প্রায় মাস কানেক জলবন্দি থাকার পরে নির্মলচরে পের জাগতে শুরু করেছে ডাঙা। তবে বানভাসি জল নামেতই শুরু হয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা সমস্যা।
জলে ডোবা ঘরবাড়িতে মজুত যে সামান্য খাদ্যশস্য ছিল তাও পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ত্রাণও অপ্রতুল। আর তা নিয়ে স্বজনপোষণের চেনা অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে।
নির্মলচরে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার একর। তার মধ্যে প্রায় ২০০ একর জমির পাট ও বিভিন্ন সব্জি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধানও শেষ বেশ কিছু জমির। পচন ধরা সব্জি ও অন্যান্য ফসলে চরের বেশ কিছু জায়গায় এখন টেঁকা দায়। তা থেকে অচিরেই রোগের সংক্রমণ শুরু হবে বলেও আসঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য দফতর।
তবে পচা সব্জির উপরে পদ্মার উর্বর পলি জমে অযাচিত ভাবেই ‘সার’ হয়েছে জমিতে। ক্ষতির কিছুটা তা থেকে পুষিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যার উপরে হবে কলাই চাষ। ওই উর্বর পলির রস শুষে নিয়ে কলাই গাছ আপনা আপনিই ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে। তারপর পেকে গেলে কেটে নিয়ে মাড়াই করে বস্তবন্দি করা হয় কলাই শস্য। প্রায় বিনা পয়সার ওই চাষে পুরোটাই লাভ। আর তার জন্য বন্যার জল নামতেই শুরু হয়েছে কাদা জমিতে কলাই বীজ ছেটানোর তুমুল ব্যস্ততা।
তবে কার জমিতে কে কলাই বীজ ছেটাবে তা নিয়েও নতুন অশান্তি শুরু হয়েছে চরে।
স্থানীয় ভগবানগোলা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি রিয়াজুদ্দিন শেখ বলেন, “বন্যার জলে চরের জমির সীমানা লোপাট। ফলে কে কার জমিতে কলাই বীজ ছেটাবে তাই নিয়ে পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। সেই সঙ্গে চিকিৎসক দলের অপ্রতুলতাও নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে চরে। আইন শৃঙ্খলা সামাল দিতে বিএসএফকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে।”
নির্মলচরের পানীয় জলের সব নলকূপ বানের জলে ডুবে গিয়েছিল। ফলে নির্মলচরের পাইকমারি, ঘোষপাড়া, শয়তানপাড়া, মহিষমারিতে ডায়েরিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য দফতর থেকে নিয়মিত ওই এলাকায় চিকিৎসক দল পাঠানো হচ্ছে।”
কংগ্রেসের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লক স্তরে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে যাতে নির্মলচরের বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় তার জন্য প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে।” অন্য দিকে, ত্রাণ সামগ্রী বিলিবণ্টন নিয়ে স্বজনপোাষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। বানভাসি নির্মলচরের ২৮০০ পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে সরকার, সাংসদ, পুলিশ ও রামকৃষ্ণ মিশনের মতো বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মিলিয়ে পারয় ৪ হাজার তারপলিন, ১০০ কুইন্টাল চাল, ৩০ কুইন্টাল চিড়ে ও গুড় মিলেছে। সেই ত্রাণ সামগ্রী বিলি করার জন্য গড়া কমিটিতে আছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা ও নির্মলচর থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাহী আধিকারিক। কমিটির দুই সদস্য তথা স্থানীয় আখরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের বাকি বিল্লা ও নির্মলচর থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কংগ্রেসের ঊর্মিলা মণ্ডল বলেন, “দিন সাতেক আগে সভাধিপতি নির্মলচর ঘুরে দেখার পর দিন ৯০০ তারপলিন পাঠিয়েছেন। বিলি না করে সেই তারপলিন গ্রাম পঞ্চায়েতের গুদামে ফেলে রাখা হয়েছে। অন্য দিকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়েও দলবাজি চলছে।” |