দলের সবচেয়ে ছোট সদস্যের খোঁজে কয়েক দফায় রেল লাইনে উঠে, আবার কখনও শ্রমিক বস্তিতে ঢুকে দৌড়ঝাপ করল চারটি হাতির দল। তাদের সামাল দিতে বুধবার দিনভর নাকাল হতে হল বনকর্মীদের। ট্রেনের ধাক্কায় হাত থেকে বুনোদের রক্ষা করতে দিনভর ডুয়ার্সের ভিতর দিয়ে পথে ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।
শরীরে মানুষের ছোঁয়া টের পেলে মা আর সন্তানকে ফিরিয়ে নেবে না, এই চিন্তায় এক কিলোমিটার দূরে থাকা দলটির কাছে শাবটিকে বিনা স্পর্শে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফিরিয়ে দিতে পারেনি বন কর্মীরা। বনকর্মীরা শাবকটিকে স্পর্শ না করলেও চা বাগানের নালা থেকে ওই শাবকটিকে বেশ কয়েকজন শ্রমিক ঠেলে বাইরে বার করে আনেন। সে কারণে ওই শাবকটিকে মা আর কাছে টেনে নেবে কি না তা নিয়ে বন কর্মীরা চিন্তায় রয়েছেন। ডায়না বনাঞ্চলের রেঞ্জ অফিসার অজয় ঘোষ বলেন, “ডায়না জঙ্গলের দিকে হাতিগুলিকে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ওই শাবকটিকেও ওই জঙ্গলের দিকে ফেরাতে চাইছি। তবে সেটির শরীরে মানুষের ছোঁয়া লাগায় দলটি তাকে টেনে নেয় কি না তা এখন দেখার। আমরা চেষ্টায় কোনও ফাঁক রাখছি না।”
হাতির দল পুরোপুরি গভীর জঙ্গলে না ফেরা পর্যন্ত ঘণ্টায় ৩০ কিমিতে রেল চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে রেল আধিকারিকরা। এডিআরএম বেে নফিস লাকড়া বলেন, “লাইনের উপর যখন হাতিগুলি উঠেছিল। সে সময় ওই লাইনে ট্রেন ছিল না। সমস্ত ট্রেনের গতি কমিয়ে চলাচল করানো হয়েছে। কোনও ট্রেন দাঁড় করানো হয়নি।” |
দলছুট হস্তিশাবককে বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে
ফিরিয়ে দিলেন বনকর্মীরা। বুধবার। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে আর এক জঙ্গলে হাতিরা চা বাগান পার হয়ে চলাচল করে। শ্রমিক বস্তিতে মজুত করে রাখা নুন, হাড়িয়া আর চালের লোভে যাতায়াতের পথে চা বাগানের শ্রমিক বস্তিতে হানা দেয় বুনোর দল। রেতি জঙ্গল থেকে বার হয়ে ডায়না জঙ্গলে যাওয়ার পথে শাবক-সহ ৮টি হাতি বানারহাট এলাকার লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে ঢুকে পড়ে। শেষ রাতে বাগানে হাতি ঢুকেছে বলে হইচই শুরু হতে শ্রমিকরা মশাল জ্বালিয়ে বার হন। দলটি জঙ্গলে ফেরাতে পটকা ফাটিয়ে ক্যানেস্তারা বাজিয়ে জঙ্গলের দিকে ফেরানোর চেষ্টা চালান শ্রমিকদের।
প্রতিরোধের মুখে দলটি ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। সেই সময় দলের এক কনিষ্ঠ সদস্য চা বাগানের মাটির নালায় পড়ে। দলের চারটি হাতি রেললাইন পার হয়ে ডায়না জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। শাবকের খোঁজে বাকি চারটি বাগানে ঘোরাফেরা করতে থাকে। ভোর হতেই জঙ্গলে ফেরার রাস্তা ভুলে দলটি কার্যত বাগানে বন্দি হয়ে পড়ে। সকাল সাতটা নাগাদ লক্ষ্মীপাড়া বাগানের পাশে রেল লাইনে উঠে পড়ে দলটি। সন্তানের খোঁজে মা-সহ দলের বাকিরা রেল লাইনে ধারে ঘোরাফেরা করতে থাকে। বাগানের বাসিন্দারা এর পরে লক্ষ করেন একটি নালায় শাবকটি পড়ে রয়েছে। শাবকটিকে বার করা হয়। লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা সুনীল বড়ুয়া বলেন, “গায়ে মানুষের হাত পড়লে সন্তানকে মা হাতি ফিরিয়ে নেয় না। তবে আমরা মনে প্রাণে চাইছি মা যাতে শাবকটিকে ফিরিয়ে নেয়।” |