আর চার দিন পরেই দেশের সবথেকে দামি টুর্নামেন্ট আই লিগে নামবে মোহনবাগান। কিন্তু তার আগে করিম বেঞ্চারিফার টিমের আকাশে তো শুধুই কালো মেঘ! বুধবার পিয়ারলেসের মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধেও জিততে পারলেন না কাতসুমিরা। হারতে হারতে কোনওক্রমে মান বাঁচাল গঙ্গাপারের ক্লাব।
মরসুমের শুরুতেই পরপর দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নষ্ট। কলকাতা লিগে পিছোতে শুরু করেছে বাগান। কিন্তু ছোট দলের কাছে জোড়া ধাক্কার পর ময়দান জুড়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফ সি-র বিরুদ্ধে রবিবার তা হলে কী হবে?
কে কী ভাবল তা নিয়ে করিম বেঞ্চারিফার অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। ইতিমধ্যেই মাস দুয়েক প্র্যাকটিস করে ফেলেছে মোহনবাগান। আবাসিক শিবিরও হয়েছে। তা সত্ত্বেও আপনার টিম কেন এত অগোছালো? মরক্কান কোচ বলে দিলেন, “দলের মধ্যে বোঝপড়া এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলল আমার ছেলেরা। ওদের আরও একটু সময় দেওয়া দরকার।”
কোচ নিজের পিঠ বাঁচাতে যাই বলুন, তাতে অবশ্য বাগানের ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়া যাচ্ছে না। চোদ্দো কোটির টিমের বিরুদ্ধে এ দিন খেলল একটা সাধারণ মানের দল পিয়ারলেস। করিমের মতো কোনও হাইপ্রোফাইল কোচও নন দুলাল বিশ্বাস। তা সত্ত্বেও সাবিথ-ডেনসনরা যে ভাবে খাবি খেলেন নব্বই মিনিট, তা দেখে যুবভারতীর গ্যালারিতে আশঙ্কাএ বারও কি ট্রফিহীন থাকবে মোহনবাগান। |
উইং প্লে নেই। সেট পিস মুভমেন্ট কার্যকর হচ্ছে না। প্রচুর মিস পাস। নিজেদের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই। তা হলে করিম প্রি সিজন অনুশীলনে করলেনটা কী? এ দিনও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে, “সব নতুন ছেলে। মানিয়ে নিতে সময় লাগবে।” কিন্তু কবে এরা সড়গড় হবে? আই লিগ, ফেড কাপ তো শিয়রে!
বিরতির কিছু পরেই ২-০ পিছিয়ে পড়ল বাগান। শেষে ২-২। ম্যাচের নির্যাস বলছে, এগিয়ে যাওয়ার পর পিয়ারলেস আত্মতুষ্টিতে না ভুগলে ম্যাচটা দুলাল বিশ্বাসের টিম জিতে ফিরতেই পারত।
শুরুতেই মহমেডানের বাতিল স্ট্রাইকার ক্রিস্টোফারের আক্রমণে কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল বাগান রক্ষণে। তার উপর মাঝমাঠ আর ফরোয়ার্ডদের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই। এই সুযোগটাই কাজে লাগাল পিয়ারলেস। ম্যাচ শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই আইবর আর রোউইলসনের ভুল বোঝাবুঝিকে কাজে লাগিয়ে পিয়ারলেসকে এগিয়ে দেন ওয়াসিম রাজা। বিরতির পর ফের ব্যবধান বাড়ান নাইজিরিয়ান ক্রিস্টোফার। করিমের যুক্তি, “প্রথমার্ধে ছেলেদের মধ্যে আত্মতুষ্টি এসে পড়েছিল।” প্রশ্ন হল, আগের ম্যাচেই তো জর্জের সঙ্গে ড্র করে বাগান। এর পরও ফুটবলারদের আত্মতুষ্টি আসে কোথা থেকে? ১-০ পিছিয়ে পড়ার পর বাগান ফুটবলাররা যখন জাগলেন তখন ম্যাচ তাঁদের প্রায় মুঠিছাড়া। গোল শোধের জন্য মরিয়া এরিক, কাতসুমিরা চূড়ান্ত আক্রমণের রাস্তায় গেলেন। কিন্তু হল উল্টোটা। পাল্টা আক্রমণে এসে দ্বিতীয় গোল খেয়ে বসলেন সন্দীপ নন্দী। গোল ছেড়ে বেরিয়ে আসার শাস্তি পেলেন তিনি। তবে টিমের দুর্দশার দিনে করিমের স্বস্তি একটাই, চাপের মুখেও তাঁর দল শেষ পর্যন্ত লড়েছে। কাতসুমি ও এরিক গোল শোধ করায় সেটা প্রমাণিত।
একই সঙ্গে আরও দু’টি জিনিস প্রমাণিত।
এক) ফরোয়ার্ডে ওডাফা ওকোলি না থাকলে বাগানের আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে যায়।
দুই) ডিফেন্সে ইচে না থাকলে রক্ষণ কাঁপে। পিয়ারলেস কোচ দুলাল বিশ্বাস বহু দিন বড় ক্লাবে খেলেছেন চুটিয়ে। তিনিও বললেন, “মোহনবাগান বেশি ওডাফা নির্ভর হয়ে পড়ছে। ওডাফা না থাকলে মানসিক ভাবে চাপে পড়ে যাচ্ছে ফুটবলাররা।”
চোট পাওয়া ওডাফার মাঠে নামতে এখনও কয়েক সপ্তাহ লাগবে। প্রশ্ন হল, তত দিন কি বাগানে আলো জ্বলবে না?
মোহনবাগান: সন্দীপ, আইবর, রোউইলসন, ওয়াহিদ (কিংশুক), রবিন্দর, আদিল, ডেনসন, কাতসুমি, মণীশ (জাকির), সাবিথ (শঙ্কর), এরিক
|