ফের ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাঁকুড়ায়। এ বার ওন্দায় ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গুরুতর অসুস্থ তিন জন। আক্রান্ত বহু গ্রামবাসী।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ডায়েরিয়ায় মৃত উত্তম ঘোষ (৪৫) ওন্দা ব্লকের আগড়দা গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি মৃতের স্ত্রী মামনি ঘোষ। ওন্দার রামসাগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে যথাক্রমে চিকিৎসাধীন ওই গ্রামেরই মথুর ঘোষ ও যমুনা ঘোষ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার বিকেল থেকেই গ্রামে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। মামনিদেবী প্রথম আক্রান্ত হন। তাঁকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরই উত্তমবাবুও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হলে রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার খবর পেয়েই মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আগড়দা গ্রামে স্বাস্থ্য-শিবির চালু করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সন্ধ্যার মধ্যেই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত ৩৫ জন গ্রামবাসীর চিকিৎসা হয় ওই শিবিরে। বুধবার সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে নতুন করে ১৯ জন অসুস্থ হন। তাঁদের মধ্যে মথুরবাবু ও যমুনাদেবীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। অন্য দিকে, মামনিদেবীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। তিন জনই চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
ওন্দার বিএমওএইচ অভিজিৎ দেওঘরিয়া বলেন, “শিবিরে ৫৪ জন গ্রামবাসীর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে। গ্রামের একটি নলকূপ থেকেই ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে বলে অনুমান। আমরা গ্রামের পুকুর, কুয়ো ও নলকূপের জল ব্লিচিং পাউডার ও চুন দিয়ে পরিস্রুত করছি। এলাকার নালা-নর্দমাতেও ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে।” আগড়দা গ্রামের ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সজল নিয়োগী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বাসিন্দাদের জল ফুটিয়ে খেতে বলা হয়েছে।”
গত ২১ আগস্ট বাঁকুড়া ১ ব্লকের জগদল্লা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপে শতাধিক গ্রামবাসী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ২৭ জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনার এক মাসের মধ্যেই আগড়দায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে ওই রোগ সম্পর্কে সচেতন করার ক্ষেত্রে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতি রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল অভিযোগ তুলেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “ডায়েরিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়তে আমরা সচেষ্ট।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “পানীয় জলের উৎসগুলি নিয়মিত পরিশুদ্ধ করা ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা না গড়ে তুলতে পারলে ডায়েরিয়া রোখা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে আমি স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
|