|
|
|
|
ধর্ষণের দায়ে পদত্যাগ মন্ত্রীর, অস্বস্তি কংগ্রেসে |
সংবাদসংস্থা • জয়পুর |
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার এক সপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগ করলেন রাজস্থানের মন্ত্রী বাবুলাল নাগর। গত সপ্তাহে ২৭ বছর বয়সী এক বিবাহিত মহিলাকে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের বাড়িতে ডেকে এনে বাবুলাল তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে মন্ত্রী ওই মহিলাকে খুনের হুমকিও দেন।
ওই মহিলার অভিযোগ, গত ১১ সেপ্টেম্বর নাগর তাঁকে কাজ দেওয়ার নাম করে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এর আগেও নাকি তাঁকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন বাবুলাল। তাই তাঁর ডাকে মন্ত্রীর বাড়ি পৌঁছে যান মহিলা। কিন্তু মন্ত্রী তাঁকে বেডরুমে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। মহিলার কথায়, “যখন আমি প্রতিবাদ করি, উনি হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরেন। পরে মারধর করেন।” একই সঙ্গে হুমকি দেন, ঘটনার কথা কাউকে বললে ভাঁওয়ারি দেবীর মতো পরিণতি হবে। মন্ত্রী অবশ্য ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ওই মহিলা যে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন, তা মেনে নিয়ে বাবুলালের মন্তব্য, “বিকেল পাঁচটা নাগাদ উনি যখন এসেছিলেন, আমার বাড়ি তখন লোকজনে ভর্তি।”
বাবুলাল নাগর |
পুলিশের কাছে গিয়ে কোনও সাহায্য পাননি মহিলা। তাই জয়পুরের একটি আদালতে গিয়ে অভিযোগ জানান। কোর্টের নির্দেশে ৫৩ বছর বয়সী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ, ধর্ষণের দিন, ১১ সেপ্টেম্বরের রাতে ওই মন্ত্রীর বাড়িতে যেতে বাধ্য করা হয় মহিলাকে। যে ঘরে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে, তা দেখাতে বলে পুলিশ। সেখানে ছিলেন নাগরও। ঘরটি সিল করে নাগরের সঙ্গে মহিলাকে কথা বলতেও বাধ্য করে পুলিশ। কিন্তু ধর্ষিতাকে রাতে একা অভিযুক্তর বাড়িতে কেন নিয়ে গেল পুলিশ? তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। রাজস্থানের দায়িত্বে থাকা এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস কামাথ ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠান বুধবারই। তখনই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। কিন্তু তার আগে কিছু করা হয়নি কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
ঘটনা হল, বাবুলালকে নিয়ে রাজস্থানে অশোক গহলৌতের সরকারের দু’জন মন্ত্রী-সহ মোট তিন জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। ভাঁওয়ারি দেবী হত্যা মামলায় জলসম্পদ মন্ত্রী মহীপাল মাদেরনা-সহ বিধায়ক মালখান সিংহ আগে থেকেই জেলবন্দি। এই বছরের শেষেই আবার রাজস্থানে ভোট। তার উপরে নতুন করে বাবুলালকে নিয়ে বিতর্কে কংগ্রেস যথেষ্ট অস্বস্তিতে। এতটাই যে গোটা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে হাইকম্যান্ডকে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, মুখরক্ষার জন্যই তড়িঘড়ি বাবুলালকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া, ২১ এবং ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী রাজস্থান সফরে আসবেন। তাই তার আগে দলের ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টায় মরিয়া গহলৌত সরকার। বিরোধী দল বিজেপি এই সুযোগে ফের কংগ্রেসকে আক্রমণে ময়দানে নেমে পড়েছে। তারা নাগরের গ্রেফতার দাবি করে ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
আজ পদত্যাগের পরে খাদ্য ও সরবরাহ প্রতিমন্ত্রী বাবুলাল কিন্তু বলেছেন, “আমায় কেউ পদত্যাগ করতে বলেনি। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং নৈতিক কারণে আমি পদত্যাগ করলাম।” কংগ্রেস সরকারের এই মন্ত্রীর দাবি, “আমি তিন বার ভোটে জিতেছি। আবারও হয়তো জিততাম। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ধর্ষণের অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
নাগরের লোকজন এখনও তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। বুধবার থেকেই তাঁর বাড়ির চার পাশে চক্কর কাটছিল বেশ কিছু গাড়ি। মহিলা বলছেন, তার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছিল ওই ভাবে। ফোনেও নাগরের শাগরেদরা তাঁকে শাসিয়েছে। তাঁর ছেলেকে অপহরণের হুমকিও দিয়েছে তারা। গত কয়েক দিন ধরে তাই ছেলেকে সেই ভয়ে স্কুলে পাঠাতে পারছেন না তিনি। আপাতত আত্মগোপন করে রয়েছেন।
ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত অবশ্য তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। রাজস্থানের সিআইডির অপরাধ দমন শাখাকে পরে তদন্তভার দেওয়া হয়। নেওয়া হয় মহিলার বয়ান এবং ধর্ষণের দিন যে পোশাক পরেছিলেন মহিলা, তা পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। |
|
|
|
|
|