কথা হয়েছে। কাজ হয়নি।
আদালত বারবার অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে পুরসভা হাত গুটিয়ে থেকেছে। আবার পুলিশের কর্তারাও ব্যর্থতার দায় নিতে রাজি নন।
বর্ধমান পুর এলাকায় বেআইনি বা অনুমোদিত নির্মাণের সংখ্যা ঠিক কত? পুরসভা সূত্রে কোনও পরিসংখ্যান মেলেনি। অবৈধ নির্মাণ খতিয়ে দেখতে বা ঠেকাতে একটি কমিটি তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভা। সেই কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বিরোধী দলনেতা সমীর রায়ের মতে, বড় রাস্তার চারপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণের সংখ্যা অন্তত সাতশো। গোটা শহরে অন্তত দেড় থেকে দু’হাজার।
কী করে এত অবৈধ নির্মাণ হল? টিকেই বা থাকল কী করে? গত দশ বছর পুরপ্রধানের পদে থাকা সিপিএমের আইনূল হকের কাছে সদুত্তর মেলেনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিলেন, পুরসভা সব অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেবে। কিন্তু এত দিন ভাঙা হয়েছে হাতে-গোনা কয়েকটি। তৃণমূলের দাবি, পুরসভার এই নিষ্ক্রিয়তার পিছনে রয়েছে সিপিএমের কয়েক জন প্রভাবশালী কাউন্সিলর। তার সুযোগ নিচ্ছেন কিছু বাসিন্দা।
যেমন, বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ার এক বিধবা তাঁর প্রতিবেশীর অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। হাইকোর্ট অবিলম্বে ওই নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতিবেশী তত দিনে নিম্ন আদালতে ওই মহিলার বিরুদ্ধেই তাঁর জমি দখল করার মামলা ঠুকে দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মামলার অজুহাতে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করেনি পুরসভা। এ রকম বহু অবৈধ নির্মাণ আজও দাঁড়িয়ে। অপরিকল্পিত এই নির্মাণগুলির জন্য শহরের নিকাশি ব্যবস্থা বিগড়ে যেতে পারে। নির্মাণগুলির যথাযথ কর ধার্য না হওয়ায় পুরসভা প্রতি বছর লক্ষ-লক্ষ টাকা আয়ও হারাচ্ছে।
পুরপ্রধান অবশ্য বেআইনি নির্মাণের ব্যাপারে তাঁর বা বামফ্রন্টের কোনও কাউন্সিলরের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “পুলিশ না পেয়ে আমরা ওই অবৈধ নির্মাণগুলি ভাঙতে পারিনি। পুলিশ মিলছে না বলে আমরা হাইকোর্টেও জানিয়েছিলাম।” তবে হাইকোর্ট এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কী নির্দেশ দিয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রতি বারই পুরসভাকে পুলিশ দিয়ে সাহায্য করতে পারিনি, এটা ঠিকই। কিন্তু প্রায় অধিকাংশ সময়েই আমরা সাহায্য করেছি। গত দেড় বছরে পুরসভা খুব বেশি হলে পাঁচ-ছ’বার অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে আমাদের সাহায্য চেয়েছিল।”
সমীরবাবুর অভিযোগ, “ওই সব অবৈধ নির্মাণ কে বা কারা করেছে, তা না দেখে সেগুলি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বারবারে নেওয়া হয়েছে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে। কিন্তু প্রতি বারই আইনূল সাহেব টালবাহানা শুরু করেছেন। বারবার বলেছেন, অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজে পুলিশ মিলবে না। তাই সে কাজ করা যাবে না।” সমীরবাবুর দাবি, পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা এবং বর্ধমান থানার আইসি-র সঙ্গে তিনি নিজে কথা বলেছিলেন। অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে পুলিশ না মেলার কারণ নেই বলে দু’জনেই তাঁকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।
সমালোচনা করলেও সমীরবাবু অবশ্য বলতে পারেননি, এই সমস্যার মোকাবিলা করার রাস্তা কী? তাঁর দলের এক প্রার্থী, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের স্বরূপ দত্ত এই অবৈধ নির্মাণগুলির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায় করে সেগুলিকে বৈধ করার পক্ষে সওয়াল করছেন। তাঁর কথায়, “আইন না মেনে, পুরসভার অনুমোদন না নিয়ে বিশাল সব বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলি ভেঙে ফেলাও সম্ভব নয়। তাই জরিমানা করার কথাই ভাবতে বলছি।”
অর্থাৎ, বাম আমলের ভুল শোধরানোর রাস্তা জানা নেই। এই ভোটে বর্ধমান শহরের দখল চাইছেন যাঁরা, নিছক জরিমানা আদায় করে ‘ভুল’কে ‘ঠিক’ বলে দেগে দেওয়াই তাঁরা শ্রেয় মনে করছেন? |