বিক্ষোভ ওঠাতে প্রশাসন সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ করেছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপেই আপাতত বিক্ষোভ তুললেন রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমিদাতারা। আন্দোলনকারী জমিদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষও।
সোমবার বিডিও (রঘুনাথপুর ২ ব্লক) এবং পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পরে প্রকল্পস্থলের মূল গেট আটকে চলা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে ‘ল্যান্ডলুজার্স কমিটি’।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগামী সপ্তাহে পুরুলিয়া আসার কথা। স্থির হয়েছে, তার পরেই কোনও এক সময়ে (২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে) বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ডিভিসি। ডিভিসি-র এই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার
দেবাশিস মিত্র এ দিন বলেন, “প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতায় সমস্যা মিটেছে। আমরা খুশি। প্রশাসনের উপস্থিতিতেই এলাকার জমিহারা কমিটিগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।”
এ দিনই ‘সুকুমার সেনগুপ্ত স্মারক বক্তৃতা’ দিতে মেদিনীপুরে গিয়ে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন বলেন, “রাজ্য সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছে, যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করছে, তাতে রাজ্যে বড় বিনিয়োগ আসা কঠিন।” তাঁর সংযোজন, “রঘুনাথপুরে কোনও সমস্যা ছিল না। জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে, সর্বসম্মতিক্রমে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এখন যে ঘটনা ঘটছে, তা দুর্ভাগ্যের।” |
বস্তুত, এক দিকে ‘ল্যান্ডলুজার্স কমিটি’-র গেট বন্ধ করে টানা চার দিনের আন্দোলন, অন্য দিকে প্রকল্পের ‘ওয়াটার করিডর’ নির্মাণে ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র বাধাএই সাঁড়াশি চাপে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয়ে পড়েছিল ইতিমধ্যেই ছ’হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলা
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে রঘুনাথপুরে তাঁদের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ আদৌ হবে কি না, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও রবিবার জানিয়েছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ডিভিসি-র। এ দিন সকালে রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে যান ডিভিসি-র প্রকল্পের কিছু পদস্থ কর্তা। পুলিশের উপস্থিতিতে মহকুমাশাসকের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা হয়। ডিভিসি-র তরফে জানানো হয়, বিক্ষুব্ধ জমিদাতাদের নির্দিষ্ট একটি অংশের আলোচনায় বসলে অন্য জমিহারা কমিটিগুলি একই পদ্ধতিতে চাপ তৈরি করবে। মুখ্য বাস্তুকারের কথায়, “আমরা প্রশাসনকে প্রস্তাব দিই, এই ধরনের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে একত্রে বৈঠক করা হোক। প্রশাসনের উপস্থিতিতেই তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিশদে আলোচনা হবে।”
এর পরেই জেলা পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে প্রকল্প এলাকায় এসে কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিডিও উৎপল ঘোষ, সিআই (রঘুনাথপুর) সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুর থানার ওসি দেবাশিস পাহাড়ি ও নিতুড়িয়া থানার ওসি সাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক দফার
বৈঠকের পরে মূল গেট থেকে বিক্ষোভ প্রত্যাহারে সম্মত হয় ল্যান্ডলুজার্স কমিটি।
বিডিও বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ দিন কমিটির সদস্যদের জানিয়েছি, সেপ্টেম্বরে শেষ সপ্তাহে প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠক করে তাদের দাবি নিয়ে বিশদে আলোচনা হবে। কমিটি তাতে রাজি হয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।”
কমিটির নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা শিল্প-বিরোধী নই। কিন্তু, প্রথম থেকেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় আন্দোলন চালাচ্ছিলাম।” তবে, নির্ধারিত সময়ে বৈঠক না হলে ফের গেট আটকে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিটি। |