বর্জ্যের পাহাড়ে নিরুত্তর ফোন
দেখি পুরী বর্ধমান/ সুন্দর চৌদিকেতে চান।
প্রবীণদের মনে পড়ে, এক সময়ে বর্ধমান পুরনগরীর প্রবেশপথ বর্ধমান স্টেশনের কাছে একটি ফলকে লেখা ছিল এই দু’টি পংক্তি।
সেই ‘সুন্দর’ কবেই বিদায় নিয়েছে। ২০১৩-র বর্ধমান শহর জঞ্জালে ভারাক্রান্ত। অলিগলি থেকে বড় রাস্তা, যেতে-যেতে রাস্তার পাশে একটি দৃশ্যই চোখে পড়ে জঞ্জালে উপচে পড়া আস্তাকুঁড়।
পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের তরফে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জঞ্জাল, স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘গোঁজা’। প্রতি দিন ১০০ থেকে ১২০ মেট্রিক টন জঞ্জাল জমে পুরসভা অনুমোদিত প্রায় ১২০টি আস্তাকুঁড়ে। তার বাইরেও রয়েছে জনসাধারণের তৈরি অসংখ্য আস্তাকুঁড়। সেগুলি থেকে বেশির ভাগ সময় জঞ্জাল উপচে পড়ে। সব মিলিয়ে শহরের ত্রাহি-ত্রাহি রব, সারা গায়ে দুর্গন্ধ।
জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কর্মীদের দাবি, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট সময়ে বাঁশি বাজিয়ে বাড়ি-বাড়ি গোঁজা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তা নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় ১২০টি আস্তাকুঁড়ে। সেই আবর্জনার স্তুপ সাফ করতে পুরসভার ট্রাক্টর দিনভর ঘোরে। তার পরেও দেখা যায়, সকালে পরিষ্কার হওয়া আস্তাকুঁড়ে ফের জঞ্জাল জমে উঠেছে।
বর্ধমান-কালনা রোডে রাস্তায় উপচে পড়েছে আবর্জনা। —নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়প্রমাণ এই জঞ্জাল নিয়ে ফেলা হয় কালনা রোড সংলগ্ন ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে। তার আয়তন গত ২৫ বছরে ১২ বিঘের চেয়ে বাড়েনি। পাশ দিয়ে পার হওয়া মানে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসা। আবর্জনার এভারেস্ট থেকে অনবরত পূতিগন্ধময় হিমবাহ গড়িয়ে পড়ছে। ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই...। ফলে, শহরের অনেক আস্তাকুঁড়ই অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকে, বিশেষত বর্ষাকালে। প্রশ্ন হল, এত বছরের পুরনো শহরে এখনও কেন ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ গড়ে তোলা গেল না? কেন এই বিপুল জঞ্জাল দিয়ে জৈব সার তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হল না? তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রাচীন এই শহরে রাজত্ব করেছে বামফ্রন্ট (পড়ুন, সিপিএম)। সিপিএমের বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির তরফে প্রকাশিত ভোট সংক্রান্ত পুস্তিকায় ‘পরিচ্ছন্ন ও নির্মল শহরের লক্ষ্যে’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে বর্জ্য পদার্থ হতে জৈব সার তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছে।” অথচ পুরসভার সচিব জয়রঞ্জন সেনের দেওয়া তথ্য বলছে, কোনও জৈব সার তৈরির প্রকল্পের গোড়াপত্তনই হয়নি।
সচিব জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে টেঞ্চিং গ্রাউন্ডের বর্জ্য থেকে জৈব সার প্রকল্প তৈরির জন্য সারা দেশ থেকে দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। অনেক যাচাই করে দিল্লি পুরসভায় জঞ্জাল থেকে জৈব সার তৈরিতে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হয়। সংস্থাটির কাজ দেখতে পুরকর্তারা দিল্লিও গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে সবুজ সঙ্কেত দিলে সংস্থাটির সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে (পিপিপি মডেল) জৈব সার কেন্দ্র গড়তে চেয়ে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয় পুরসভা। সে চিঠির উত্তর আজও আসনি। ফলে কাজও শুরু হয়নি। সিপিএমের প্রচার পুস্তিকায় আরও বলা হয়েছে, ‘ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে ১০ একর জমি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হলেও বর্তমান সরকারের জমিনীতির কারণে তা কার্যকরী করা সম্ভবপর হয়নি। আধুনিক বর্জ্যপদার্থ ব্যবস্থাপনার জন্য সমস্ত নিয়মনীতি মেনে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও, রাজ্য সরকারের অনুমোদন না মেলায় তা কার্যকরী করা যায়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে কোনও আর্থিক দায় বহন করতে হত না।”
সেই ১০ একর জমি কি চিহ্নিত করা হয়েছিল? সচিব জানান, মাত্র এক বারই পুরবোর্ডে জমি কেনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। পুরপ্রধান বলেছিলেন, ‘আমাদের হাতে টাকা রয়েছে। সেই টাকা দিয়ে আমরা ১০ একর জমি কিনতে চাই।’ কিন্তু তার পরে জমি খোঁজার বিষয়টি আর এগোয়নি।
বিদায়ী পুরপ্রধান আইনূল হক ফোন ধরেনি। পুস্তিকা আর বাস্তবের ফারাক বা সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যও তাই জানা যায়নি। বিদায়ী বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের সমীর রায়ের কথায় কটাক্ষ, “শহর থেকে আমরা সব আবর্জনা দূর করে দেব।” সে তো পরের কথা। কিন্তু এত দিন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করেও বামেরা কেন আবর্জনায় ঢেকে যেতে দিলেন ঐতিহ্যশালী এই শহরের মুখ?
প্রশ্নের অন্য প্রান্তে শুধু বেজে গেল জবাবহীন রিং টোন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.