যারা নিয়মিত পাখির চোরাকারবারি, তারা ট্রেনে চেপে বর্ধমান পর্যন্ত এসে বদলে ফেলছে রাস্তা। বর্ধমানেই হাত বদল হয়ে যাচ্ছে টিয়া, মুনিয়া, ময়না। সেই পাখি চলে আসছে কলকাতায়। ধৃতদের জেরা করে হতবাক বন দফতরের কর্তারা! এখন আর হাতে হাতে টাকা দেওয়া-নেওয়া বন্ধ। নেট-ব্যাঙ্কিং মারফত এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে!
রবিবার সকালে গ্যালিফ স্ট্রিট থেকে এমনই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত ওই চার যুবক মহম্মদ মুস্তাফা, মহম্মদ নজরুল, মহম্মদ পার্কা এবং মহম্মদ আসিফ রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে ২০টি ঝুঁটিওয়ালা টিয়া পাখি পাওয়া গিয়েছে। |
অতিরিক্ত বনপাল প্রদীপ ব্যাস জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের চার নম্বর ধারায় টিয়া পাখি বিক্রি করা যায় না। পোষাও যায় না। নিষিদ্ধ মুনিয়া-ময়নাও। কিন্তু, এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও চোরা পথে এই সব পাখি চলে আসছে শহরের বাজারে। রবিবারের গ্যালিফ স্ট্রিটে কখনও-সখনও পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ পাখি।
বন দফতর জানিয়েছে, এই সব পাখির বেশিরভাগই আসছে বিহার থেকে। একসময়ে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে বন দফতর ব্যাপক কড়াকড়ি শুরু করায় বদলে ফেলা হয়েছে রুট। বন দফতরের ডিএফও এস কুলানদাইবে জানিয়েছেন, বিহার থেকে পাখি নিয়ে এক দল ট্রেনে করে আসছে বর্ধমান পর্যন্ত। যারা নিয়ে আসছে, তাদের বেশিরভাগই ক্যারিয়ার। মালিক ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নিজে সচরাচর আসেন না।
কলকাতার যারা এই বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তারা বর্ধমান থেকে পাখি নিয়ে সড়ক পথে চলে আসছে কলকাতায়। তারা এড়িয়ে যাচ্ছে ট্রেন যাত্রা। কুলানদাইবে বলেন, “এক একটি টিয়াপাখির দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কলকাতার ব্যবসায়ীরা যে
দামে কেনেন, গ্যালিফ স্ট্রিটে বিক্রি করা হয় তার দ্বিগুণ দামে। বিক্রির পরে বিহারে টাকা চলে যায় নেট ব্যাঙ্কিং মারফত।”
প্রদীপবাবু আরও বলেন, “নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা পাখিগুলি জঙ্গল থেকে ধরে শহরে এনে বিক্রি করা হচ্ছে।” এর আগে গ্যালিফ স্ট্রিটে হানা দিয়ে বাজ, পাহাড়ি ময়নার মতো পাখি বাজেয়াপ্ত করা গেলেও কাউকে ধরা যায়নি। এ বার দু’দিন আগে খবর আসে। শনিবার রাতে একটি টাটা সুমো করে পাখি বর্ধমান থেকে রাজাবাজারে আসবে বলে জানা যায়। কিন্তু, রাজাবাজারে অপেক্ষা করেও সেই গাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বন দফতরের কাজে নিযুক্ত কিছু অস্থায়ী কর্মীকে রবিবার নিয়োগ করা হয় পাখি কেনার জন্য। তাঁরা ক্রেতা সেজে এ দিন সকালে গ্যালিফ স্ট্রিটে পৌঁছন। ওই বাজারের চারপাশে বন দফতরের প্রায় ১৮ জন অফিসার ওঁত পেতে বসেছিলেন। ডিএফও নিজেও সেখানে ছিলেন।
ঠিক ছিল, পাখির সন্ধান পেলে অফিসারদের মিস্ড কল করবেন সাজানো ক্রেতারা। সময় মতো মিস্ড কল পেয়ে ওই চার যুবককে গ্রেফতার করেন বন দফতরের অফিসারেরা। কিন্তু, অন্য বিক্রেতারা সেই সময় ঘিরে ধরেন তাঁদের। খবর পাঠানো হয় পুলিশকে। পরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই চার জনকে সল্টলেকে নিয়ে এসে জেরা করেন বন দফতরের কর্তারা।
কুলানদাইবের কথায়, “এখন আমরা যেই বর্ধমানের কথা জেনে গেলাম, দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যেই ওরা আবার নতুন রুট ব্যবহার করতে শুরু করবে।” |