শিল্পে পিছিয়েও শিল্প-দূষণে
শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ
শিল্পায়নে পারেনি। তবে শিল্পে দূষণের মাত্রার নিরিখে মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুকে পিছনে ফেলে দিল পশ্চিমবঙ্গ!
শিল্প ক্ষেত্রে দূষণ ছড়ানোর নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ অন্য সব রাজ্যের থেকে এগিয়ে রয়েছে। আজ লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজন। পরিবেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, কোন শিল্প কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে, তার মাত্রা অনুযায়ী সেগুলিকে তিনটি গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়েছে— লাল, কমলা ও সবুজ। লাল শ্রেণিভুক্ত শিল্পে দূষণের মাত্রা সব থেকে বেশি। এবং পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের শিল্পের সংখ্যা ১২,৮১০। যা সারা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি। পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ু। অপেক্ষাকৃত কম দূষণকারী কমলা ও সবুজ শ্রেণিভুক্ত শিল্প কারখানার দূষণেও পশ্চিমবঙ্গ অনেক রাজ্যের থেকে এগিয়ে আছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকে দোষারোপ করে অভিযোগ তোলেন, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে স্পঞ্জ আয়রনের কারখানার জন্য প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। ওই এলাকায় কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্যও অনুরোধ জানান তিনি। নটরাজন বলেন, তাঁকে সবিস্তার তথ্য দিলে পশ্চিমবঙ্গে অবশ্যই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হবে। শিল্প-দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার কলকাতায় বলেন, “৩৪ বছর ধরে শিল্প ক্ষেত্রে যে-লাগামহীন দূষণ তৈরি হয়েছে, তা এক বছরের দূর করা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি।” কিন্তু চেষ্টার যে-বিবরণ মন্ত্রী দিলেন, তাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা কর্মসূচি নেই। অতি-দূষণকারী স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা না-নিয়ে মালিকদের বোঝানো এবং তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পথ নিয়েছে রাজ্য সরকার।
গত এক বছরে দূষণের দায়ে কোনও কারখানা বন্ধ করেনি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কেন? মন্ত্রীর জবাব, “দূষণের দায়ে নিশ্চয়ই কারখানা বন্ধ করা যায়। কিন্তু তাতে শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন।” অথচ হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, দূষণের দায়ে কারখানা বন্ধ করলে শ্রমিকদের পুরোপুরি বেতন দিয়ে যেতে হবে। মন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “মালিকদের ওই নির্দেশ মানানোর দায়িত্ব কে নেবে?” অতএব শিল্পে পিছিয়ে থেকেও শিল্প-দূষণে পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতি অব্যাহতই থাকছে!
আশার ক্ষীণ আলো একটা আছে। পরিবেশ দূষণ বেড়ে যাওয়ায় গত চার বছর ধরে হলদিয়া, হাওড়া ও আসানসোলের শিল্পাঞ্চলে বড় মাপের শিল্প স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। সম্প্রতি হলদিয়ায় দূষণের মাত্রা কমায় ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য নটরাজনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত মাসে পরিবেশ মন্ত্রকের এক দল প্রতিনিধি হলদিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে যে-রিপোর্ট দেন, তা ইতিবাচক। পরিবেশ দূষণ বিপদসীমার নীচে থাকলে ফের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
নটরাজন লোকসভায় জানান, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং আইআইটি-দিল্লি দেশের ৮৮টি শিল্পতালুকে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। কোন শিল্পতালুক থেকে কত বেশি দূষণ ছড়াচ্ছে, তা দেখাই ছিল এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য। দেখা যায়, এর মধ্যে ৪৩টি শিল্পতালুক থেকেই দূষণ ছড়াচ্ছে। ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এই ধরনের কোনও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই ছিল না। এখন কোন শিল্প থেকে কতখানি দূষণ ছড়াচ্ছে, তার উপরে নিয়মিত নজরদারি চালায় পরিবেশ মন্ত্রক। সেই অনুযায়ী শিল্প স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শিল্প সংস্থাগুলি সরকারের শর্ত মানলে আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.