পর্যটন মানচিত্রে ঘাঘরাকে ঢোকানোর দাবি
সালটা ১৮৭০। শীতের দুপুর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বেলপাহাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ফেড্রেরিক রাইস ঘোড়ায় চড়ে আপন খেয়ালে বেড়াতে বেরিয়েছেন। ঘুরতে ঘুরতে সাহেব এসে পৌঁছলেন জঙ্গলের মাঝে এক জায়গায়। চারিদিকে শাল-সবুজের সমারোহ। আর মাঝে বিস্তীর্ণ ব্ল্যাক স্টোনের অজস্র গহ্বর ভেদ করে সাপের ফনার মতো ফুঁসছে জলরাশি। ইতিউতি মাথা উঁচিয়ে আছে টিলা। একাধিক ঝর্না মিলে তৈরি হওয়া ছোট জলপ্রপাতটির অভিঘাতে খানখান হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের নিঃস্তব্ধতা। জনশ্রুতি, ১৪৩ বছর আগে সেখানেই বনভোজন করেছিলেন ফেড্রেরিক। এরপরই ‘ঘাঘরা’ হয়ে ওঠে পিকনিক স্পট। বেলপাহাড়ির এই দ্রষ্টব্য স্থানটি আজও রয়ে গিয়েছে উপযুক্ত প্রচারের আড়ালে। পর্যটকদের জন্য নেই উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থা। পথঘাটের অবস্থাও ভাল নয়। ঘাঘরাকে ঘিরে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার সব রকম সম্ভাবনা থাকলেও আজ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
ঘাঘরাকে নিয়ে বেলপাহাড়িবাসীর আবেগ ও ভালবাসা কিন্তু দীর্ঘদিনের। বেলপাহাড়ির প্রবীণ বাসিন্দা দেবব্রত ভট্টাচার্য শোনালেন ঘাঘরাকে নিয়ে পুরাতনী গান—‘উড়ুক ধুলা কেয়ার করব না, আমি ঘাঘরা যাতে ছাড়ব না, গো ছাড়ব না।’
ঘাঘরার জলপ্রপাত। —ফাইল চিত্র।
বেলপাহাড়ির পাহাড় থেকে সৃষ্ট একাধিক ঝরনার জল ঘাঘরায় এসে কালো উপলরাশিতে ধাক্কা খেয়ে পরে তারাফেনি নদী হয়ে বয়ে গিয়েছে। প্রাকৃতিক এই ছোট জলপ্রপাত বা জলরাশি হল তারাফেনি নদীর উৎস। এলাকাটির সৌন্দর্য অসামান্য। সত্তরের দশকে মহুয়া রায় চৌধুরী অভিনীত ‘বেহুলা লখিন্দর’ ছায়াছবির শু্যটিং হয়েছিল ঘাঘরায়। ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “জলরাশির অভিঘাতে পাথরের গহ্বরগুলির আকৃতি অনেকটা কলসি বা ‘গাগরি’র মতো। স্থানীয় ভাষায় বলে ‘গাগরা’। সেখান থেকেই সম্ভবত ঘাঘরা নামের উৎপত্তি। এলাকাটি বহু প্রাচীন। কারণ, এক সময় ঘাঘরা সংলগ্ন তারাফেনি অববাহিকা অঞ্চলে প্রাচীন জীবাশ্ম ও নব্যপ্রস্তর যুগের অস্ত্রের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল।” ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়িতে ঘাঘরা যেতে ঘণ্টাখানেকের পথ। বেলপাহাড়ি ব্লক-সদর থেকে লাল ধুলোর রাস্তা ধরে ৪ কিলোমিটার গেলেই ঘাঘরা। কিন্তু ঘাঘরার কাছাকাছি কাঁচা রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল সিংহ ও বিমলেন্দু পাত্ররা জানালেন, বছর বারো আগে ঘাঘরায় পর্যটকদের জন্য তাঁবুতে রাত্রিবাসের উদ্যোগ নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। বিমলেন্দুবাবুদের মতে, এলাকায় প্রকৃতি-পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে স্থানীয় দরিদ্র বাসিন্দারা কিছুটা উপকৃত হতেন। চাঁদনি রাতে ঘাঘরায় সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয় না। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না-থাকায় পর্যটকেরা রাতে যাওয়ার ঝুঁকি নেন না। বর্ষায় ঘাঘরায় রূপ আরও খোলে। তখন সপ্তাহান্তে মাঝে মধ্যে পর্যটকেরা ঘাঘরায় আসেন। শীতে অবশ্য অনেকেই এখানে চড়ুইভাতি করতে আসেন। ঘাঘরায় বেড়াতে আসা উল্টোডাঙার পুষ্প দাম, বরাহনগরের মণিজ্যোতি বসাক, বার্নপুরের শুভজিৎ মুখোপাধ্যায়দের বক্তব্য, “জায়গাটি এত সুন্দর, অথচ এখানে পানীয় জল, শৌচাগার-সহ ন্যূনতম কোনও পরিকাঠামো নেই। নেই কোনও প্রচারও। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে রাজ্যের অন্যতম প্রকৃতি-পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে ঘাঘরা।”
ঝাড়গ্রামের বিভাগীয় বন আধিকারিক আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “ঘাঘরা যাওয়ার রাস্তা সংস্কারের জন্য পর্যটন দফতরের কাছে প্ল্যান এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে।” বেলপাহাড়ির বিডিও সর্বোদয় সাহা বলেন, “ঘাঘরার জলপ্রপাতটি বনভূমিতে রয়েছে। এলাকাটির সৌন্দর্যায়নের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.