হস্তশিল্পের প্রসারে এ বার চুক্তি ইউনেস্কোর সঙ্গে
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার লক্ষ্যে এর আগেই বিভিন্ন শিল্পসংগঠনের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। এ বার হস্তশিল্পকেও এক ধাপ এগিয়ে দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউনেস্কোর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আন্তর্জাতিক বাজারে তাকে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হলেন তিনি। সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের এই শাখা সংগঠনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে চুক্তি করেছে রাজ্য। ঠিক হয়েছে, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া-সহ মোট ১০টি জেলায় হস্তশিল্পের শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলবে সরকার। আর সেখানে শিল্পীদের উন্নত প্রযুক্তি থেকে শিল্পের সংরক্ষণ, বিপণন এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের পথ তৈরি করে দেবে ইউনেস্কো।
সোমবার মিলনমেলার মাঠে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারে ‘সিনার্জি এমএসএমই-২০১৩’ মেলার উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউনেস্কোর সঙ্গে রাজ্যের এই চুক্তির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা জানান, ১০টি জায়গায় কাঁথা, ডোকরা, টেরাকোটা, পটচিত্র, মাদুর-সহ প্রায় সব ধরনের হস্তশিল্পের শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলার হস্তশিল্পের চাহিদা রয়েছে। এ কথা ইউনেস্কোর তরফেও মেনে নেওয়া হয়েছে। ইউনেস্কোয় ভারতের প্রতিনিধি এবং অন্যতম ডিরেক্টর সিগেরু আয়োগি বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী এর মধ্যেই দু’হাজার শিল্পীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই শিল্পীদের আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের শিল্পপণ্য তৈরি করার কাজে দক্ষ করে তুলব।” ৩০ মাস ধরে এই প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে বলে আয়োগি জানান। চুক্তি অনুযায়ী, শিল্পাঞ্চলের পরিকাঠামো গড়ে তুলবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। এর জন্য যা খরচ করার, সরকারই করবে। ইউনেস্কোর প্রশিক্ষণে শিল্পীরা আন্তর্জাতিক মানের হস্তশিল্প পণ্য গড়ে তুলবেন, যা দেশ-বিদেশে রফতানি করা হবে।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের তরফে বাংলার হস্তশিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র দাবি করেছে, কিন্তু সেই প্রচেষ্টাগুলি এমন সামগ্রিক ও পরিকল্পিত ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী সামগ্রিক ভাবে সেই বাজারই ধরার কথা ভাবছেন।
নির্মাণ, ফাউন্ড্রি, প্লাস্টিক, চর্মের মতো বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারে চাহিদামতো প্রশিক্ষিত লোক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোগানো নিয়েও সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠন ও পরামর্শদাতা সংস্থাগুলির চুক্তি হয়েছে এ দিন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সেই পরিকল্পনার সঙ্গে এ দিন হস্তশিল্পকেও জুড়ে দিলেন। প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, এর ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে যে চুক্তি করল সরকার, তাতে ১ লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থান হবে।” তাঁর স্লোগান ছিল, “শিল্প করুন, বাংলা গড়ুন।”
শিল্পমহলের একটি অংশ বলছে, এই স্লোগান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, শিল্পায়নের গুরুত্ব ভালভাবেই বুঝতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখনও কিছু ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। ওই অংশের বক্তব্য, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও হস্তশিল্পের প্রসারে মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন, বড় শিল্পের জন্যও কি একই রকম সদিচ্ছা দেখাচ্ছে সরকার? তাঁদের অভিযোগ বিশেষ করে রাজ্য সরকারের জমি-নীতি নিয়ে। এ দিনও মমতা জানিয়েছেন, তাঁরা জোর করে জমি নেওয়ার বিরোধী। ক্ষমতায় আসার পরেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, শিল্পের জন্য তাঁর সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না। সেই অবস্থান থেকে এখনও সরেননি তিনি। মূলত এই কারণে বড় শিল্প রাজ্যে আসতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে না। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় সর্বশেষ এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একটি সূত্রের দাবি, প্রকল্প অন্য রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কি না, তাই নিয়েও তাদের মধ্যে ভাবনাচিন্তা চলছে। আরও কয়েকটি সংস্থার মনোভাবও তাই। আবার, নতুন সরকারের ‘এসইজেড’ নীতির কারণে ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা জমি কিনেও লগ্নি করায় উৎসাহ দেখাচ্ছে না।
মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনে সাফল্যের মধ্যেও জমি অধিগ্রহণের প্রসঙ্গ এসেছিল। মমতা জানিয়েছিলেন, জমি সমস্যা হবে না। এ দিনও সেই কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, “জমি লাগলে জমি দেব। দক্ষ কর্মী লাগলে তা দেব। প্রয়োজনে ভর্তুকিও দেব। নতুন শিল্প গড়ুন এই বাংলায়।” তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসে মাত্র দু’বছরের মধ্যে ১১ হাজার একর জমি বিভিন্ন শিল্প সংস্থার জন্য অনুমোদন করেছে। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পূর্বতন সরকার যেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাত হাজার নতুন কারখানা গড়েছে, সেখানে তাঁদের আমলে ২২ হাজারেরও বেশি নতুন ছোট শিল্প গড়ে উঠেছে। ঘোষণা করেন, শিল্প এবং বস্ত্র নীতির মতো সরকার নতুন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে শিল্প সংস্থাগুলির কাছ থেকে পণ্য কেনারও কথা ভাবছে। জানান, “দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলার শিল্প পণ্য প্রসারের জন্য নতুন ব্র্যান্ড ও লোগোও আমি নিজে তৈরি করেছি। স্লোগান দিয়েছি- ‘মোদের বাংলা, বিশ্ব বাংলা’।”
মুখ্যমন্ত্রীর ডাককে শিল্পমহলের একটি অংশ এই বলে ব্যাখ্যা করছে যে, বড় শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বুঝেই ক্ষুদ্র, মাঝারি ও হস্তশিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে কয়েকটি বণিকসভা। আর মুখ্যমন্ত্রী নিজে মনে করেন, আর্থিক মন্দার সময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ছাড়া গতি নেই।
ওই মঞ্চ থেকেই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ঘোষণা করেন, গত আর্থিক বছরে (২০১২-’১৩) রাজ্য সরকার পরিকল্পনা খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। সেই টাকায় পরিকাঠানো উন্নয়নে বহু প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে শিল্প সংস্থাগুলির সুবিধার কথা মাথায় রেখেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.