মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুঠপাটে দোষী সাব্যস্ত করে জামাতে ইসলামির এক শীর্ষ নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক আদালত। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার হরতাল ডেকে দেশজুড়ে ব্যাপক হাঙ্গামা ও ভাঙচুর চালাল জামাত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। চট্টগ্রামে গুলিতে তিন জন মারা গিয়েছেন। কাল রাতে ঢাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে জামাত কর্মীরা আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় এক ব্যাঙ্ককর্মী পুড়ে মারা যান। বুধবারও হরতাল চলবে বলে জানিয়েছে জামাতে ইসলামি। এ দিকে, যাবজ্জীবনের পরিবর্তে কুখ্যাত গণহত্যাকারী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন।
 |
কাদের মোল্লা |
একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় গণহত্যা ও ধর্ষণে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত গড়ে জামাতে ইসলামি ও বিএনপি-র বেশ কিছু নেতার বিচার করছে বাংলাদেশ সরকার। ফেরার জামাত নেতা বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পরে মঙ্গলবার কাদের মোল্লার বিচারের রায় দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন বিচারপতি। কাল থেকেই ঢাকার নানা জায়গায় গুন্ডামি শুরু করে জামাত কর্মীরা। নেতাদের বিচার বন্ধের দাবিতে আজ হরতালের ডাকও দেয়। সকাল থেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহি, যশোর-সহ দেশের নানা জায়গায় পথে নেমে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ শুরু করে জামাত ও শিবিরের কর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েক জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ হয়। এ পর্যন্ত দু’জন মারা গেলেও কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সরকার একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু করার পর থেকেই জামাত তার বিরোধিতায় সরব হয়েছিল। তাদের জোটসঙ্গী বিএনপি-ও প্রথমে এই বিচারের বিরোধিতা করে। কিন্তু গণহত্যার নায়কদের বিচারের পক্ষে জনমত এত প্রবল হয়ে উঠেছে যে সোমবার এই প্রথম বিএনপি-র কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলাম ঘোষণা করেছেন, জামাতের দাবির সঙ্গে তাঁরা সহমত নন। বিএনপি-ও ঘাতকদের বিচার চায়, তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ।
ঢাকার মীরপুর এলাকার কুখ্যাত গণহত্যাকারী কাদের মোল্লা স্বাধীনতার আগে রাজাকার ও আল বদর বাহিনী গড়ে একের পর এক স্বাধীনতাপন্থী ছাত্র, আইনজীবী, সাংবাদিককে খুন করে। তাঁদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুঠপাট ও ধর্ষণেরও তিনি ছিলেন নায়ক। একটি পাম্পহাউসে তুলে এনে জবাই করে খুন করত তার দলবল। |
বাহিনী নিয়ে একটি গ্রামে হানা দিয়ে ৩৪৪ জনকে খুন করার দায়েও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে জামাতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলকে। কিন্তু তার পরেও আদালত তাকে প্রাণদণ্ড না দেওয়ায় সরকার পক্ষের আইনজীবী থেকে ছাত্র, নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন, সকলেই অখুশি। বেশ কয়েকটি সংগঠন রাস্তায় নেমে রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাত পর্যন্ত ছাত্ররা রাস্তায় বসে ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিচ্ছে। জামাতও তাদের নেতার বিচার ‘সাজানো’ বলে দাবি করে কাল ফের হরতাল ডেকেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, হাজার হরতালেও গণহত্যার নায়কদের বিচার থেকে পিছিয়ে যাওয়া হবে না। এর পরে গোলাম আজম, দেলোয়ার হোসেন সাইদি, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো কুখ্যাত ঘাতকরাও শাস্তি পাবেন। দেশবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ঢাকা থমথমে। বুধবার ফের হরতালে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। |