|
|
|
|
রোদ ঢোকে না, খন্দে বেহাল জঙ্গলের রাস্তা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁকসা |
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা। রাস্তার কিছু অংশে রোদ ঢোকে। আবার বেশ কিছু অংশে প্রবেশ করে না রোদ। বর্ষায় তো কথাই নেই। লাল মোরামের মেঠো রাস্তায় তৈরি হয় অগুনতি খানাখন্দ। বর্ষার জল খন্দে জমে কাঁকসার গড় জঙ্গলে শ্যামারূপা মন্দির ও দেউল পার্ক যাওয়ার রাস্তার অবস্থা শোচনীয়।
কাঁকসার ঘন জঙ্গলের মাঝে অজয় নদের ধারে রয়েছে ‘ইছাই ঘোষের দেউল।’ কথিত আছে, কাঁকসার জঙ্গল ঘেরা ত্রিষষ্টিগড়ের সামন্তরাজা ছিলেন কর্ণসেন। তাঁর আশ্রিত সোম ঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষ ত্রিষষ্টিগড়ের মধ্যেই পৃথক ঢেকুরগড় স্থাপন করে নিজেকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করলে কর্ণসেনের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ বাধে। হেরে যান কর্ণসেন। জয়ের নিশান হিসেবে ইছাই ঘোষ দেউলটি গড়ে তোলেন। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মতে, ইটের তৈরি এই দেউলটি গড়ে তোলা হয়েছিল মধ্য যুগের শেষ দিকে। সেই দেউল ও সংলগ্ন ৮১ একর জায়গা নিয়েই গড়ে উঠেছে আধুনিক দেউল পার্ক। |
|
রাস্তায় তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। —নিজস্ব চিত্র। |
দেউল পার্ক থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের ভিতর রয়েছে শ্যামারূপা মন্দির। কথিত আছে, ইছাই ঘোষ ছিলেন দেবী চন্ডীর ভক্ত। নিজের গড়ের মধ্যে মন্দির বানিয়ে সেখানে দেবীর পুজোর ব্যবস্থা করেন তিনি। কবি জয়দেব এই মন্দিরে আসতেন। প্রথম জীবনে তিনি দেবী চন্ডীর সাধনা করতেন। পরে তিনি বৈষ্ণব হয়ে যান। ভক্তের ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে দেবী এই মন্দিরে তাঁকে ‘শ্যাম’ রূপে দেখা দেন। তাই দেবী এখানে শ্যামারূপা। দুর্গার আর এক রূপ। দুর্গাপুজোর সময় এই মন্দিরে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। জেলার মানুষ তো বটেই, জেলার বাইরে থেকেও ভক্তেরা আসেন এখানে। এলাকাবাসীরা জানান, দেবীর ভক্ত রয়েছে কলকাতাতেও। দেউল পার্ক ও শ্যামারূপা মন্দিরে যাওয়ার দু’টো রাস্তা রয়েছে। পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়ক থেকে টানা পাকা রাস্তায় দেউল পার্ক যাওয়া যায়। কিন্তু সেখান থেকে শ্যামারূপা মন্দির যেতে হলে জঙ্গলের ভিতরের মেঠো লাল মোরামের রাস্তাই একমাত্র ভরসা। আবার দুর্গাপুরের মুচিপাড়া থেকে শিবপুরগামী রাস্তা ধরে মলানদিঘি পেরিয়ে পাকা রাস্তা থেকে ডান দিকে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে লাল মোরামের মেঠো রাস্তা। শ্যামারূপা মন্দির বা দেউল পার্ক যেতে সেই রাস্তাই ধরতে হয়। বর্ষায় অবস্থা বেহাল ওই দুই রাস্তারই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জঙ্গলের মাঝ বরাবর দিয়ে যাওয়া এই রাস্তায় ভারী লরি যাতায়াত করে। এই লরিগুলির অধিকাংশই বেআইনি। ভারী লরি যাতায়াতের জন্য বসে গিয়েছে রাস্তা। ফলে বৃষ্টির জল জমে রাস্তায় তৈরি হয়েছে খানাখন্দ।
দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা সুকুমার দে বলেন, “প্রতি বছর অষ্টমীর দিন আমি শ্যামারূপা মন্দিরে যাই। শুনছি এবার জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা নাকি খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। না সারালে সমস্যায় পড়তে হবে।” কাঁকসার জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বকসীর অবশ্য আশ্বাস, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন তিনি। |
|
|
|
|
|