নতুন করে বিচার করে জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ডই দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। স্বভাবতই আনন্দে ফেটে পড়েন শাহবাগের আন্দোলনকারীরা। ঢাকার নানা জায়গায় বিজয় মিছিল বেরোয়। কাল সকাল ১১টায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রায়ের বিরোধিতা করে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামাতে ইসলামি। তার প্রস্তুতি হিসেবে এ দিন দুপুর থেকেই দেশের নানা জায়গায় গাড়ি পোড়ানো, হাতবোমা বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে জামাতের কর্মীরা।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী হিসেবে খুন, ধর্ষণ ও গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেও ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে বাংলাদেশ জুড়ে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সে দিন সন্ধ্যা থেকেই এক দল তরুণ ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ স্কোয়্যারে অবস্থান শুরু করেন। পর দিন হাজার হাজার মানুষ সেই অবস্থানে যোগ দিলে তা এক মহাসমাবেশে পরিণত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির পাশাপাশি জামাতে ইসলামি ও তার শাখা সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে লাখো মানুষ লাগাতার অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যান। শুরু হয় এক নতুন গণজাগরণ আন্দোলন। গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে ওঠে দেশের সব শহরে। সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়কে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষাই মর্যাদা পেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে। গণহত্যার কারবারিদের ফাঁসির চেয়ে কম কোনও সাজা দেশবাসী মানতে পারেন না।
খুন ও নির্যাতনের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য ঢাকার উপকণ্ঠ মিরপুরে রাজাকার ও আল-বদর বাহিনী গড়ে তোলেন কাদের মোল্লা। ছাত্র, সাংবাদিক, আইনজীবী-সহ সমাজের নানা স্তরের বহু মানুষকে তুলে এনে একটি পাম্পহাউসের মধ্যে জবাই করে তাঁর দলবল। ঢাকার আশপাশের কিছু গ্রামে গণহত্যার নেতৃত্বেও ছিলেন মোল্লা। একটি গ্রামে চড়াও হয়ে ৩৪৪ জনকে খুন করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন জামাতে ইসলামির এই চতুর্থ সর্বোচ্চ নেতা। |
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পরে মঙ্গলবার ঢাকার রাস্তায় বিজয় মিছিল। ছবি: রয়টার্স। |
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এ দিন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের চার জন বিচারপতিই কাদের মোল্লার ফাঁসির পক্ষে রায় দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আর কোনও আপিল করার সুযোগ নেই। শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন আসামি। দেশের অধিকাংশ মৌলবাদ-বিরোধী সংগঠন এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত তা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। জামাতের শরিক বিএনপি রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও শাসক আওয়ামি লিগ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।
জামাতে ইসলামি অবশ্য রায়কে ‘ভুল ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে। শরিক বিএনপি-কে পাশে পেতে তাদের সব নেতার মুক্তির পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিও হরতালের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছেন জামাত নেতৃত্ব। তার আগে এ দিন দুপুর থেকে ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝটিকা মিছিল বার করে গাড়ি ভাঙচুর করে জামাত ও তার সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। হাতবোমাও ফাটানো হয়। খুলনা, বগুড়া, রাজশাহি ও চট্টগ্রামেও একই ধরনের নাশকতা চালায় জামাতের কর্মীরা। কোথাও কোথাও পুলিশের ওপরেও হামলা চালানো হয়েছে।
|