এ বার থেকে পুজো-উৎসবে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর মনোভাব নিচ্ছে রঘুনাথপুর মহকুমার পুলিশ। ক’বছর ধরে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ বার মাইক ও সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি রুখতেও ব্যবস্থা নিতে চায় পুলিশ। পুজো উদ্যোক্তা ও সাউন্ডবক্স মালিকদের এ ব্যাপারে আগাম সতর্ক করতে থানায় থানায় নির্দেশ পাঠিয়েছেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়।
রেল শহর আদ্রায় বিশ্বকর্মা পুজো বেশ জাঁকিয়ে করা হয়। আদ্রা শহরেই ২০-২৫টি বড় মাপের বিশ্বকর্মা পুজো হয়। রঘুনাথপুর মহকুমাজুড়ে বড় মাপের দুর্গাপুজো হয় অন্তত ৪০টি। বাসিন্দাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা, বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু হয় শব্দের দাপাদাপি। দুর্গাপুজো পেরিয়ে তা চলে কালীপুজো পর্যন্ত। গভীর রাতেও বিরাম থাকে না। আর তা মাত্রা ছাড়ায় প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। ইদানিং শোভাযাত্রায় বেশ কয়েকটি মাইক ও বড় বড় সাউন্ড বক্স ভ্যান রিকশয় চাপিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত শোভাযাত্রা করা দস্তুর হয়ে উঠেছে। বিসর্জন মিটতে রাত গড়িয়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। আদ্রায় বিশ্বকর্মা পুজো উদ্যোক্তা ও সাউন্ড সিস্টেমের মালিকদের নিয়ে বৈঠকে পুলিশের তরফে নির্দিষ্ট ভাবে এ বার নিয়ন্ত্রিত শব্দসীমায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মাইক বাজাতে বলা হয়েছে। |
দুর্গাপুজো ও কালীপুজোতেও ওই নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ সব ক্ষেত্রে অতীতে পুলিশকে জানিয়ে বিশেষ লাভ হয়নি। এ বার কী পুলিশ লাগাম পরাতে পারবে শব্দের গলায়? এ বার সেই ছবির বদল ঘটাতে চাইছে পুলিশ। এমনটাই দাবি করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, গত বছর গভীর রাত পর্যন্ত মণ্ডপে মাইক বাজানো ও বিসর্জন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পুলিশের কাছে যায়। এ বার তাই উৎসবের গোড়াতেই মণ্ডপে মাইক বাজানো ও বিসর্জন সংক্রান্ত নিয়মাবলি জানিয়ে দেওয়ার জন্য ওসি-আইসিদের নির্দেশ দিয়েছেন এসডিপিও। আদ্রা তদন্তকেন্দ্রে সম্প্রতি বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্যোক্তা ও সাউন্ড সিস্টেমের মালিকদের ডেকে পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, রাত ১০টার মধ্যে মণ্ডপে মাইক বাজানো বন্ধ করতে হবে। বিসর্জন শেষ করতে হবে রাত ১১টার মধ্যে। নির্দেশ অগ্রাহ্য করা হলে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এসডিপিও বলেন, “নির্দেশ অমান্য করলে মাইক, সাউন্ড বক্স বাজেয়াপ্ত করা হবে। মামলা দায়ের করা হবে মালিকের বিরুদ্ধে। পরের ধাপে মামলা করা হবে পুজোর উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেও। অভিযুক্ত কমিটিগুলিকে পরের বার পুজোর অনুমতি দেওয়া হবে না।” সূত্রের খবর, নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই পুলিশের একটি দল মণ্ডপে ঘুরবে। নিয়ম মানলে পুরস্কারও দেবে পুলিশ। |
বিশ্বকর্মা পুজোর প্রস্তুতি আদ্রায়। ছবি: প্রদীপ মাহাতো |
পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। আদ্রার রেলকর্মী সংগঠনের নেতা তথা বিশ্বকর্মা পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিধান কালিন্দীদের বক্তব্য, “অনেক জায়গায় পুজো উপলক্ষে শব্দ দূষণ মাত্রা ছাড়ায়। এ বার পুলিশ আরও উদ্যোগী হওয়ায় ভাল হল। তবে শুধু নির্দেশ দিয়েই খান্ত থাকলে চলবে না, কড়া ব্যবস্থা না নিলে উদ্যোগ মাঠে মারা যাবে।”
শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতার প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। দুর্গাপুজোর আগেই আদ্রায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মিছিল করা ও বিশ্বকর্মা পুজোর মণ্ডপগুলিতে শব্দ দূষণ রোধে ব্যানার লাগানো হবে। |
জব্দ-শব্দ |
• তারস্বরে মাইক-সাউন্ডবক্স বাজানো বন্ধ
• মণ্ডপে রাত ১০টার পরে মাইক নিষিদ্ধ
• বিসর্জন করতে হবে রাত ১১টার মধ্যে |
নজরে কারা |
• মণ্ডপে ঘুরবে পুলিশের ‘স্পেশাল টিম’
• পথে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ |
চার দাওয়াই |
• মাইক-সাউন্ড বক্স বাজেয়াপ্ত করা হবে
• মামলা মাইক-মালিকের বিরুদ্ধে
• মামলা হবে পুজোর উদ্যোক্তার নামেও
• পরের বার পুজো করার অনুমতি পাবে না |
|