|
|
|
|
উদার হতে চাইছেন মোদী, প্রশ্ন সঙ্ঘ মানবে কি |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপ্রক্রিয়ার পক্ষে। নিজের জন্মদিনে রাজ্য দলকে দিয়ে সংখ্যালঘুদের জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব ঘোষণাও করিয়েছেন। এমনকী, সাধুরা বারবার চাইলেও এই মুহূর্তে অযোধ্যায় রামলালা দর্শনে যেতে নারাজ তিনি।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রবল সমর্থনের জোরে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়েও আপাতত উদারবাদী হিন্দু মুখ তুলে ধরার চেষ্টায় নরেন্দ্র মোদী। গোধরার কলঙ্ক মুছে উন্নয়ন এবং সংস্কারের রথ চালানোই এখন তাঁর সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ভোটের ময়দানে তাঁর স্লোগান, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার তিনি পাঁচ শতাংশ থেকে গুজরাতের মতো দশ শতাংশে নিয়ে যাবেন। শক্তিশালী অর্থনীতি, শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখানোই লক্ষ্য মোদীর।
কিন্তু যে সঙ্ঘ পরিবার লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে সুষমা স্বরাজ, সবাইকে অগ্রাহ্য করে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করল, তারা কী চায়? আরএসএসের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “ক্ষমতায় আসাটাই একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য, দেশে হিন্দুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের প্রধান কর্মসূচি তিনটি। রামমন্দির নির্মাণ, সংবিধানের ৩৭০ ধারার (জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা) অবলুপ্তি এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা। এ ছাড়া, গোটা দেশে গো-হত্যা নিবারণের মতো বিষয়ও রয়েছে। এই স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যগুলি পূর্ণ হলে ধর্মনিরপেক্ষ, অভিন্ন শক্তিশালী হিন্দুরাষ্ট্র গঠন হতে পারে। নরেন্দ্র মোদী সেই লক্ষ্যে এগোবেন, এটাই আরএসএসের প্রত্যাশা।”
ফলে যে সঙ্ঘ নেতৃত্ব মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার জন্য কার্যত ফতোয়া জারি করেছিলেন, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ইস্তফার হুমকি দিলে তাঁকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, ইস্তফা নিয়ে নেওয়া হবে, সিদ্ধান্ত বদল হবে না সেই নাগপুরের নেতারা মোদীর উদারপন্থী অবস্থান কি সহজে মানবেন? আর ঠিক এই জায়গাতেই মোদীর সঙ্গে সঙ্ঘের বিরোধের আশঙ্কা করছেন বিজেপি-র কিছু নেতা। |
মোদীর সঙ্গে বৈঠকে জন আব্রাহাম। গাঁধীনগরে। ছবি: পিটিআই। |
তবে এটা ঠিক যে লোকসভা ভোটের আগে সঙ্ঘের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায় কোনও ভাবেই চিড় ধরাতে চান না মোদী। সেই কারণে সংখ্যালঘুদের জন্য প্রস্তাবগুচ্ছ তিনি রাজ্য বিজেপি-কে দিয়ে ঘোষণা করিয়েছেন, নিজে কিছু বলেননি। তা ছাড়া, মৌলবীরা চাইলেও তাঁদের
মতো টুপি পরতে রাজি হননি। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদীর লক্ষ্য সংখ্যালঘুরা নন। কারণ সংখ্যালঘু ভোট যে বিজেপি পাবে না, সেটা তিনি ভালই জানেন। মোদী আসলে উদারপন্থী হিন্দু সমাজের কাছে এই বার্তা দিতে চান যে, বিজেপি মুসলমান-বিরোধী নয়।
সেই কারণেই হিন্দি বলয়ে গিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে চাইছেন না মোদী। বিজেপি-র অন্যতম রণকৌশল রচয়িতা অরুণ জেটলিও মনে করেন, হিন্দি বলয়ে চড়া হিন্দুত্ববাদী প্রচার চালানোর ভারটা উমা ভারতী, বিনয় কাটিহার, কল্যাণ সিংহ, বরুণ গাঁধীর মতো নেতাদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। মোদী থাকুন এ সবের ঊর্ধ্বে।
বিষয়টি নিয়ে মোহন ভাগবত-সহ সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে ইতিমধ্যেই ঠিক
করেছেন মোদী। তাঁর অভিমত হল, আডবাণীর রথযাত্রার সময় রামমন্দির আন্দোলনের যে প্রাসঙ্গিকতা ছিল, আজ আর তা নেই। এমনকী, সেই সময়ও রামমন্দির আন্দোলন গোটা দেশে, বিশেষ করে বাংলা বা দক্ষিণ ভারতে তেমন প্রভাব ফেলেনি। মোদী চাইছেন, হিন্দুত্বকে শক্তিশালী এক মহাজাতি এবং রাষ্ট্র গঠনের স্লোগানের সঙ্গে যুক্ত করতে। যার স্লোগান হবে শক্তিশালী জাতি, শক্তিশালী রাষ্ট্র ও শক্তিশালী নেতা।
জাতীয় নেতা হিসেবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অক্টোবরে আবার ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ শিল্প সম্মেলন করতে চলেছেন মোদী। সেখানে ব্রিটেন, ইজরায়েল-সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি। চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগসূত্র রচনার।
কিন্তু মোদীর এই অবস্থানে সঙ্ঘ পরিবার সায় দেয় কিনা, সেটা দেখার। আরএসএসের মধ্যেও এখন অনেক স্তর। অনেক মতপার্থক্য। ফলে তাদের অন্দরেও যে এই প্রসঙ্গে টানাপোড়েন চলবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোহন ভাগবত যদি বেঁকে বসেন, তা হলে কী হবে?
বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন সরসঙ্ঘচালক সুদর্শনের সঙ্গে নানা বিষয়ে তাঁর বিরোধ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সে দিন বাজপেয়ী-সুদর্শন সংঘাতের মাঝে ছিলেন শক্তিশালী আডবাণী। আর আজ মোদীর সঙ্গে ভাগবতের সংঘাত বাধলে বিজেপি-র কাণ্ডারী রাজনাথ সিংহ সেতুবন্ধনের কাজটা করতে পারবেন কিনা, প্রশ্ন সেটাই।
|
পুরনো খবর: ‘জনপ্রিয়’ মোদীর পাশেই সঙ্ঘ, বিদ্রোহে ইতি টানলেন আডবাণী |
|
|
|
|
|