ডেঙ্গি সামলাতে ব্যর্থ সরকার
শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ, সমালোচনা সূর্যকান্তের
শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি সামলাতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ির তিলক রোডে একটি নার্সিংহোমে ডেঙ্গি আক্রান্ত দলেরই কাউন্সিলর জয় চক্রবর্তীকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে ব্যর্থ সেই কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ডেঙ্গি পরিস্থতি নিয়ে তিনি বলেন, “বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, রাজ্যে শিশু মৃত্যু বাড়ছে, ডেঙ্গি বাড়ছে। এই সরকারের চোখে সব কিছু বাড়লেই ভাল।” শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ নিয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “আমি রাজনীতি করতে বা তা নিয়ে কিছু বলতে নার্সিংহোমে আসিনি। অসুস্থ কাউন্সিলরকে দেখতে এসেছি। তবে এই পরিস্থিতির জন্য সিএমওএইচ কী করবেন। ‘সিএমওএইচ’ থেকে ‘ওএইচ’ বাদ দিলে থাকে ‘সিএম’। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনিই তো চালাচ্ছেন। তিনিই তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী।”
পুরভোটের প্রচারে জেলার বাইরে রয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “মশার জন্ম যেখান থেকে হয় সেটা নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নয়। মুখ্যমন্ত্রী কী করবেন? পুরসভাকে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা এবং বাসিন্দাদের সচেতন করতে। সেই কাজ কিছু করেনি তাঁরা। যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হচ্ছে সেগুলিতে আমরা ক্ষমতায় নেই।” বস্তুত, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যর্থতার জন্য কংগ্রেস-সহ নানা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতায় থাকা পুর কর্তৃপক্ষ এবং গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি সূর্যকান্তবাবু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গির চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

অসুস্থ জয় চক্রবর্তীকে দেখতে হাসপাতালে সূর্যকান্ত মিশ্র।
বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
বাস্তব পরিস্থিতি হল, শিলিগুড়ি এবং তার আশেপাশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৮০০। তার মধ্যে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া মহকুমার অন্যান্য অংশে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ কাছাকাছি। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত এলাকার ১৪ ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত শতাধিক। ওই এলাকা এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার অংশে ৩৫০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রয়েছেন। শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোমগুলিতে চিকিৎসা করাচ্ছেন ১৫০ রোগী। শিলিগুড়ি পুরসভার প্রকাশনগর এলাকায় ১৭ সেপ্টেম্বর শিবির করে রক্ত সংগ্রহ করেছিল জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তার মধ্যে নতুন করে ১০ জনের রক্তের ডেঙ্গির জীবাণু থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এ দিন শিলিগুড়ি লাগোয়া খোলাচাঁদফাঁপড়িতে শিবির করেন তাঁরা। জ্বর নিয়ে সেখানে শতাধিক রোগী গিয়েছিলেন। জলপাইগুড়ি শহরে এ দিন ৭ জনের রক্তের ডেঙ্গির জীবানু ধরা পড়েছে।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে প্রতিদিনই শতাধিক রোগী আসছেন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা করাতে। রোগীর পরিবারের একাংশের অভিযোগ, জায়গার অভাবে অনেক রোগীকেই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করানোর কথা বলা হচ্ছে। ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অনেকে সুস্থ না হলেও তাঁদের ছুটি দেওয়া নিয়েও বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। বাধ্য হয়ে অনেকেই নার্সিংহোমগুলিতে যাচ্ছেন। তা নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের যোগসাজশের অভিযোগও তুলেছেন বাসিন্দারা। সম্প্রতি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য শিলিগুড়িতে এসে ঘুরে যান। পরিস্থিতির জন্য পুরসভাকে দোষারোপ করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে সুডা এবং পুর দফতর থেকে পুরসভাকে অন্তত ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল।তা দিয়ে ঠিক মতো কাজ করেনি পুর কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার পরও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভার তরফে সমস্যা মেটাতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে ক্ষোভ রয়েছে। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর শিলিগুড়ি ঘুরে যাওয়া প্রসঙ্গে সূর্যকান্তবাবু বলেন, “উনি কী করবেন? ওঁর চেয়ে চিকিৎসকের উপর নির্ভর করা ভাল।” হাসপাতালে রোগী ক্যলাণ সমিতির চেয়ারম্যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পুরো বিষয়টি দেখছেন। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার কাজে ১ জন অতিরিক্ত কর্মী দেওয়া হয়েছে। রোগীদের জায়গার সমস্যা যাতে না হয় তা দেখা হবে। শনিবার শহরে ফিরেই বিষয়টি দেখছি।” গৌতমবাবু জানান, ইতিমধ্যে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সররকারের তরফে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে রোগের বাহক এবং প্রকৃতি নিয়ে রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে। ফের বিশেষজ্ঞরা আসবেন। রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। মন্ত্রীর আশ্বাসে অবশ্য বাসিন্দারা আস্থা রাখতে পারছেন না। কেন না শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি উভয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর কাজ করছে। অথচ তাদের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। তাঁরা নিজেদের মতো আলাদা ভাবে কাজ করছে। অন্য দিকে পুরসভা তাদের মতো করে চলছে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সর্বত্রই সমন্বয়ের অভাব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.