মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা দোকানপাট উচ্ছেদ আপাতত দিন পনেরো পিছিয়ে গেল। সরকারের ‘নীতি’ মেনে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে স্থির হয়েছে, বেআইনি দখলদারদের এলাকা ছেনে যেতে ওই সময়টুকু বরাদ্দ করা হচ্ছে। তবে তারপরে আর গড়িমসির সুযোগ নেই। সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রত সাহা জানিয়েছেন, পনেরো দিন পরে ফের পুর দমেই শুরু হবে উচ্ছেদ অভিযান।
মন্ত্রী বলেন, “আমি উচ্ছেদের বিপক্ষে নই। কিন্তু ওই বৈঠকে উচ্ছেদের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি নেওয়ার পক্ষপাতী আমি। সে কথাই ওঁদের বলেছি।” কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, প্রায় তিন দশক ধরে দোকানপাট সাজিয়ে বসে থাকা ওই ছোট মাপের ব্যবসায়ীরা পুজোর মুখে রাতারাতি উচ্ছেদের মুখে পড়ুন এটা সরকার চায় না। তাই ওই ক’টা দিন সময় দেওয়া হল। আশা করি এর মধ্যেই ওঁরা দোকান সরিয়ে নেবেন।”
তবে, ওই সমিতির কংগ্রেস সদস্যরা অবশ্য এ ব্যাপারে এখনই প্রশাসনিক ‘সক্রিয়তা’ দেখতে চাইছেন। বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর স্পষ্ট কথা, “হাসপাতাল চত্বরে প্রসূতিদের যাতায়াতে অসুবিধে হবে, এমন প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে হঠিয়ে দেওয়া উচিত।” তবে শাসক দলের কথা আমান্য করে প্রশান যে কংগ্রেসের ‘আশু সমাধানের’ পথে হাঁটবে, এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই।
|
গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওই রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়। সেখানেই হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সঙ্গে উঠে এসেছিল এই উচ্ছেদ অভিযানের কথাও। সেখানেই অন্য সদস্যরা এ ব্যাপারে এখনই প্রশাসনিক তৎপরতার দাবিও তুলেছিল। সেখানেই পাল্টা ধীরে চলো নীতির প্রস্তাব দিয়েছেন মন্ত্রী।
ওই হাসপাতালের প্রবেশ পথে দোকানঘরের ভিড়ে বাস্তবিকই অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠছে। এমনকী ভিড় ঠেলে শেষ পর্যন্ত রোগী নিয়ে হাসপাতালের গেট পর্যন্তও পৌঁছয় না অ্যাম্বুল্যান্সয়। প্রসূতি মহিলাকেও প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের গেট থেকে অন্তত ৫০ মিটার রাস্তা হেঁটে যেতে হয়। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ মাতৃসদনে রোগী ভর্তির এটাই দস্তুর!
হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেন, “প্রতি দিন মাতৃসদনে রোগী ভর্তির চাপ বাড়ছে। অস্থায়ী দোকানগুলি বাস্তবিকই বাধা।” গত বছর অগস্টে মাতৃসদনে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ২৬৩৩ জন। এ বছর তা বেনে দাঁড়িয়েছে ৩১৫০ জন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “মাতৃসদন-সদর হাসপাতাল চত্বর এখন ছোটখাটো বাজারে পরিণত হয়েছে। জায়গা দখল করে ওই দোকান গড়ে তোলার ফলে রোগীর চলাচলের পথটুকু প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। দোকানঘর উচ্ছেদ অত্যন্ত জরুরি।”
জেলাশাসক রত্নাকর রাও বলেন, “ওই বিষয়ে একটা রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। রিপোর্টের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করে উচ্ছেদ করা হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের যেখানে-সেখানে গাড়ি রাখার বিষয়টিও পার্কিং করে বন্ধ করার ভাবনা রয়েছে প্রশাসনের।”
|