|
|
|
|
পুজোর আগেই কিছু টাকা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী |
সুব্রত সীট • পানাগড় |
সারদা গোষ্ঠীর নাম না করেও সর্বস্বান্ত লক্ষ পরিবারকে পুজোর আগেই কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার জন্য টাকা কোথা আসবে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
কাল, শনিবার ১২টি পুরসভায় ভোট হতে চলেছে। তার অন্যতম বর্ধমান তিন দশকেরও বেশি বামেদের দখলে থাকা যে শহরকে কার্যত ‘পাখির চোখ’ করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই বর্ধমানেরই পানাগড়ে জনসভায় মমতা বলেন, “ওই সংস্থার নাম বলে আমি তাদের পাবলিসিটি দিতে চাই না। আমরা একটি কমিশন গড়েছি। হাইকোর্টের নির্দেশও আছে।” যে হাজার-হাজার মানুষ ওই সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন, তাদের একটা বড় অংশই দুঃস্থ জানিয়ে মমতা বলেন, “কমিশন থেকে রিপোর্ট পেলেই পুজোর আগে ওই সব গরিব এক লক্ষ পরিবারের হাতে কিছু কিছু অর্থ তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করব।” সপ্তাহ তিনেক আগে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনও একই কথা জানিয়েছিলেন। প্রায় ১৭ লক্ষ আমানতকারী তাঁদের টাকা ফেরতের আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত করেছেন। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য শুরুতেই ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনও মমতা বলেন, “আমরা একটা তহবিল গড়েছি। ৫০০ কোটির তহবিল।”
টাকা কোথা থেকে আসবে তা এ দিনও স্পষ্ট হয়নি। প্রাথমিক ভাবে ওই তহবিল গড়ার জন্য সিগারেটের উপরে বাড়তি কর বসানোর কথা বলেছিলেন মমতা। তার যৌক্তিকতা নিয়ে বিস্তর হইচই হয়। পরে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, জনস্বার্থে এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে একটি আইন করবে রাজ্য। সেই আইনের বলেই সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হবে শ্যামল সেন কমিশনকে। যেহেতু আইন হতে সময় লাগে, তাই পুজোর আগে টাকা দিতে হলে সাময়িক অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে সরকারকে। সেই প্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে, সরকার অন্য কোনও পন্থা নিচ্ছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে সামনে এসে পড়েছে পুরভোট। তার মধ্যে রয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের খাসতালুক বর্ধমান শহর। যেখানে ৩৫টি আসনের মধ্যে গত বার মাত্র পাঁচটি, তার আগের বার একটি মাত্র আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তৃণমূলকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য সব ক’টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল এগিয়ে ছিল এবং নিরুপম প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে হারেন। কিন্তু বামফ্রন্টের হাত থেকে পুরবোর্ড ছিনিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত শাসকদলের নেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। মুকুল রায় থেকে শুভেন্দু অধিকারী, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসে সভা করে গিয়েছেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রী নিজে জেলায় এসে উপভোক্তাদের সুবিধা প্রদান অনুষ্ঠান করে গেলেন। সাইকেল, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, পাম্প বিলি করলেন। উদ্বোধন করলেন একগুচ্ছ প্রকল্পের, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন আরও একগুচ্ছের। সর্বোপরি দিলেন টাকা ফেরতের আশ্বাস।
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বেআইনি কয়লা ও লোহার টাকা যে সারদা গোষ্ঠীতে লগ্নি করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত পুলিশ। এই এলাকা থেকে লগ্নি সংগ্রহের সাফল্যই দুর্গাপুরের মনোজ নাগেলকে সামান্য ব্যাক অফিস কেরানির পদ থেকে ডিরেক্টরের পদে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষের ক্ষতিও তাই বেশি হয়েছে। বিপর্যয়ের পরে দুর্গাপুরের মায়াবাজারে সারদার এক এজেন্ট আত্মহত্যা করেন। দুর্গাপুর শহর থেকে অন্তত ৫ জন এজেন্টকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অগস্টের শেষে সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও অরবিন্দ চৌহানকে দুর্গাপুর, আসানসোল ও বর্ধমান আদালতে হাজিরও করানো হয়েছে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের কটাক্ষ, “সারদা কাণ্ডে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা তছরূপ হয়েছে। সেখানে মাত্র পাঁচশো কোটি ফেরত অর্থহীন। রাজ্য তো একটি মামলাও করেনি! সারদার পরে রাজ্য সরকারই এ বার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে চলেছে।” |
|
|
|
|
|