প্রমীলা ক্যাটারিং-এর হাত ধরে পুজোয় পোশাক কিনছেন ওঁরা
রাধাবল্লভি, পোলাও, কষা মাংস, ফিস ফিঙ্গার এ সবের নামই জানতেন। চেখে দেখার সাধ হয়নি। অভাবের সংসারে এক বেলা পেট ভরে খাবারই জুটত না। পোলাও-মাংসের স্বপ্নে পা বাড়াবেন কী করে!
তা সে সব পুরনো দিনের কথা। হালে অবশ্য সেই সব পদই পরিপাটি করে সাজিয়ে পরিবেশন করছেন তাঁরা। রাঁধা বাড়ার পাশাপাশি নিজে হাতেই তা পরিবেশন করছেন তাঁরা।
প্রশংসার সঙ্গে দূর হয়েছে ছেলেবেলার সেই অভাবও। মায়া মাঝি তাই বলতে পারেন, “ওই সব পদ দেখে মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় পুরনো দিনের কথা। তখন আর খেতে ইচ্ছে করে না। এখন সবাইকে খাইয়েই আনন্দ পাই জানেন।” মায়াদেবীদের পনেরো জনের সেই ক্যাটারিং সংস্থার নাম ‘প্রমীলা ক্যাটারার’।
কী করে গড়ে তুললেন সংস্থা, সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করলেন কী করে?
রেঁধে-বেড়ে পরিবেশনে ব্যস্ত মহিলা ক্যাটারিং কর্মীরা। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।
মায়া বলেন, “আমি একটি ক্যাটারিং সংস্থায় সহায়িকার কাজ করতাম। পাড়ার কয়েকজন দুঃস্থ মেয়ে আমাকে এক দিন ওদের অভাবের কথা বলে। শুনে আমার মনে হল মেয়েরা মিলে একটা ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা খুললে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমনই কাজ।” যার যা সামান্য সঞ্চয় ছিল তা দিয়েই তৈরি হয় প্রমীলা ক্যাটারার। কারও স্বামী মারা গিয়েছেন, কেউ বা স্বামীর সঙ্গে তাকেন না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছেন। এমনই অভাবের স্রোতে ভেসে যাওয়া জনা পনেরো মহিলা যেন ওই সংস্থাটিকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরলেন। নেতৃত্বে মায়াদেবী।
তিনি তাঁদের বোঝান, কাজটা অসম্মানের নয়। বিনিয়োগও সামান্য। খাটতে পারলেই টাকা রোজগার। কয়েক দিন ভাবার পর সকলেই সম্মতি জানায়। সাত দিন পর জানা গেল, শুধু তাঁরাই নন, সঙ্গে আরও বেশ কয়েক জন এই উদ্যোগে রাজি।
কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। কাজ করে বাড়ি ফিরতে রাত হলে পথে যদি বিপদ হয়, সেই আশঙ্কায় বেঁকে বসলেন কয়েকজন। সেখানেও পাশে পাওয়া গেল এলাকার কয়েকজন যুবককে। সেই শুরু। এখন প্রমীলা ক্যাটারারে রয়েছেন মায়া মাঝি, মামনি মাঝি, মিতা মাঝি, সঞ্চিতা হাজরা, প্রতিমা হাজরা, কাকলি সাহার মতো অনেকেই। পাশে সহযোগী হিসাবে পেয়েছেন পাড়ার বিশ্বজিৎ মণ্ডল, উৎপল দেবনাথ, অমিত স্বর্ণকার নামে কয়েকজন যুবককে।
ক্যাটারিংয়ের সদস্য প্রতিমা হাজরা জানান, “দু’মাসের মতো কাজ শুরু করেছি। আমাদের ইউনিফর্ম লাল পাড় সাদা শাড়ি।” তাঁরাই জানান এই দু’মাসে হাতে কাজও এসেছে অনেক। এলাকার কালীপুজো থেকে বিবাহ, অন্নপ্রাশন থেকে শ্রাদ্ধবাসর-কিছুই বাদ যায়নি। মুখে হাসি নিয়ে কাকলি সাহা বলেন, “এই ক্যাটারার আমাদের লক্ষ্মী। সামনে পুজো। এ বার কত বছর পরে পরিবারের সকলের জন্য পুজোয় জামাকাপড় কিনেছি জানেন। বাড়ির জানালায় নতুন পরদাও লাগিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.