সম্পাদকীয় ২...
শক্তিমানের বিধি
থ, তুমি কাহার? এই প্রশ্নের উত্তর যে যাহার মতো করিয়া দিতে পারেন। পথ যে পথিকের নয়, তাহা কলিকাতায় বহু কালই সিদ্ধ। পথিকের জন্য এই শহরে যে সকল ফুটপাথ নির্মিত হইয়াছিল, রাজনৈতিক দলের অনুগামী হকাররা সেগুলিও জবরদখল করিয়া তাহাকে নিরাশ্রয় করিয়াছে। যানবাহনের চালকেরা বলিতে পারিতেন, পথ যান-চলাচলের জন্য, কেননা যানবাহনই একমাত্র পথ ব্যবহারের জন্য সরকারকে কর (রোড-ট্যাক্স) দেয়। কিন্তু কলিকাতার রাজপথগুলিতে বিশেষত উৎসবের মরসুমে তেমন দাবিও টিকিবে না। যেমন, দুর্গাপূজার পক্ষকাল কিংবা তাহারও বেশি সময় ধরিয়া পথ পূজা কমিটির। তখন রাস্তা জুড়িয়া মণ্ডপ, অতএব যানবাহনকে হয় ঘুরপথে যাইতে হইবে, নতুবা পূজা-উদ্যোক্তাদের শুভবুদ্ধিতে দয়া করিয়া ছাড়িয়া রাখা গলি দিয়া কোনও ক্রমে শম্বুকগতিতে অগ্রসর হইতে হইবে। কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পথ জুড়িয়া মণ্ডপ নির্মাণের এই স্বেচ্ছাচারকে ধিক্কার জানাইয়াছেন। সঙ্গত ধিক্কার।
আদালত লক্ষ করিয়াছে, যে-সকল পূজার সহিত রাজনৈতিক নেতা বা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব জড়িত, রাস্তা জুড়িয়া পূজার উৎপাতের ক্ষেত্রে তাহারাই অগ্রগামী। রাজনীতিকরা (তাঁহাদের মধ্যে রাজ্যের অন্তত ছয়জন বরিষ্ঠ মন্ত্রী, পুরসভার মেয়র-পারিষদ প্রমুখ রহিয়াছেন) এক বাক্যে আদালতের ভর্ৎসনা উড়াইয়া দিয়াছেন। কেহ-কেহ আবার পরম প্রজ্ঞায় ‘কলিকাতার ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং দুর্গাপূজার আবেগ ও ঐতিহ্য’ সম্পর্কে বিচারপতির অজ্ঞতার প্রসঙ্গও টানিয়াছেন, যদিও এ-সবের সহিত রাস্তা আটকাইয়া মণ্ডপ বানানোর সম্পর্ক কী, তাহা খোলসা করেন নাই। তবে প্রায় সকল রাজনীতিকই এই বিষয়ে একমত যে, তাঁহারা ‘বিধি মানিয়া’ই রাস্তা জুড়িয়াছেন। পুলিশও তাঁহাদের এই দাবি সমর্থন করিয়াছে। যান-চলাচলের জন্য নির্মিত রাস্তা জুড়িয়া মণ্ডপ যে ‘বিধিসম্মত’ হইতে পারে, ইহা সম্ভবত কলিকাতার একান্ত নিজস্ব পুর-সংস্কৃতির আবিষ্কার। সেই বিধি অনুযায়ী ১৫ ফুট চওড়া রাস্তায় মণ্ডপ গড়িলে ৪ ফুট জায়গা ছাড়িতে হইবে, ৩০ ফুট চওড়া রাস্তার ক্ষেত্রে ৬ ফুট। এমন অলৌকিক বিধি কাহারা রচনা করিল?
বিধি যদি চলিবার অধিকার খর্ব করাকে অনুমোদন করে, তবে সেই বিধি শক্তিমানের, যাহা অসহায় নাগরিকের অনুমতি ছাড়াই চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছে। এমন বিধির প্রয়োজনীয়তা লইয়াও তাই প্রশ্ন ওঠা উচিত। কারণ মানুষের জন্যই বিধি, বিধির জন্য মানুষ নহে। আর ‘সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা’ লইয়া রাস্তা জুড়িবার যে গল্প উদ্যোক্তা মন্ত্রীরা শুনাইয়াছেন, তাহা অনেক কাল আগেই বাসি হইয়া গিয়াছে। বাসিন্দাদের ঘাড়ে একটি বই দুইটি মাথা নাই যে, তাঁহারা এমন পথজোড়া পূজা-আয়োজনে আপত্তি জানাইয়া নেতাদের বিরাগভাজন হইবেন এবং কালক্রমে পাড়া ছাড়িয়া অন্যত্র চলিয়া যাইতে বাধ্য হইবেন। তাই সকলেই এই অনাচারে মৌন অবলম্বন করেন, উদ্যোক্তারা সেই মৌনকেই সম্মতির লক্ষণ রূপে তুলিয়া ধরেন। আদালত এই সম্মতি নির্মাণের প্রক্রিয়া বিষয়েই প্রশ্ন তুলিয়াছে। ইহার ফলে অচিরে সব পূজামণ্ডপ রাস্তার এক কোণে সরিয়া গিয়া পথিক ও যানবাহনকে পথ ছাড়িয়া দিবে, এমন নয়। কিন্তু অন্তত নাগরিক মননে প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার সহায় জোগাইবে। তাহাও বড় কম নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.