মুখ্যমন্ত্রীর দুর্গাপুর সফরের মুখেই প্রকাশ্যে উঠে এল অন্ডাল বিমাননগরী প্রকল্প ঘিরে গত তিন বছরের চাপা বিবাদ।
মালিকানা নিয়ে বিবাদের জেরে রাজ্যের এক সময়ের ‘শো-কেস’ প্রকল্প হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস এখন চূড়ান্ত সঙ্কটে। এ বার রাজ্যের আর এক ‘শো-কেস’ প্রকল্প এরোট্রোপলিস ঘিরেও সেই মালিকানা বিবাদ।
সমস্যার সূত্রপাত ২০১০ সালে। অন্ডালের বিমাননগরী প্রকল্প এরোট্রোপলিস-এর এক সময়ের বৃহত্তম অংশীদার প্রগতি সোশ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড বা পিএসআইডিএল-এর শরিক পার্থ ঘোষ ও রাজশেখর অগ্রবালের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। কোম্পানি ল বোর্ড ও হাইকোর্ট পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়। মালিকানার বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে অগ্রবাল ইস্তফা দেন। প্রসঙ্গত, পিএসআইডিএল-এর অপর শরিক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা হাডকো।
মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে অগ্রবালের অভিযোগ, এরোট্রোপলিস-এর মতো আমজনতার প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বেআইনি ভাবে পিএসআইডিএল -এর শেয়ার অন্য সংস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ে মার খাচ্ছে প্রকল্পের স্বার্থ। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নিতে চাইলেও অন্য পক্ষ সাড়া দেয়নি।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা না-মেটা পর্যন্ত পিএসআইডিএল কর্তার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে পার্থ ঘোষকে। |
মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকের কথা জানাজানি হতেই সোমবার পার্থ ঘোষের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে ই-মেল পাঠানো হয়। প্রশ্ন তোলা হয় সাংবাদিক বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে। পার্থবাবুর পাল্টা অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার আগে এ ধরনের কথা বলে প্রকল্পের ক্ষতি করতে চাইছেন অগ্রবাল। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, এই সাংবাদিক বৈঠক বৈধ নয়। কারণ তাঁর দাবি, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অগ্রবাল প্রকাশ্যে সংস্থার বিষয়ে এ ভাবে কথা বলতে পারেন না। এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অগ্রবাল। এবং একই সঙ্গে দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুর যাওয়ার আগেই সাংবাদিক বৈঠক ডাকার সময় বেছে নেওয়াও সম্পূর্ণ ‘কাকতালীয়’।
বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাতা সংস্থা বিএপিএল-এর অংশীদার হিসেবে প্রগতি ছাড়াও রয়েছে, সিটি স্টার, লেন্ড লিজ, রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম, চাঙ্গি এয়ারপোর্টস এবং আই এল এফ এস। সিটি স্টারের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন আর আর মোদী এবং লেন্ড লিজ-এর তরফে রয়েছেন উৎসব পারেখ। পার্থবাবুর দাবি, বিএপিএল-এ একটি শেয়ারও নেই অগ্রবালের। সে ক্ষেত্রে তাঁর ইস্তফা চাওয়ার কোনও অধিকারও অগ্রবালের নেই।
দেশের প্রথম বেসরকারি মালিকানার এই বিমানবন্দর ২০১১ সালের শেষে চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের গোড়া থেকেই কয়লা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। প্রকল্প তৈরির পথে বাধা আসে কোল ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে। ডিভিসি ও পাওয়ার গ্রিডও আপত্তি জানায়, কারণ প্রকল্প এলাকার মধ্যে বিদ্যুতের হাই টেনশন তার রয়েছে। এই সমস্যা মিটে যাওয়ার পরে ফের তৈরি হয় সমস্যা। ওই অঞ্চলে কয়লা ব্লক পাওয়া কিছু সংস্থা প্রকল্পের বিরুদ্ধে আদালতে যায়। পরে অবশ্য এই বিতর্ক মিটে যায়।
প্রায় ২০০০ একরের এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৭৮০ কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে, জানান পার্থবাবু। সামাজিক পরিকাঠামো-সহ অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্প গড়ার কাজও এগোচ্ছে বলেও জানান তিনি। আগামী বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প দেখতে যাওয়ার কথা। কাজি নজরুলের নামে এই বিমানবন্দরের নাম দিতে চান মমতা। |