স্থগিতাদেশ চেয়ে বামেদের আবেদন খারিজ হল কলকাতা হাইকোর্টে। ফলে আজ, শুক্রবার হলদিয়া পুরসভায় তৃণমূল কাউন্সিলরদের ডাকা অনাস্থা সংক্রান্ত তলবিসভা হচ্ছে নির্ধারিত সূচি মেনেই। তৃণমূলের দাবি, শিল্প-শহরের পুরসভা তাদের দখলে আসতে চলেছে। আজই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করবে তারা।
কী অঙ্কে তা সম্ভব, খোলসা না করে তমলুকের সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য যুব সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী শুধু বলেন, “এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করব না। তলবিসভা হয়ে যাওয়ার পরে যা বলার বলব।”
এ দিকে, বাম কাউন্সিলরেরা তলবিসভায় উপস্থিত থাকবেন না বলে দাবি করেছেন সিপিএমের পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠ। আদালতের রায় নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করেননি তিনি।
গত বছর পুরভোটে হলদিয়া পুরসভার ২৬টির মধ্যে সিপিএম ১৩, সিপিআই ২ ও তৃণমূল ১১টি আসনে জেতে। ২৬ জুলাই ১৫ জনকে নিয়ে বামেরা পুর-বোর্ড গঠনের পরে তমলুকের সাংসদ প্রকাশ্য সভায় ঘোষণা করেছিলেন, কয়েকমাসের মধ্যে পুরসভা দখল করবেন তাঁরা। তা হয়নি। তবে প্রথম দিন থেকেই বোর্ড মিটিংয়ে বাধা দেওয়া-সহ গণ্ডগোল পাকানোর নানা অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি রাজ্যপালেরও নজরে আনেন বামেরা।
গত ২ মে ও ২৩ অগস্ট বাম-পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তৃণমূল। পুরপ্রধান তমালিকাদেবী সেই চিঠিতে ত্রুটি রয়েছে জানিয়ে দু’বারই ওই প্রস্তাব খারিজ করে দিলে ৯ সেপ্টেম্বর উপপুরপ্রধান নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিকের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। উপপুরপ্রধান ওই প্রস্তাব খারিজ করে দিলে ১৭ সেপ্টেম্বর পুরসভার বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডল-সহ তিন জন কাউন্সিলর তলবিসভা ডেকে অন্য ২৩ জন কাউন্সিলরকে চিঠি দেন। ওই সভা ডাকার এক্তিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে ও স্থগিতাদেশ চেয়ে ওই দিনই আদালতের দ্বারস্থ হয় বামেরা। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানি হয়। ডিভিশন বেঞ্চ শুধু স্থগিতাদেশের আবেদন খারিজই করেনি, সভা নির্বিঘ্ন করার জন্য ব্যবস্থাও নিতে বলেছে প্রশাসনকে। অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় এ দিন আদালতে বলেন, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে তলবিসভা সম্পন্ন করতে যে-যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা সবই করা হবে।”
হাইকোর্টের এই রায়ে খুশি তৃণমূল। বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “আমাদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এত দিন ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন বামেরা। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের বৈধতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
কিন্তু তৃণমূল কি পারবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে?
হিসেব বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য নিজেদের ১১ সদস্য ছাড়াও তিন জনকে দরকার তৃণমূলের। কারা থাকবেন তৃণমূলের পাশে? তমালিকা শুধু বলেছেন, “আমরা তলবিসভায় থাকব না।” তবে তৃণমূলের দাবি, শেষ হাসি তারাই হাসবে। জল্পনার অবসান হবে কয়েক ঘণ্টা পরেই।
|