এক গোলেই ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’। যুবভারতীতে পাদাং বধের পরদিন এটাই ক্যাচলাইন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। রাতারাতি ব্রাজিলীয় কোচের ‘চোখের মণি’-তে পরিণত জাপানি মিডফিল্ডার রিউজি সুয়োকা!
আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেও যিনি লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে কোচের আনা কেক মুখে না তুলে হনহন করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সেই সুয়োকা যেন রাতারাতি আপাদমস্তক বদলে গিয়েছেন একটি গোলেই। মঙ্গলবার জয়ের পরে তিনিই তো কোচকে পাশে বসিয়ে জয়সূচক গোল উৎসর্গ করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের পূর্বতন কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে। বুধবার বিকেলে দলের অনুশীলনে সেই সুয়োকার হাতেই ব্রাজিলের জার্সি উপহার হিসাবে তুলে দিলেন কোচ মার্কোস ফালোপা। বললেন, “সুয়োকার সঙ্গে আমার কোনও মনোমালিন্য নেই। ও আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।”
‘জাপানি বোমা’-কে কোচ ব্রাজিলের জার্সি দেওয়ার পর ময়দানে ফিসফাস, ‘হট সিট’-এর মেয়াদ ও গুরুত্ব বাড়াতে ফালোপা কি এ বার ড্রেসিংরুমের আস্থা অর্জনে নেমে পড়লেন। বিশেষ করে সুয়োকার! কারণ আগামী মঙ্গলবার পাদাং কোচ ঘরের মাঠে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে চার বিদেশি নিয়েই মরণ-কামড় দেওয়ার চেষ্টা করবেন। দলে ফিরবেন আর্জেন্তিনীয় মিডিও এস্তেবান। কার্ড সমস্যায় যিনি ছিলেন না মঙ্গলবারের যুবভারতীতে। সে পরিস্থিতিতে দলে কোনও রকম দূরত্ব চান না বলেই কি ফালোপার এই ‘জার্সি ডিপ্লোম্যাসি’-র আড়ালে অপারেশন ড্যামেজ কন্ট্রোলের তাস ফেলা? |
ইস্টবেঙ্গল কোচ সুয়োকা বন্দনায় পঞ্চমুখ হয়ে বলছেন, “মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে অহেতুক গল্প ফাঁদছে। সুয়োকা চোটের জন্য ফিটনেস হারিয়েছিল। ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরছে। দারুণ ফুটবলার। এ বার ওর ফর্মের ঝলক দেখবেন।”
কোচ আরও বলেন, “ওই জার্সিটা রোমারিও-বেবেতোদের পরিবারের অংশ। চুরানব্বইয়ের বিশ্বকাপের পর সাওপাওলোর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে জার্সিটা পেয়েছিলাম। সেটাই সুয়োকাকে উপহার দিলাম।” পিঠে ইংরেজিতে ৯৪ লেখা ওই জার্সি পেয়ে সুয়োকা কিন্তু সে ভাবে কোনও কথা না বলেই হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে যান।
কিন্তু লাল-হলুদ শিবিরের ভিতরের খবর, ইন্দোনেশিয়ায় ড্র করলেই এএফসি কাপের সেমিফাইনাল। এই পরিস্থিতিতে দলে কোনও ঝামেলা, ইগো সমস্যা বাড়তে দিতে চাইছেন না কর্তারা। তাঁদের তরফে ঠারেঠোরে তা বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে ফুটবলার এবং কোচকে। এ দিন অনুশীলনের পর ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারও বিতর্কে জল ঢেলে বললেন, “বিশ্বের সব দলেই কোচ ও কোনও না কোনও ফুটবলারের মধ্যে অম্ল-মধুর সম্পর্ক থাকে। যদিও আমাদের দলে কোনও সমস্যা ছিল না। কোনও কোনও মহল থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। দেশের স্বার্থে এ বার তা বন্ধ হোক।”
সুয়োকা ছাড়াও এ দিন কোচের তরফে পুরস্কৃত হলেন আরও দুই ফুটবলার। মিডফিল্ডার কেভিন লোবো পেলেন পারফিউম। তবে চোটের কারণে তিনি অনুশীলনে না আসায় সেই পুরস্কার নেন জোয়াকিম আব্রাঞ্চেস। পাদাংয়ের বিরুদ্ধে গোলে দুরন্ত পারফর্ম করা গুরপ্রীত সিংহও পেলেন আফটার শেভ।
এ দিকে, শুক্রবার অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে শহর ছাড়ার আগে কিছুটা হলেও চিন্তায় লাল-হলুদ শিবির। চোটের কারণে অনিশ্চিত লোবো। মেহতাবও বিব্রত অফিস সমস্যায়। মালয়েশিয়া হয়ে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ফালোপার দলের। কিন্তু সেখানেও ভিসা সমস্যায় চিডি-মোগা-ওপারারা। অধিনায়ক মেহতাব যদিও আশাবাদী সমস্যা মিটে যাবে।
|