ইন্দোনেশিয়ায় ড্র করলেই এএফসি সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল
জাপানি বোমায় ঘায়েল পাদাং
ইস্টবেঙ্গল-১ (সুয়োকা)
সেমেন পাদাং-০
প্রতিপক্ষ মানসিক ভাবে কুঁকড়ে দিলেও মরার আগে মরবে না। বরং প্রতিপক্ষকেই চেপে ধরো জোশ দিয়ে।
বলতেন ইসোরুকু ইয়ামামোতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পার্ল হারবার কাণ্ডের জাপানি নায়ক। মঙ্গলবার সন্ধেয় মাঠে নামার আগে রিউজি সুয়োকা কি এই কথাগুলো পড়ে মাঠে নেমেছিলেন? না হলে চব্বিশ ঘণ্টা আগেও যিনি ফালোপার দলে জাপানি কাঁটা হয়ে খচখচ করছিলেন তিনিই কি না জাপানি বোমা হয়ে আছড়ে পড়লেন সেমেন পাদাংয়ের জালে!
যুবভারতীর লিফটের সামনে এই প্রশ্ন শুনে হাসি থামে না হিরোশিমার মেয়ে চিজুর। রিউজি সুয়োকার স্ত্রী। বললেন, “চাপটা ছিলই। চোট সেরে যাওয়ার পরেও ওকে নিয়ে অহেতুক গুঞ্জন হচ্ছিল। কথা দিয়েছিল মাঠে নামলে গোল করবে। সেটা মিলিয়ে দিল।”
এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচ ১-০ পকেটে পুরে লাল-হলুদ সমর্থকরা তখন ‘সুয়োকা, সুয়োকা’ শব্দব্রহ্মে কাঁপিয়ে দিচ্ছেন যুবভারতী। বর্ষীয়ান সমর্থকদের কেউ কেউ আঠাশ বছর আগের এক কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচের স্মৃতি হাতড়াতে ব্যস্ত। সে দিন প্রথমার্ধে ১-০ পিছিয়ে থাকা লাল-হলুদের প্রথম একাদশে ছিলেন না এক বঙ্গসন্তান। মন খারাপ ছিল তাঁর। বিরতিতে কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে যখন নামানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন তখন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “মাঠে নেমে জবাব দে।” ’৮৫-র লিগে সে ম্যাচ ২-১ জিতে ফিরেছিল ইস্টবেঙ্গল। আর জবাব হিসেবে বিকাশ পাঁজি এবং দেবাশিস রায়কে দিয়ে গোল করিয়ে নায়ক হয়ে যান নাকতলার সেই বঙ্গসন্তান কৃশানু দে।
গোলের হুঙ্কার। যুবভারতীতে সুয়োকা। ছবি: উৎপল সরকার।
এ দিন সুয়োকাও যে সে রকম ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ মেজাজেই জবাব দিয়ে গেলেন তাঁর সমালোচকদের। ম্যাচ শেষে বলেও গেলেন, “ভারতে এটাই সেরা গোল।”
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর দশ মিনিট পরে ভাসুমকে তুলে যখন তাঁকে নামাচ্ছেন কোচ ফালোপা প্রেস বক্স থেকে দেখা গেল সুয়োকা তখন কিছু জানতে চাইছেন তাঁর কাছে। এই মরসুমে ঘরোয়া লিগে মোটে দশ মিনিট খেলা জাপানি তার পর বাধ্য ছেলের মতো মাঠে নেমেই প্রথম যে বলটা রিসিভ করলেন তাতেই বুঝিয়ে দিলেন ‘আজ মরার আগে মরব না’। তার আট মিনিট পরেই মোগাকে তুলে ইস্টবেঙ্গল কোচ নামিয়ে দিলেন তাঁর ‘পেলে’ জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজকেও। প্রথমার্ধের ৪-১-৩-২ থেকে সরে ইস্টবেঙ্গল তখন ৪-৩-২-১। এতক্ষণ মোগা-চিডির পিছনে মাঝমাঠে সাপ্লাই লাইন চালু করার বদলে নিষ্প্রভ হয়ে থাকা লোবো সরে গেলেন ডানপ্রান্তে। মোগার দিকে লক্ষ করে ওভারহেড বল তোলার কৌশল ফেলে মাটিতে বল রেখে খেলার কৌশলে চলে গেলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। ফালোপার এই মাস্টারস্ট্রোকেই সচল হয়ে উঠল শীতঘুমে থাকা লাল-হলুদের উইং প্লে।
মেহতাব বল কেড়ে দেওয়া শুরু করলেন সুয়োকাকে। মাঝমাঠে সে বল ধরে কোনাকুনি ভিতরে ঢুকে আসছিলেন জাপানি। আর উইং ধরে লালরিন্দিকা এবং লোবো ওঠায় চাপে পড়ে যাচ্ছিল ইন্দোনেশিয়ার দলটির রক্ষণ। যুবভারতীর জঘন্য ফিল্ড টার্ফ এবং ক্লান্তির কারণেই পাদাংয়ের চার ব্যাকের সামনে থাকা কোরিয়ান ব্লকার ইয়ুর ভুলভ্রান্তিগুলো প্রকট হয়ে ওঠা শুরু তখনই। যাঁর সামনে এসে এতক্ষণ আটকে যাচ্ছিল মোগাদের যাবতীয় আক্রমণের ঢেউ। সুয়োকা সেই সুযোগটাই নিলেন সত্তর মিনিটে। বক্সের একদম সামনে দাঁড়িয়ে ডান দিক থেকে আসা লোবোর বল ধরে আলতো চিপে পাদাং গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে দলকে দিলেন এগিয়ে। যেখান থেকে আর ম্যাচ বের করতে পারেনি পাদাং। ফলে ঘরের মাঠে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে এএফসি কাপের সেমিফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। পাদাংয়ে গিয়ে আগামী মঙ্গলবার ড্র করলেই বাংলার প্রথম দল হিসেবে শেষ চারে।
নাটকের ওঁরা তিন
এটা আমার জীবনের অন্যতম ঘটনাময় গোল। এই গোল মর্গ্যানকে উৎসর্গ করছি।
ফালোপার পাশে বসে হঠাৎ সুয়োকা
সুয়োকাকে নিয়ে কেন এত প্রশ্ন হচ্ছে বলুন তো? ও কি আপনাদের বন্ধু নাকি?
সাংবাদিক সম্মেলনে বিরক্ত ফালোপা
সুয়োকাকে সিঙ্গাপুর থেকে চিনি। খুব ভাল প্লেয়ার। ইস্টবেঙ্গলে ওকে আমি চেয়েছিলাম।
মুম্বই থেকে ফোনে মর্গ্যান
সুয়োকার গোলে জিতে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে কোচ ফালোপাও বলে গেলেন, “বুদ্ধি করে সুয়োকাকে ব্যবহার করলাম। আমিই ইস্টবেঙ্গলের স্কোলারি।”
কিন্তু লাল-হলুদের এই স্কোলারির দলে প্রথমার্ধে এত মিস পাস কেন? মাঝমাঠের দরজাও হাট করে খোলা। কোনও ব্লকিং নেই। মেহতাব যে প্রেসিং ফুটবলটা খেলে সেটাও এলোমেলো। কোচ বলছেন, “অনেক সময় মাঠে নেমে যা চাইছি তা হয় না।” আসলে প্রথমার্ধে তা হয়নি দুটো কারণে।
এক) লোবো এখনও পেন হয়ে ওঠেননি।
দুই) আর মর্গ্যানের ইসফাক কিংবা খাবড়ার মতো কোনও রক্ষণাত্মক হাফ ফালোপার এই দলে নেই। তাই সুযোগ পেলেই ৪-১-৪-১ ছকে মাঠে নামা পাদাংয়ের মোফু, তিতাস, উইলসন, নোভানসারা ওয়ান-টু খেলতে খেলতে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিলেন। গুরপ্রীত তৎপর না থাকলে তখনই অঘটন ঘটতে পারত। আর ঘরের মাঠে গোল বাড়ানোর ম্যাচে ১-০ এগিয়ে থাকা ফালোপা কেন চিডিকে তুলে একদম শেষপ্রান্তে রক্ষণাত্মক হয়ে গেলেন তাও বোধগম্য নয়।
এ দিন মাঠে পটকা ফাটেনি। জ্বলেনি মশালও। মাঠের বাইরে জয় সমর্থকদেরও।
আর মাঠে? সেখানে তো জাপানি বোমা কাঁপিয়ে দিয়েছে যুবভারতীকে।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, ওপারা, অর্ণব, সৌমিক, ভাসুম (সুয়োকা), মেহতাব, কেভিন লোবো, লালরিন্দিকা, চিডি (আলভিটো), মোগা (জোয়াকিম)।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.