গুসকরা স্টেশন রোডে একটি বাড়ির জানলায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এ রকম সংলাপ:
‘কি মাখন? বলেছিলাম না, ওরা পারবে না? গুসকরায় কোন কাজটাই বা হয়েছে? তোমরা এ বার আমাদের দিকে মুখ ফেরাও!’
‘কী সন্তোষ? একটা দাড়িপাল্লা নিয়ে এসো। এক দিকে আমার বোর্ডের কাজগুলো বসাও, অন্য দিকে ওদেরগুলো রাখো। সত্যি বলো তো, ওরা কোন কাজটা পেরেছে? ভোটটা আমরা পাব না কেন?’
ফোন করছেন গুসকরার প্রাক্তন সিপিএম পুরপ্রধান বিনোদ চৌধুরী। গত বার ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে আটটি জিতে বামেদের হাত থেকে গুসকরা ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। সে বার বিনোদবাবুকে টিকিট দেয়নি তাঁর দল। এ বারও দলের সঙ্কটের সময়ে তিনি রিংয়ের বাইরে। তবু নিজের মতো করে প্রচার করে চলেছেন তিনি। নিজের ছাড়াও স্ত্রী, ছেলে-বৌমার মোবাইল বেশির ভাগ সময়ে তাঁর হস্তগত। চলছে চেনা পরিচিত নম্বরে লাগাতার ফোন করা।
তৃণমূলের পুরবোর্ড কোনও কাজই করেনি? “আটটা এমন প্রকল্পের কথা বলতে পারি, যা আমাদের আমলে শুরু হয়েছিল, কিন্তু ওদের আমলে শেষ হওয়া দূরস্থান, কোনও অগ্রগতিই ঘটেনি।” বিনোদবাবুর ফিরিস্তি “২০০৭-এ আমাদের আমলে পানীয় জলপ্রকল্প শুরু হয়েছিল। কথা ছিল, তিনটে রিজার্ভার হবে আলুটিয়া, সংহতিপল্লি আর গরুর হাটে। একটাও হয়নি। কথা ছিল, ওই জলপ্রকল্প থেকে নতুন ১ আর ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া সর্বত্রই অর্থাৎ ১৪টা ওয়ার্ডেই (পুনর্বিন্যাসের পরে ওয়ার্ডের সংখ্যা এখন ১৬) পানীয় জল পৌঁছবে। শুধু ৯ আর ১৩-য় পৌঁছেছে। এটা ওদের ব্যর্থতা নয়?”
|
প্রাক্তন প্রধানের দাবি, সব ওয়ার্ডে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ শুরু হওয়ার কথা ছিল। শুধু ১২ নম্বরে কিছু বালতি পৌঁছেছে। অন্য কোনও ওয়ার্ডে সেটুকুও হয়নি। গুসকরায় দমকল কেন্দ্র গড়তে জমি নির্দিষ্ট করা রয়েছে, কিন্তু গত পাঁচ বছরে কাজ একটুও এগোয়নি। আউশগ্রাম থানাকে গুসকরা শহরে তুলে আনার জন্য জমি বরাদ্দ হয়েছিল। সেই জমিতে পাঁচিল দিতে বাম পুরবোর্ড খরচ করেছিল ২২ লক্ষ টাকা। “তৃণমূলের পুরবোর্ড এই ব্যাপারে একটা চিঠিও কি লিখেছে রাজ্য সরকারের কাছে?”
এবং উত্তরের অপেক্ষা না করেই বাড়িয়ে চলেন তালিকা তাঁদের আমলে প্রতিটি ওয়ার্ডেই কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বা সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। সেই কেন্দ্রগুলি রয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে কোনও ইউনিফর্ম দেওয়া হয়নি। পুর এলাকায় বারোশোর মতো বিদ্যুৎবাহী পোল রয়েছে। কিন্তু মাত্র ৩৪৬টিতে আলো জ্বালাতে পেরেছে তৃণমূলের বোর্ড।
বিদায়ী পুরবোর্ডের তৃণমূল প্রধান, চঞ্চল গড়াই তাঁর পাঁচ বছরের একটা বড় সময় নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই ব্যস্ত ছিলেন। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে দল তাঁকে তাড়িয়েছিল। বহু চেষ্টায় তিনি ফিরেছেন। তবু দুঁদে রাজনীতিক চঞ্চলবাবু সে সবের মধ্যে না গিয়ে বলেন, “ওঁরা ১৯৯৮ থেকে ২০০৮, দশ বছর পুরসভা চালিয়ে কতটা কাজ করতে পেরেছেন, সেটা মানুষ বিচার করবেন। আমরা তো মাত্র পাঁচ বছর সুযোগ পেয়েছি।”
চঞ্চলবাবুর দাবি, ২০০৭ সালে জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হলেও আগের বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে যা থেকে পুরনো ১০, ১১, ১২ ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করা হয়। ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে জল যায় ধারাপাড়ার প্রকল্প থেকে। আলুটিয়া, সংহতিপল্লি ও গরুর হাটে ১০.৫ লক্ষ মিটারের রিজার্ভার হবে। রাস্তায় ১৩০৭টি বাতিস্তম্ভের মধ্যে ৩৫৭টিতে লাগানো হয়েছে ভেপার ল্যাম্প। প্রতি মাসে বিদ্যুতের বিল বাবদ সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিতে হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকেদারকে দিতে হচ্ছে মাসে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু সেই আলোর লাইন থেকে হুকিং করছেন অনেকে। পুরসভাকে অতিরিক্ত বিলের বোঝা টানতে হচ্ছে। নতুন ধরনের আলো লাগানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে জুড়ে দেন, “এই শহর অনেকটা গামলার মতো হওয়ায় কুনুরের জল বাড়লে নিকাশি বেহাল হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানসম্মত মাস্টার প্ল্যান করে দ্রুত কাজ শুরুর কথা ভাবছি।”
ব্যাখ্যা, সাফাই, ভাবনা। বিনোদবাবুর সব প্রশ্ন উত্তর খুঁজে পেল কি? ভোটারই ভাল বুঝবেন। |