নির্বাচন পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষ জোটের কথা বিবেচনায় রেখেই আপাতত অখিলেশ-মুলায়মের সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে গোষ্ঠী সংঘর্ষ যে ভাবে ব্যাপক আকার নিয়েছিল, তাতে মুখ না খুললেও যে বিপদ তা-ও বুঝতে পারছেন তাঁরা।
মুজফ্ফরনগরের ঘটনার পিছনে সপা-কংগ্রেসের বোঝাপড়া রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। সেই কারণেও বিষয়টি নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার কথা বলছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। মুখ খুললেও খুলবেন দ্বিতীয় সারির নেতারা। সে ক্ষেত্রেও সরাসরি মুলায়ম বা অখিলেশকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকা হবে। মুজফ্ফরনগরে গিয়েও শাসক সপা-র শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের রাস্তায় হাঁটেননি প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া বা রাহুল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহও সরাসরি অখিলেশ বা মুলায়মের ভূমিকা নিয়ে সরব হননি। পরিবর্তে তিনি আঙুল তুলেছেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের দিকে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্চাশটির বেশি গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত সপা সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নীরবতা নিয়ে বিজেপি-বিএসপি সরব হওয়ায়, পরিস্থিতি সামলাতে আজ মাঠে নামেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। দিগ্বিজয় বলেন, “যে ভাবে চুরাশি কোশি পরিক্রমার সময়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতাদের গৃহবন্দি করেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে সপা-র সঙ্গে আসলে যোগসাজশ রয়েছে বিজেপিরই।” কিন্তু এটুকুই। সরাসরি অখিলেশ বা মুলায়মের প্রতি কড়া মন্তব্য করেননি তিনিও।
কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, আগামী নির্বাচনে এক দশকের প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মুখোমুখি হতে চলেছে দল। দুর্নীতির একাধিক ঘটনা তো রয়েছেই, উপরন্তু মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির কারণে ভোটারদের একটি বড় অংশ কংগ্রেসের উপর ক্ষুব্ধ। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গড়তে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকেই যে প্রয়োজন, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন মনমোহন-সনিয়ারা। ধর্মনিরপেক্ষ কোনও শরিকই যে ব্র্যাত্য নয় রাশিয়া থেকে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রীও সেই বার্তা দিয়ে রেখেছেন। দলও তাই এই মুহূর্তে সপা-র বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করে তাদের চটাতে চাইছে না।
কংগ্রেসের অবস্থান সপা শিবিরকে আপাত স্বস্তি দিলেও দলের সংখ্যালঘু মুখ আজম খানকে নিয়ে বিব্রত মুলায়মেরা। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের ‘স্টিং অপারেশনে’ মুজফ্ফরনগর এলাকার বুধনা ও ফুওয়ানা থানার পুলিশ অফিসারেরা স্বীকার করে নিয়েছেন, সংখ্যালঘু মন্ত্রী আজম খান সংঘর্ষের সময় তাদের নিষ্ক্রিয় থাকার নির্দেশ দেন। সংঘর্ষ থামাতে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করতে বলা হয় পুলিশকে। আজম খান অবশ্য আজ দাবি করেছেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, শাস্তি মাথা পেতে নেব।”
যে ভাবে সংঘর্ষের পিছনে সপা নেতার নাম জড়িয়ে গিয়েছে, তাতে যথেষ্ট উল্লসিত বিজেপি শিবির। বিজেপি মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী আজ বলেন, “আমাদের অভিযোগ যে ঠিক ছিল তা প্রমাণ হচ্ছে।” এত বড় ঘটনায় কেন্দ্র যে ভাবে চুপ, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি শিবির। বিজেপির দাবি, এখনই অখিলেশ সরকারকে বরখাস্ত করা হোক। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্র এই দাবিতে কর্ণপাত করছে না।
|