|
|
|
|
আন্দোলনের পথে মেদিনীপুর পুলিশ জেলার কর্মপ্রার্থীরা |
|
সফল হয়েও সিভিক পুলিশে কাজ মেলেনি
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
|
পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে পাঁচ মাস আগে। কিন্তু এখনও কাজ পাননি সিভিক পুলিশের পরীক্ষায় সফল কর্মপ্রার্থীরা। কাজের দাবিতে এ বার তাঁরা আন্দোলনে নামছেন। ইতিমধ্যে গড়া হয়েছে ‘সিভিক পুলিশ সংগ্রাম কমিটি’। প্রাথমিক ভাবে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্দোলন জোরদার করতে আগামী রবিবার খড়্গপুর গিরি ময়দানে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই ‘সংগ্রাম কমিটি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়ার কথা। সদ্য গঠিত অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক হিঙ্কু দাস বলেন, “বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনে নামছি। প্রায় পাঁচ মাস আগে পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। এখনও কাজ পাইনি। জেরক্সের দোকানে কাজ করতাম। সফল পরীক্ষার্থীর তালিকায় নাম বেরোনোর পর সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম, শীঘ্রই সিভিক পুলিশের কাজ পাব। কিন্তু, কোথায় কী!” রবিবারের সভাতেই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান হিঙ্কু। তাঁর কথায়, “প্রয়োজনে আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হব।”
হিঙ্কুর বাড়ি খড়্গপুরের নিমপুরায়। বাবা-মা-তিন ভাইকে নিয়ে সংসার। হিঙ্কু মেজো। দাদা-ভাই, দু’জনই বেকার। বাবা স্বপন দাস মজুরের কাজ করেন। হিঙ্কু সিভিক পুলিশের চাকরি পাওয়ায় পরিবারটা আশায় বুক বেঁধেছিল, এ বার কিছুটা হলেও দারিদ্র্য ঘুচবে। তা আর হয়নি। এই আন্দোলনের সাথে রয়েছেন অনিল দাস। অনিলবাবু রেলশহরে ‘গ্যাংম্যান সংগ্রাম কমিটি’র সভাপতি। গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি খড়্গপুরে বামফ্রন্টের প্রার্থীও হয়েছিলেন। অনিলবাবু বলেন, “কয়েক দিন আগে সিভিক পুলিশের সফল পরীক্ষার্থীদের কয়েকজন আমার কাছে আসেন। সহযোগিতা চান। আমি ওঁদের সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। সেই কবে তালিকা বেরিয়েছে। এখনও কেউ কাজ পাননি। এ ভাবে তো বেশিদিন চলতে পারে না।”
রাজ্য জুড়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার যুবক-যুবতীকে সিভিক পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলায় (ঝাড়গ্রাম বাদে) ৬,২০০ জনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। গত এপ্রিলে এই পুলিশ জেলার ১৭,৯৬৫ জনকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। সেখান থেকে ৬,২০০ জনকে নির্বাচন করা হয়। তবে কেউই একদিনও কাজ পাননি। জানা গিয়েছে, এটি কোনও সরকারি চাকরি নয়। তাই নিয়োগের পর কেউ একদিনও কাজ না পেতে পারেন। বিশেষ সময়ে যেমন নির্বাচন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা পুজোর সময় বাড়তি পুলিশের প্রয়োজন পড়লে সিভিক পুলিশরা কাজ পাবেন। কাজ করলে তবেই দিনে ১৪১ টাকা মজুরি পাওয়া যাবে।
২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ন্যূনতম মাধ্যমিক উত্তীর্ণরাই এই পদে জন্য আবেদন করেছিলেন। ঠিক ছিল, নিয়োগের পর ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারা চাকরি পাচ্ছেন, তার ডেটা ব্যাঙ্কও তৈরি থাকবে পুলিশের কাছে। ভবিষ্যতে এই সমস্ত যুবক-যুবতীরা পুলিশের অন্যান্য পরীক্ষায় আবেদন করলে কিছুটা সুবিধে পেতে পারেন। গত এপ্রিলে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ইন্টারভিউয়ের পর সফলদের তালিকা প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারপর আর প্রশিক্ষণ, নিয়োগ কিছুই হয়নি।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্য থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি বলেই নিয়োগ করা হয়নি। তাছাড়া, এই পদটি স্থায়ী নয়। প্রয়োজন হলে তবেই সফলদের কাজ দেওয়া হবে।
এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বেকারদের চাকরির ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে বিঁধছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “বেকার-দরিদ্রদের মোহগ্রস্ত করে রেখে দাও, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দাও, এ সবই তো রাজ্য সরকারের নীতি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “সব কাজ তো আর এক-দু’মাসে মধ্যে হয় না। কিছু সময় লাগবে।”
ধৈর্যের বাঁধ অবশ্য ভাঙছে। চলছে আন্দোলনের প্রস্তুতি। |
|
|
|
|
|