নয়াচরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জট ছাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হল। প্রকল্পের পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ২০ তারিখ দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি। ওই বৈঠকে ছাড়পত্র পেলে নয়াচরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে পারে।
পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র না-পাওয়ায় বহু দিন ধরেই আটকে নয়াচরের প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। সম্প্রতি এই প্রকল্পকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, নয়াচর প্রকল্পের উপর বহু মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভর করছে। অন্য দিকে, মনমোহন সরকারও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের উপরে জোর দিয়েছে। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিনিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি দেশের যে সব বিদ্যুৎ প্রকল্পকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে নয়াচরের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পও রয়েছে।
আর তার ফলেই দীর্ঘদিন ধামাচাপা থাকার পরে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে নয়াচর প্রকল্প নিয়ে। তবে ছাড়পত্র আদায় করতে গেলে প্রস্তাবিত ‘সাগর সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প’ নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি (এক্সপার্ট অ্যাপ্রাইজাল কমিটি) যে সব প্রশ্ন তুলেছে, বৈঠকে রাজ্যের প্রতিনিধিদের তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কর্তারা।
বাম আমলে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে পেট্রো-রসায়ন প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ রাজ্যের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে প্রকল্পটি নয়াচরে নিয়ে যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। তাতে সম্মতিও দেয় কেন্দ্র। কিন্তু ইতিমধ্যে রাজ্যে সরকার বদলে যায়। মমতা এসেই পেট্রো-রসায়ন প্রকল্পটি বাতিল করেন। পরিবর্তে সেখানে শিল্প পার্ক, ইকো-পর্যটন কেন্দ্র এবং তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা হয়। এ জন্য অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ইউনিভার্সাল সাকসেস গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি করে রাজ্য সরকার। শিল্পমহলের মতে, নয়াচরে তিনটি প্রকল্পের কথা বলা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পই। কারণ, তাপবিদ্যুৎ তৈরি হলে সেখানে শিল্প পার্ক গড়ে তোলা সহজ হবে।
কিন্তু শুরুতেই বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাদ সাধে বিশেষজ্ঞ কমিটি। তাদের যুক্তি, হুগলি নদীর মোহনায় অবস্থিত এই দ্বীপে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কমিটির সদস্য সি আর বাবুর নেতৃত্বে এক দল বিশেষজ্ঞ দ্বীপে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এই রিপোর্ট দেয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ভি পি রাজা পরিবেশ সুরক্ষার দিকটি মাথায় রেখে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য রাজ্যকে পরামর্শ দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিবেশবিদদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটি তিন মাসের মধ্যে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে তা পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রের কাছে। রাজ্যের আশা, এ বার পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে অসুবিধা হবে না। প্রকল্পের উদ্যোক্তা সংস্থার চেয়ারম্যান প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ওই বৈঠকের দিকেই আমি অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি।”
তবে ছাড়পত্র নিয়ে গড়িমসির পিছনে কেন্দ্রের ‘রাজনীতি’ রয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের প্রশ্ন, “বাম আমলে নয়াচরেই পেট্রো-রসায়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া গেলে এখন আপত্তি কেন?” কেন্দ্র অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। দিল্লির আমলাদের কথায়, কেন্দ্রের একগুচ্ছ মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে, অন্য রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জিতে পেট্রো-রসায়ন তালুকের ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছিল বুদ্ধবাবুর। এখন নতুন সরকারের আমলে রাজ্যের আমলারা সেই কাজ কতটা করতে পারেন, সেটাই দেখার।
|