই বই হাতে পেয়ে যাই। বই ছাড়াও ব্র্যান্ডেড ট্রাভেল ব্যাগ, জুতো-সহ নানা লাইফস্টাইল পণ্যও পাওয়া যায় মেদিনীপুর শহরে থেকেই।”
অনলাইন বিপণনের এই ধারা ক্রমেই বাড়ছে দেশে। বিশ্বের সববৃহৎ অনলাইন রিটেলার অ্যামাজন জুনেই ভারতে ব্যবসা শুরু করেছে। তাছাড়া রয়েছে স্ন্যাপডিল, ফ্লিপকার্ট, জ্যাবং, হোমশপ ১৮, ইনফিবিম, মিন্ট্রা, ইবে-র মতো হাজারো সাইট। মেট্রো শহরগুলিকে ঘাঁটি করে এই সংস্থাগুলি ব্যবসা শুরু করলেও ধীরে ধীরে তাদের বিপণনের জাল ছড়াচ্ছে জেলাতেও। জেলার বাসিন্দারা কিনে নিতে পারছেন এমন অনেক পণ্য যা আগে কলকাতায় না গিয়ে তাঁরা পেতেন না।
কলকাতা বা অন্য মেট্রো শহরে এই সংস্থাগুলি গ্রাহককে দাম দেওয়ার ক্ষেত্রে দু’রকম সুযোগ দেয়। অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পণ্য হাতে পাওয়ার আগেই অনলাইনে দাম দেওয়া যায়। অথবা, পছন্দের জিনিস হাতে পেয়েও দাম দেওয়া যায়, যাকে বলা হয় ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ বা ‘সিওডি’। কিন্তু কলকাতা থেকে দূরবর্তী জেলার অনেক জায়গাতেই সিওডি-র অপশন থাকে না বলে জানান অনেক গ্রাহকই।
রামপুরহাটের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী সামসুল করিম নিয়মিত কেনাকাটা করেন অনলাইনে। এই ধরনের কেনাকাটায় মোটের উপর তিনি খুশি হলেও জানালেন কিছু অসুবিধের কথাও। তাঁর কথায়, “অনেক সময় অনলাইনে পণ্যের ছবি দেখে যা মনে হয়, জিনিসটি পেয়ে দেখা যায় তাতে সামান্য ফারাক রয়েছে। ব্র্যান্ডেড নয় এমন পণ্যের ক্ষেত্রেই এটা বেশি হয়। তাছাড়া জেলায় অনলাইন স্টোরগুলি স্থানীয় ক্যুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়ায় অনেক সময় কলকাতার তুলনায় দেরিও হয়।”
অসুবিধে থাকলেও ই-বিপণন বেছে নিচ্ছেন জেলা শহরের বাসিন্দারা। তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কয়েক বছর আগেও বড় শহরগুলি থেকেও ৮০ শতাংশ ব্যবসা আসলেও এখন প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসা দিচ্ছে ছোট ও মাঝারি শহরগুলি। ই-কর্মাস সংস্থা ই-বে’র সমীক্ষা অনুযায়ী এই তালিকায় শিলিগুড়ি, খড়গপুর, দুর্গাপুরের মতো শহর যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে কদম্বগাছি, চাঁচল, পাণ্ডুয়া, বিষ্ণুপুর, মাদারিহাটের মতো শহরও। বিক্রি হওয়া জিনিসের তালিকায় রয়েছে ব্লুটুথ হেডসেট, ক্যামেরা স্ট্যান্ড, হ্যান্ডব্যাগের মতো লাইফস্টাইল পণ্য।
শিল্পমহলের দাবি, অনলাইন রিটেল ব্যবসা প্রতি বছরে বাড়ছে প্রায় ৪০ শতাংশ হারে। আর ক্রমবর্ধমান এই বাজারের আওতাভুক্ত হচ্ছে জেলার শহরগুলি। ই-বে’র সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন তৈরি হওয়া ক্রেতাদের অধিকাংশ মহিলা। সংস্থার অন্যতম কর্তা শরৎ দিগমুর্তি জানিয়েছেন, শুধু দেশি পণ্য নয়, ছোট ও মাঝারি শহর থেকে বিদেশি মোবাইল, ল্যাপটপ, খেলনা কেনার প্রবণতা বাড়ছে।
শুধু কেনাই নয়, অনলাইনে কিছু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পুরনো জিনিস বিক্রি শুরু হওয়াতে খুলে গিয়েছে ব্যবসার নতুন দিগন্ত। ওএলএক্স, ক্যুইকারের মতো ওয়েবসাইটে যে কেউ নিজের পুরনো জিনিসের ছবি আপলোড করে দাম ঠিক করতে পারেন। সেই জিনিসটি পছন্দ হলে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটি কিনে নিচ্ছেন ক্রেতা। জেলাতেও এই সাইটগুলি যথেষ্ট পরিচিত। ওএলএক্স এর ব্যবসায়িক পরিধির মধ্যে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, বারুইপুর ও বাঁকুড়ার মতো শহরও। মোবাইল ফোন, লাইফস্টাইল পণ্য থেকে শুরু করে জমি, বাড়ি, গাড়ি বিক্রি এবং ভাড়া করার বিজ্ঞাপনও এই সাইটগুলিতে দেওয়া যায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, এই সব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।
ই-কমার্স সংস্থাগুলির মতে, জেলায় অনলাইন ব্যবসার এই বাড়বাড়ন্তের একটা বড় কারণ ইন্টারনেটের বিস্তার। কম্পিউটারের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন মোবাইল ফোন থেকেই ঢুকে পড়া যায় নেট দুনিয়ায়। হাতের মুঠোতেই তাই পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্ব বাজারের সুলুকসন্ধান। এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছেন ই-দুনিয়ার ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই। আগে ব্র্যান্ডেড পণ্য বড় শহর থেকে ছোট শহরে আসতে দেরি হত।
আবার সব ছোট শহরে বড় ব্র্যান্ডের দোকানও থাকে না। তাই অনেক সময় টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখলেও তা পেতেন না জেলার বাসিন্দারা। সাইবার বিপ্লব ভেঙে দিয়েছে এই দেওয়াল। কয়েকটি ক্লিকেই জেলার শহরের বাসিন্দাদের দোরে পৌঁছে যাচ্ছে পছন্দের পণ্য। অনেক সময় পণ্যের দামে থাকছে আকর্ষণীয় ছাড়ও।
জানুয়ারিতে গুগল ইন্ডিয়ার করা একটি সমীক্ষা বলছে অনলাইন শপিং ব্যবহারকারী গ্রাহকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই খুশী এবং আবার অনলাইনে কেনাকাটার পক্ষপাতী। ভারতে তাই এই ট্রেন্ড দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে বলেই আন্দাজ সমীক্ষাটির।
কিছু হোঁচট
• ছবির সঙ্গে তফাত ঘটে যায় হাতে-পাওয়া জিনিসের। বিশেষ করে ব্র্যান্ডেড
পণ্য না হলে এমন ফারাক ঘটার সম্ভাবনা বেশি।
• স্থানীয় ক্যুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে ডেলিভারি, তাই কলকাতার তুলনায় দেরি হচ্ছে।
• অনেক জেলাতেই এখনও পাওয়া যাচ্ছে না ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’-র সুবিধে।
কিনতে হচ্ছে কেবল ক্রেডিট কার্ড দিয়েই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.