গোল করে গ্যালারির কাছে গিয়ে দু’হাত তুলে উচ্ছ্বাসের এমন লাফ দিলেন, খাদের কিনারা থেকে বেঁচে ফেরা কোনও মানুষের সঙ্গেই যার তুলনা চলতে পারে। তার পর...
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন কোচ তাঁর দিকে হাত মোলানোর জন্য এগিয়ে আসছেন। আর তা দেখেই অন্য দিক দিয়ে দৌড়ে মাঠে ঢুকে গেলেন রিউজি সুয়োকা।
মার্কোস ফালোপা সব প্লেয়ারের সঙ্গে মাঠে ঢুকে হাত মেলাচ্ছিলেন। সুয়োকার পিঠে হাত রাখার সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে গেলেন জাপানি। তার পর সটান ড্রেসিংরুম।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও চমক!
ফালোপার পাশের চেয়ারে বসানো হয়েছিল মঙ্গলবারের গোলদাতাকে। কোচের দিকে তাকানো দূরে থাক, নিম-তেতো মুখ নিয়ে গুম হয়ে বসে রইলেন লাল-হলুদ মিডিও। এবং কথা বলার সুযোগ পেয়েই এমন ‘জাপানি বোমা’ ফাটালেন সুয়োকা, যা ময়দানের ইতিহাসে কখনও হয়নি। |
বর্তমান কোচের পাশে বসেই প্রাক্তন কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের প্রশংসা করে বলে দিলেন, “এটা আমার জীবনের অন্যতম ঘটনাময় গোল। এই গোল প্রাক্তন কোচকেই উৎসর্গ করছি।” যা শুনে মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে মর্গ্যানের প্রতিক্রিয়া, “সুয়োকার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওর জীবনের এ রকম একটা দিনে আমার কথা মনে রেখেছে। ওকে সিঙ্গাপুর থেকে চিনি। খুব ভাল প্লেয়ার। ইস্টবেঙ্গলে ওকে আমি চেয়েছিলাম।”
ফালোপা বনাম সুয়োকা যুদ্ধ চলছিল কয়েক সপ্তাহ ধরেই। যার মূল কারণ ফিটনেস সমস্যা এবং চোট। লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচ যখন বারবার বলেছেন, “সুয়োকার পুরনো জায়গায় চোট। ও ফিট নয়।” তখন ক্ষোভ উগরে দিয়ে ডেম্পো থেকে এ বারই কলকাতায় আসা সুয়োকা বলে গিয়েছেন, “নতুন চোট পেয়েছিলাম। আমি সুস্থ।” কলকাতা লিগে এ পর্যন্ত দশ মিনিটের বেশি তাঁকে খেলাননি ফালোপা। এ দিনও তাঁকে নামানো হয় বিরতির দশ মিনিট পর।
সুয়োকা নিয়ে নিরীহ প্রশ্নেও এ দিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন লাল-হলুদ কোচ। “ওকে নিয়ে কেন এত প্রশ্ন হচ্ছে? ও কি আপনাদের বন্ধু?” মিডিয়ার প্রশ্নে তেতে গিয়েছেন এ ভাবেই। তার একটু আগেই অবশ্য ফালোপার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে গিয়েছেন সিমেন পাডাংয়ের কোচ জাফরি সাসটেক। বলে গিয়েছেন, “সুয়োকা নামার পরই খেলাটা ধরে ইস্টবেঙ্গল।”
এএফসি কাপে খেলবেন, এই স্বপ্ন নিয়েই লাল-হলুদে সই করেছিলেন সুয়োকা। সেই ম্যাচেই প্রথম একাদশে সুযোগ না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বসেছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। আর ‘দেখিয়ে দেওয়ার’ মঞ্চ পেয়েই ‘ঐতিহাসিক’ গোল। “আমার একটা স্বপ্ন পূর্ণ হল। চ্যাম্পিয়ন করতে চাই দলকে। তবে আমার নব্বই মিনিট খেলার ফিটনেস দরকার।”
ইস্টবেঙ্গলের জাপানি কাঁটা ফুল হয়ে ফোটার দিনে অবশ্য চাপা পড়ছে না দুটো নাম সুভাষ ভৌমিক এবং ট্রেভর মর্গ্যান।
সুভাষ যিনি ২০০৪-এ প্রথম ভাইচুং-ডগলাসদের সাহায্যে মশাল নিয়ে গিয়েছিলেন এএফসি কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু তার পর এগোতে পারেননি। আর মর্গ্যান কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবারের ম্যাচটাই তো ইস্টবেঙ্গল খেলতে পারল তাঁর সাফল্যের জন্য।
বিশ্বের পঁচাত্তর দেশে ফুটবল নিয়ে কাজ করে আসা ফালোপা, দু’জনকেই দুভাবে টপকে গেলেন এ দিন। “ইন্দোনেশিয়ার টিমটা কত শক্তিশালী, জানি। মায়ানমারের কোচ থাকার সময় ওদের বিরুদ্ধে খেলেছি। এটা বিশাল কৃতিত্বের ব্যাপার,” বলছিলেন ফালোপা।
উত্তরসূরির কৃতিত্বকে কী চোখে দেখছেন মর্গ্যান? “খেলা তো টিভিতে দেখায়নি। কী বলব? ফোনে খবরটা পেয়ে ভাল লাগছে। ওদের কোচ নিয়ে কী বলব? ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে আমার কোনও বিজনেস নেই এখন,” গলায় ব্রিটিশ-সুলভ হাসি। ফোনের ও ধারের মুখটা দেখা না গেলেও বোঝা গেল, উন্নাসিক হয়েও তিনি একেবারে সরে থাকতে পারছেন না ছাত্রদের থেকে। যেমন সুয়োকার গোল দেখে ভিভিআইপি বক্সে বসে হাততালি দিচ্ছিলেন করিম বেঞ্চারিফা। জাপানি বোমা তো ভারতে তাঁরই আনা! |