উঠল দূষণ-নিষেধাজ্ঞা, হলদিয়ায় লগ্নির আশা
রাজ্যের মরা শিল্পায়নের গাঙে হঠাৎই আশার আলো।
বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে হলদিয়া, হাওড়া ও আসানসোল এই তিনটি শিল্পাঞ্চলে নতুন শিল্পস্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। পাশাপাশি আটকে যায় বর্তমান শিল্পের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণও। এই সময়ের মধ্যে ওই তিনটি শিল্পতালুকে, বিশেষ করে হলদিয়ায় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয় একাধিক সংস্থা। ফলে বিনিয়োগ কার্যত শূন্যে নেমে আসে।
আজ পরিবেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যের ওই তিন এলাকায় বাতাসে দূষণ নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে এসেছে। ফলে সেখানে শিল্পস্থাপনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এটা নিয়ে চাপ দিচ্ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবারও করেছি। দেরিতে হলেও এটা যে হলো, তার ফলে রাজ্যে শিল্পায়নের ভবিষ্যৎ আরও ইতিবাচক হবে।” কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও এই সংক্রান্ত কাগজপত্র এখনও তাঁদের হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিভিন্ন শিল্পতালুকে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবেশ মন্ত্রক ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে মোট ৪৩টি এলাকায় নতুন শিল্প স্থাপন বা সম্প্রসারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রাথমিক ভাবে আট মাসের জন্য ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর পর কড়া পদক্ষেপে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনায় ধাপে ধাপে বেশ কিছু শিল্পতালুকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্যের তিনটি শিল্পতালুক ছাড়পত্র পায়নি।
ক্ষমতায় আসার পরে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হন মমতা। গত জানুয়ারিতে হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিড্স’-এর আসরে রাজ্যের শিল্পপতিদেরও কেন্দ্রের উপরে চাপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, মমতার নির্দেশে দিল্লিতে লাগাতার দরবার করেন হলদিয়ার তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। সরব হন সংসদেও।
শেষ পর্যন্ত গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ওই তিন এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় দূষণের মাত্রা নির্দিষ্ট সীমার নীচেই রয়েছে। তার পরেই নিষেধাজ্ঞা তোলার এই সিদ্ধান্ত। আজ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি-সহ মোট সাতটি শিল্পতালুকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে পরিবেশ মন্ত্রক।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় বিশেষ করে হলদিয়ায় নতুন শিল্পস্থাপনের পথ সুগম হবে বলেই মনে করছে শিল্পমহল। হলদিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে জমি কিনেও নিষেধাজ্ঞার কারণে যে সব সংস্থা পিছিয়ে গিয়েছিল, তারা ফের আগ্রহী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুভেন্দুবাবুর দাবি, “সিইএসসি একটি ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্পে এবং ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পোরেশন লিমিটেড বিনিয়োগে উৎসাহ দেখিয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েলেরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। আগামী ছয় মাসের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। এর ফলে প্রায় ৮-১০ হাজার লোক কাজ পাবেন।”
তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও এই ধরনের ক্রিটিক্যালি পলিউটেড এরিয়ায় (সিপিএ) নতুন শিল্পস্থাপন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, ওই এলাকায় যখনই কোনও নতুন কাজ হবে, তা পরিবেশ সংক্রান্ত সব নিয়ম মেনে চলছে কিনা সে দিকে নজরে রাখবে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ। তিন মাস অন্তর তাদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.