আটটা চার ও সাতটা ছয় চার মাস পর মাঠে নেমে কেউ যে এ রকম ব্যাটিং করতে পারে, অনেকেই ভাবতে পারবেন না। আমি কিন্তু অবাক হইনি। আসলে ব্যাটসম্যানের নাম যে যুবরাজ সিংহ।
রবিবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যুবরাজের ইনিংসটা দেখতে দেখতে একটা কথাই মনে হচ্ছিল। এই ছেলেটা সত্যি হারতে জানে না। অবশ্য যে জীবনের যুদ্ধে জিতে এসেছে, তার কাছে ক্রিকেটে ফিরে আসাটা কী এমন ব্যাপার?
গত বিশ্বকাপে সেরা ক্রিকেটারের ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে কারও মনে সন্দেহ আছে? মনে হয় না। যুবির সমস্যা ওর ফিটনেস। ক্যানসারের সঙ্গে প্রাণপন লড়াই করে জিতেছে যে, তার এমন সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। যুবিকে তাই অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ফিটনেস সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে হয়তো। ওকে যতটা চিনি, ফিটনেস নিয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি খাটছে। মাঝের সময়টায় তো ফ্রান্সে গিয়ে ট্রেনিংও করে এসেছে। আর আপাতত সে সমস্যা যে ও মিটিয়ে নিয়েছে, তা রবিবারের ১২৩ রানের ঝোড়ো সেঞ্চুরিটাতেই বোঝা গেল।
চিন্নাস্বামীর ব্যাটিং সহায়ক উইকেট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’-র বোলারদের নির্বিষ বোলিং-এর কথা মাথায় রেখেও বলছি, চার মাস পর মাঠে ফেরার চাপ রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে এমন একটা ইনিংস খেলা কম কৃতিত্বের নয়। আর এখানেই যুবরাজ বাকিদের থেকে আলাদা। আসল চ্যাম্পিয়ন। |
রবিবার ভারত ‘এ’-র ৭৭ রানে জেতা ম্যাচটায় (ভারত ‘এ’ ৩১২-৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ২৩৫) ইউসুফ পাঠানের অপরাজিত ৭০ ও মনদীপ সিংহর ৬৭-র ইনিংস থাকলেও যুবরাজের ব্যাটিং বিস্ফোরণে ওদের পারফরম্যান্স ঢাকা পড়ে গেল। ‘এ’ টিমের এই সিরিজটায় নির্বাচকরা নিশ্চয়ই আলাদা করে নজর রেখেছিলেন যুবরাজের উপর। মনে রাখবেন, ভারতীয় ওয়ান ডে দলের ব্যাটিং লাইন আপে চার নম্বর জায়গাটা এখনও ফাঁকা। আর এই জায়গাটাতে যুবরাজের থেকে ভাল ‘অপশন’ আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমি এখন নির্বাচক থাকলে চার নম্বরে ওর নামটাই সবার আগে লিখতাম।
তিন নম্বরে বিরাট কোহলি, চার নম্বরে যুবরাজ, পাঁচে সুরেশ রায়না, ছয়ে এম এস ধোনি, সাতে রবীন্দ্র জাডেজা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজে এ ছাড়া কোনও ব্যাটিং লাইন আপ তো ভাবা যাচ্ছে না। ২০১৫ বিশ্বকাপেও এই লাইন-আপটা থাকলে মন্দ কী?
ওর ইনিংসের ‘ব্রেক আপ’-টা দেখেছেন? প্রথম পঞ্চাশ রান ৬০ বলে। দ্বিতীয় পঞ্চাশ ২০ বলে ও শেষ ২৩ রান এল ন’বলে। শেষেরটার স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি হলেও মাঝখানেরটাই সবচেয়ে রোমহর্ষক। ওই সময়ে যুবরাজ আর ইউসুফ দু’জনে মিলে চার ওভারে ৮৫ রান তুলেছে।
শুরুতেই দল ধাক্কা খেলে চার নম্বরে নেমে রুখে দাঁড়িয়ে এই যে লড়াই, এর জন্য যুবরাজের মতো আগ্রাসী মনোভাবের ব্যাটসম্যানই দরকার। ও উইকেটে দাঁড়িয়ে বিপক্ষের বোলারকে যে ভাবে চাপে ফেলতে পারে, তা অন্য কারও দ্বারা সম্ভব বলে আমার অন্তত মনে হয় না। এমন সেঞ্চুরি এই সিরিজে আরও দু-একটা করে দিতেই পারে ও। আসলে মাঠের বাইরে এত দিন থাকায় যুবির খিদেটা যে অনেক বেড়েছে।
যুবরাজের এই সেঞ্চুরির পর কি সহবাগ-গম্ভীরের ওপর চাপ বেড়ে গেল? ওদের ওপর তো এমনিতেই বিশাল চাপ। কারণ, যুবরাজের ওয়ান ডে টিমে ফেরার সম্ভাবনা যতটা রয়েছে, সহবাগদের টেস্ট টিমে ফেরার সম্ভাবনা তার ২৫ শতাংশও রয়েছে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ভারতীয় দলে ওপেনার সমস্যা এখন আর কোথায়? সে ওয়ান ডে বলুন বা টেস্ট। সেখানে সহবাগ-গম্ভীররা ‘এ’ সিরিজে ফর্মে ফিরে এলেও যে ওদের জাতীয় দলে ফেরার রাস্তা মসৃণ হবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। হয়তো অভিজ্ঞতার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওদের রাখা হতে পারে। যুবরাজেরও তেমন টেস্ট দলে ফেরার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু ওয়ান ডে-তে চার নম্বর স্লটে ওকে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারছি না। সে জন্যই যুবির থেকে বীরু-গোতিদের দলে ফেরার লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন। |
ম্যাচের পরে যুবরাজ |
• অফ সিজনে যা পরিশ্রম করেছি, তার ফল পেলাম। এই সেঞ্চুরিটা খুব দরকার ছিল। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গত কয়েক দিন ধরে জমিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। সে জন্যই ইনিংসটা খেলতে পারলাম।
• ফিটনেসে আগের জায়গায় ফিরে আসাটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাতে সফল হয়ে ভাল লাগছে। মাঠে নেমে ক্রিকেট বেশ উপভোগ করলাম।
• এ বার বোলিংটাও ভাল করতে হবে। বোলিংয়েও নিজেকে উপযোগী করে তুলতে হবে।
• ক্রিকেটের নেশা ফিরে আসার মোটিভেশন জুগিয়েছে।
• এখন মাঠে অনেক বেশি এনার্জি পাচ্ছি। ক্লান্তিও কম হচ্ছে। এ সবের জন্য খাটতে হয়েছে। মন সব সময়ই বলেছে আমি পারব। শরীরটাকে তৈরি করে নেওয়ার দরকার ছিল। |
|