ছোট্ট খোঁড়া ক্যাঙারুটাকে দেখে মায়া পড়ে গিয়েছিল ক্রিস্টি কারের। ওকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। নাম রাখেন আরউইন। কিন্তু নিয়মের গুঁতোয় আউইনকে বাড়িতে রাখাই দায় হয়েছিল। শেষে ওয়েনউডে পশুপাখিদের জন্য একটা সংরক্ষিত কেন্দ্রে ঠাঁই হয় আরউইনের। তবে আরউইনকে ছেড়ে থাকতে পারেননি। অগত্যা ক্রিস্টিরও বর্তমান ঠিকানা ওই সংরক্ষিত কেন্দ্র।
বছর খানেক আগে ওকলাহোমার বাসিন্দা ক্রিস্টি গাড়ি চালানোর সময়ে রাস্তার ধারে আরউইনকে পড়ে থাকতে দেখেন। তার একটা পা জখম হয়েছিল। পশুচিকিৎসককে দেখাতে তিনি জানান, আরউইনের একটা পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। কেমন মায়া পড়ে গিয়েছিল। তাই কোথা থেকে ক্যাঙারুটা এল তা নিয়ে অত ভাবনাচিন্তা করেননি ক্রিস্টি। বাড়িতে রেখেই আরউইনের চিকিৎসা
চালাতে থাকেন ক্রিস্টি। সে সময়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ক্রিস্টি। চিকিৎসাও চলছিল। |
ক্রিস্টি লক্ষ করেন আরউইনের সঙ্গে যতক্ষণ থাকেন তাঁর সব অবসাদ দূর হয়ে যায়। এই কথাটা চিকিৎসককে কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করেন ওই চিকিৎসক। পরে তিনি জানান, আরউইনের উপস্থিতিতে সত্যি সত্যিই অনেক সুস্থ থাকছেন ক্রিস্টি। এর মধ্যেই ক্রিস্টির তত্ত্বাবধানে অনেক আচরণ শিখে ফেলেছিল আরউইন। রাত্তিরে বিছানায় শোয়া, লুকিয়ে লুকিয়ে ফ্রিজ থেকে বার করে ক্যান্ডি খাওয়া, বা ছেলেদের শার্ট পরে ঘুরে বেড়ানো এ সবই ছিল আরউইনের পছন্দের কাজ।
কিন্তু এর মধ্যেই শুরু হল অশান্তি। বাড়িতে বন্য পশু রাখা যাবে না বলে নোটিস দিল ব্রোকেন অ্যারো শহরের সরকারি কর্তারা। তাদের ভয় ছিল, কোনও কারণে রাস্তায় চলে এলে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। অথবা কাউকে আঁচড়ে কামড়ে দেওয়ারও ভয় ছিল। তাই লাইসেন্স পেতে একটা বড় মাপের অর্থ দাবি করা হয় ক্রিস্টির কাছে। সামর্থ্য ছিল না ক্রিস্টির। বাধ্য হয়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি।
প্রথমে কিছু দিন মায়ের কাছে, পরে নানা জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন ক্রিস্টি। এমন সময়ে হঠাৎই খোঁজ পেলেন ওয়েনউডের ওই পশু সংরক্ষণ কেন্দ্রের। সঙ্গে সঙ্গেই যোগাযোগ করেন সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শ্রেইভোগেলের সঙ্গে। শর্ত ছিল ক্রিস্টিকে আলাদা করা যাবে না আরউইনের সঙ্গে। রাজি হয়ে যান শ্রেইভোগেল। সংরক্ষণ কেন্দ্রে থাকবে আরউইন। আর কেন্দ্রের পরিচারকের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে থাকবে ক্রিস্টি। আরউইনের যাবতীয় পরিচর্যার ভারও থাকবে তাঁর উপরেই।
ক্রিস্টি জানান, “আমার ছেলে আরউইনকে লোকজন খুব ভালবাসে। এর মধ্যেই ওই অনেক বন্ধু হয়ে গিয়েছে।” শ্রেইভোগেল বললেন, “মাদকাসক্ত, বা প্রাক্তন জেল খাটা আসামিরাই সংরক্ষণকেন্দ্রের পরিচর্যায় আছেন। এঁদের সঙ্গে কেউ কাজ
করতে চান না। কিন্তু সবারই তো দ্বিতীয় সুযোগ দরকার। ক্রিস্টি এখানে ভাল থাকবেন।” সকাল হলেই বিশেষ ঘেরাটোপের বাইরে এসে হাঁক দেন ক্রিস্টি। ডাক শুনে ছুট্টে চলে আসে আরউইন। শুরু হয়ে যায় তাঁদের সারা দিনের খুনসুটি। |