বিপদের মুখে এগিয়ে দেওয়া হত দশ বছরের ছেলেকে। এগিয়ে দিত তার বাবা, কাকা-ই। সাধারণ বাজারের ব্যাগে করে ছোট ছোট খাঁচায় পাখি নিয়ে বাজারের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকত সে। বাবা-কাকা দাঁড়িয়ে থাকত দূরে। বেআইনি ভাবে পাখি কিনতে আসা ব্যক্তিরা কথা বলত বাবা-কাকার সঙ্গেই। দরদাম ঠিক হলে ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাবা-কাকা তাদের পাঠিয়ে দিত ছেলেটার কাছে। বন দফতরের অফিসারদের মতে, ধরা পড়ে গেলে ওই ছেলেটিই পড়বে এবং সে নাবালক হওয়ায় তার সাজাও হবে কম। প্রধানত এই উদ্দেশ্যেই ওই ভাবে চলত কেনাবেচা।
রবিবার কাকভোরে কলকাতা থেকে পাখি পাচারের সঙ্গে যুক্ত চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এমনই তথ্য এসেছে বন দফতরের হাতে। বনপাল (সদর) কল্যাণ দাস জানিয়েছেন, ধৃত মহম্মদ ওসমান, মহম্মদ সোলেমান, মহম্মদ সামির এবং মহম্মদ সঈদের মধ্যে সামির নাবালক। ওসমান ওরফে রাজকুমার এবং তার ভাই সোলেমান বহু দিন ধরে পাখি পাচারের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সময়ে তাদের নাম জেনেছেন বন দফতরের কর্তারা। সামির সোলেমানের ছেলে। কর্তাদের দাবি, কলকাতা থেকে পাখি পাচারের মূল পাণ্ডা ওসমান এবং সোলেমান। কিন্তু, এত দিন তাদের ধরা যায়নি। |
রবিবার দিনভর ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, বনের পাখিকে খাঁচায় ভরে নিয়মিত বিদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। বাঁশ বা কাঠের তৈরি ছোট ছোট খাঁচায় সেই পাখি বনগাঁ-সহ রাজ্যের অন্য সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রথমে যাচ্ছে বাংলাদেশে। সেখান থেকে তাইল্যান্ড, পশ্চিম এশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশে। টিয়া, মুনিয়া, পাহাড়ি ময়না, পাহাড়ি বাজ এমনকী প্যাঁচার কদর রয়েছে বিদেশে। এ দিন ধৃতদের থেকে ১৫১টি মুনিয়া এবং ২১টি টিয়া পাখিও উদ্ধার হয়েছে। কল্যাণবাবুর কথায়, “মিলেছে দেড় লক্ষ টাকাও। তা থেকে মনে করা হচ্ছে, রবিবার ভোরে কলকাতায় ঢোকার আগে এরা আরও পাখি বিক্রি করে এসেছে।”
এর আগে চলতি মাসের গোড়াতেও পাখি পাচারের সঙ্গে যুক্ত চার জনকে গ্যালিফ স্ট্রিট থেকে ধরেছিল বন দফতর। ওখানেই রঙিন মাছ ও পাখির বাজার বসে। জানা গিয়েছিল, ধৃতেরা ট্রেনে বর্ধমান পর্যন্ত এসে বদলে ফেলছে রাস্তা। বর্ধমানেই হাত বদল হয়ে যাচ্ছে টিয়া, মুনিয়া, ময়না। ধৃতদের জেরা করে হতবাক হয়ে যান বন দফতরের কর্তারা। জানতে পারেন, এখন হাতে হাতে টাকা দেওয়া-নেওয়া বন্ধ। নেট ব্যাঙ্কিং মারফত এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হচ্ছে।
বন দফতরের কর্তারা আরও জেনেছিলেন, এই সব পাখির বেশিরভাগই আসছে বিহার থেকে। তা ছাড়া রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড এমনকী অসম ও ডুয়ার্সও। বর্ধমান থেকে কলকাতায় আসার পথে এরা চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য বার বার গাড়ি বদল করে বলেও জানতে পেরেছে বন দফতর। কল্যাণবাবু জানিয়েছেন, রবিবার ধৃত চার জনের কাছ থেকে যে মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছে, তার কল-লিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পাচারকারী চক্রের অন্যদের হদিস পেতে এই কল-লিস্ট সাহায্য করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। |